ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু ও চোখের ব্যাধি

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

জলবায়ু ও চোখের ব্যাধি

করোনা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও স্বাস্থ্য সঙ্কট সারা বিশ্বে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, আমফান ও বৈশ্বিক মহামারী করোনা এক সঙ্গে হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ভালই আঁচ করা গেছে। বিশ্বে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ বৈশ্বিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। সে জন্য আরও টেকসই ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ দরিদ্র দেশের মানুষ সাইক্লোন, বন্যা, খরা, দাবদাহ, অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের ন্যায় অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুবরণ করছে। দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যেন পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য উন্নত দেশগুলেকে সহায্যের হাত বাড়াতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণঞ্চলের ৫০% এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এমনি করে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে তাদের বিশেষ তহবিল গঠন করে, উন্নত বিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে সাহায্য করলে এমন দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। কোন নির্দিষ্ট এলাকায় জলবায়ু বলতে সেই অঞ্চলের সারা বছরের বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা ও বায়ুপ্রবাহের গড়কে বুঝায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংক্রান্ত সংস্থা (ডগঙ) মতে এর সময়কাল ৩০ বছর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল অথবা বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন ঘটে যুগ যুগ থেকে হাজার বছরের ভেতরে। পরিবর্তনের কারণ ভূ-পৃষ্ঠের ওপর সূর্যরশ্মির প্রখরতার প্রভাব এবং অতি সম্প্রতি শিল্পের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। ওজনস্তর হ্রাসের ফলে আমাদের চোখের উপর নানাবিধি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে । অতি বেগুনি রশ্মি-বি-এর প্রভাবে চোখের উপর নানা রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রায় ৫০% অতি বেগুনি রশ্মি-এ এবং ৩% অতি বেগুনি রশ্মি-বি চোখের কর্নিয়া ভেদ করে। দীর্ঘমেয়াদী অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে চোখের কর্নিয়াতে টেরিজিয়াম নামক রোগের জন্ম হয়। উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ান পপুলেশন বেইজড স্টাডিতে দেখা গিয়েছে প্রায় অর্ধেক ভাগ টেরিজিয়ামের কারণ হলো সূর্যরশ্মির প্রভাব। চোখের অন্যান্য অসুখের কারণও অতি বেগুনি রশ্মির সঙ্গে সংযুক্ত। যেমন- সোলার রেটিনোপ্যাথি। যারা সূর্যের দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকে তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর থেকে পরিত্রানের জন্য প্রথমত, আমরা সূর্য থেকে দূরে থাকতে পারি এবং যখন বাইরে যাবো তখন স্নানগ্লাস পরতে পারি। তাছাড়া সূর্যরশ্মির প্রভাব সম্পর্কে আমাদের আরও বিস্তারিত জানতে হবে। যেমন- ক্স এ্যান্টিঅক্সিডেন্টের স্বল্পতায় বা অভাবে এবং ধূমপান ও সূর্যরশ্মির প্রভাবে চোখে নানাবিধ অসুখের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয় যা চোখের টিস্যুকে ধ্বংস করে। ক্স আমাদের স্বাস্থ্যের উপর তথা চোখের উপর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির কার্যকারিতা ও প্রভাব সর্বোতভাবে চক্ষুরোগ ও উপসর্গসমূহের সম্ভাবনা ত্বরান্বিত করে। ক্স ফটোকেরাটাইটিস বা কর্নিয়ার সৌরজনিত প্রদাহ। ক্স ফটোকনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার সৌরপ্রদাহ। ক্স কেরাটোপ্যাথি বা কর্নিয়ার উপসর্গ। ক্স টেরিজিয়াম বা কনজাংটিভার নিম্ন স্তরের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। ক্স কর্নিয়া ও কনজাংটিভার মারাত্মক প্রদাহ ও ক্ষত। ক্স চোখের ছানিরোগ। ক্স ইউভিয়াতে মেলানোমা। ক্স সোলার রেটিনোপ্যাথি বা তীব্র সৌরজনিত রেটিনার ক্ষত। ক্স চোখের ম্যাকুলাতে অবক্ষয় বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শ এবং চোখের ছানি রোগের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। কর্টিকেল এবং সাবক্যাপসুলার শ্রেণীর ছানি হবার পেছনে অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। কিন্তু নিউক্লিয়ার শ্রেণীর ছানিরোগের সঙ্গে এ ধরনের সংশ্লিষ্টতা দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাগারে স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে চোখের ছানিজনিত রোগের সূচনা হয়। চোখের ওপর অতি বেগুনি রশ্মির তীব্র বিচ্ছুরণের সংস্পর্শে বিশেষ করে যেখানে আলো প্রতিবিম্বিত হয় যেমন- তুষার, পানি অথবা বালি- সেসব ক্ষেত্রে কর্নিয়া ও কনজাংটিভাতে প্রদাহ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে-ফটোকেরাটাইসিস, ফটোকনজাংটিভাইটিস, চোখের উপর রোদ্রদাহ। এটাও অকাট্য যে আলোকরশ্মি (বিশেষত নীল আলোকরশ্মি-উচ্চশক্তিসম্পন্ন আলোক বর্ণালি যা অতি বেগুনি রশ্মির কাছাকাছি) চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয় বা ম্যাকুলার ডিজানেরেশনের কারণ হতে পারে। আমাদের শরীরে উদ্ভূত ফ্রি-র‌্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব থেকে এ্যান্টি অক্সিডেট শরীরকে রক্ষা করে। তাছাড়া ওজোনস্তর ক্ষয়ের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে পতিত অতি বেগুনি রশ্মি এ এবং বি-এর ক্ষতিকর প্রভাবকে বাধা প্রদান করে এ্যান্টি অক্সিডেট সমৃদ্ধ খাবার ও রঙিন ফলমূল, শাক-সবজি এবং এ্যান্টি অক্সিডেট যুক্ত ওষুধ। লেখক : সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন সাবেক উপ-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×