ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানব মুখার্জী একটি প্রতীকী চরিত্র

প্রকাশিত: ০১:৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

মানব মুখার্জী একটি প্রতীকী চরিত্র

সব্যসাচী দাশ চলচ্চিত্র ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সম্পন্ন হয়েছিল প্রায় দশ মাস আগে। মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল বছরের দ্বিতীয় মাসে। কিন্তু করোনার কালো থাবা কালের স্রোতের গতি রোধ করে! সে যাত্রা না হলেও অবশেষে মুক্তির স্বাদ পেতে যাচ্ছে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের সপ্তম চলচ্চিত্র ‘রূপসা নদীর বাঁকে।’ আগামীকাল সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে প্রতীক্ষিত এই চলচ্চিত্র। এ নিয়ে আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই নির্মাতার। চলচ্চিত্র ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ঢাকা শহরের কয়েকটি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে, ঢাকার বাইরে মুক্তির বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন? প্রসঙ্গে তানভীর মোকাম্মেল বলেন, রূপসা নদীর বাঁকে একটি বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র। দেশের সিনেমা এবং সিনেমা হলের অবস্থা তো ভাল নয় তার ওপর আবার করোনার প্রভাব। যে কারণে আমরা আপাতত ঢাকায় মুক্তি দিচ্ছি। ঢাকার বাইরেও মুক্তির কথা আমাদের কাছে আসছে। সামনে ঢাকার বাইরেও প্রদর্শনের কথা ভাবছি। যতদূর জেনেছি চলচ্চিত্রটি অনেক দিন আগেই নির্মিত হয়েছে। মুক্তির ও কথা ছিল কিন্তু, ডিসেম্বর মাসে যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের একটা ভীতি আছে এমন সময় কেন? চলচ্চিত্রটি মুক্তির কথা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। করোনার কারণে আটকে যায়। এ ছাড়া আমাদের তো আরও কাজ করতে হবে, এভাবে আর কতো দিন বসে থাকা যায়! বললেন, ছবির পরিচালক। আপনারতো এটা সপ্তম চলচ্চিত্র? কাহিনী চলচ্চিত্র যদি বলেন তাহলে এটা আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য সপ্তম চলচ্চিত্র। ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ নির্মাণের কারণ এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই? একজন ত্যাগী বামপন্থী নেতার জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের গল্প। গণতন্ত্রের সংগ্রাম, সমাজ প্রগতির সংগ্রাম, অসাম্প্রদায়িকতার প্রসার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তাদের অনেক ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাদের কথা সেভাবে কখনও বলা হয় না। যে কারণে এই চলচ্চিত্র। মানব মুখার্জী একটি প্রতীকী চরিত্র! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতি এবং সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণের বর্তমানটাকে আপনি কীভাবে দেখেন? তানভীর মোকাম্মেল; এত বড় কথা বলতে পারব না। বিশেষ করে টেলিফোনে। কেবল বলব আমাদের মূল ধারার চলচ্চিত্রে এই বিষয়গুলো কম আসে। আর বিকল্প ধারার যে চলচ্চিত্র যেমন তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র, মোর্শেদের (মোর্শেদুল ইসলাম) চলচ্চিত্র, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বা আমার চলচ্চিত্রে এই বিষয়গুলো এসেছে। আপনার পরবর্তী কাজ? আমাদের পরের কাজটা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ওপর একটা ডকুমেন্টরি করছি, ‘মধুমতি পাড়ের মানুষটি : শেখ মুজিবুর রহমান’ ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ দুই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যরে এই চলচ্চিত্রে তিরিশ দশক হতে ১৯৭১ পর্যন্ত স্বদেশী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলা কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে ৭ জন বামপন্থীদের হত্যাসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ একজন দেশপ্রেমিক, ভাগ্যতাড়িত চিরকুমার বামপন্থী নেতা- মানবরতন মুখোপাধ্যায়ের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণিত হয়েছে, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারদের হাতে নিহত হন। মানবরতন মুখোপাধ্যায় খুলনা জেলার রূপসা নদীর পারে কর্ণপাড়া গ্রামে এক ক্ষয়ষ্ণিু সামন্ত পরিবারে ব্রিটিশ আমলে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পিতৃহীন হন এবং তরুণ বয়সে ‘অনুশীলন’ সমিতি ও পরে বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি কৃষক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, তাই এলাকার সবার কাছে ‘কমরেড মানবদা’ নামে পরিচিত ও সম্মানিত হয়ে ওঠেন। দরিদ্র নমঃশূদ্র কৃষকদের থেকে পান ‘কমরেড ঠাকুর’ উপাধি। ব্রিটিশ সরকারের হাতে নিগৃহীত ও দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান আমলে জেল-জুলুম-নির্যাতন ও নানা সংগ্রামের মাঝে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জীবন অতিবাহিত করেন। যার করুণ সমাপ্তি হয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। মূলত তাকে কেন্দ্র করেই ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ চলচ্চিত্রের গল্প। চলচ্চিত্রে মানব মুখার্জীর মধ্য বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, জাহিদ হাসান শোভন, বৃদ্ধ বয়েসে খায়েরুল আলম সবুজ এবং তরুণ বয়সের চরিত্রে তাওসিফ সাদমান তূর্য অন্যান্য চরিত্রে রামেন্দু মজুমদার, চিত্রলেখা গুহ, ঝুনা চৌধুরী, নাজিবা বাশার আফজাল কবির, রাজীব সালেহীন, অলোক বসু, বৈশাখী ঘোষ প্রমুখ। বিজয়ের মাসে শিকড় সন্ধানী গল্পের সিনেমা হিসেবে অনেকেই এই চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
×