ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতার হয়ে দায় স্বীকার

প্রেমিক রুবেলই ধর্ষণের পর হত্যা করে নুরুন্নাহারকে

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

প্রেমিক রুবেলই ধর্ষণের পর হত্যা করে নুরুন্নাহারকে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যার পর বিকৃত ও অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় ধানক্ষেতে লাশ ফেলে দেয়া বহুল আলোচিত সেই নুরুন্নাহার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই। পরকীয়া আড়াল করতে প্রেমিককে মামা মামা বলে ডাকত প্রেমিকা নুরুন্নাহার। দীর্ঘদিন এভাবেই মামা-ভাগ্নির আড়ালেই পরকীয়া আর অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক চলছিল। প্রেমিকার কাছ থেকে প্রেমিক রুবেল প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা চাইতে গিয়েই বিপাকে পড়ে প্রেমিকা। টাকা দিতে রাজি না হলে প্রেমিককে বিয়ের প্রস্তাব দেয় প্রেমিকা। কোনটিতেই রাজি হয় না প্রেমিক। এর পর কৌশলে প্রেমিকাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। অবশেষে প্রেমিক রুবেল পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলছিলেন এমন নাটকীয়তার কথা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন- এখানেই শেষ নয়, প্রেমিক-প্রেমিকা দু’জন বিবাহিত। তাদের সংসার আছে। সন্তান আছে। নুরুন্নাহারের আড়াই বছর বয়সী দোহাই নামের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। অবুঝ সন্তানটি আজও জানে না, তার মা আর এই পৃথিবীতেই নেই। অনৈতিক সম্পর্কের কারণে নির্মমভাবে বলি হয়ে গেছে। সন্তানটি তার খালার কাছেই রয়েছে। সংসারে নানা অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। আর প্রেমিক রুবেল তিন সন্তানের জনক। তার মধ্যেই দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সে সংসারেও অভাব এখন নিত্য সঙ্গী। মর্মান্তিক এমন ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই বলেও এই কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলছিলেন। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ নবেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেই ছবিতে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী মডেল থানাধীন আচমিতা এলাকার জর্জ ইনস্টিটিউশনের পূর্বদিকের একটি ধানক্ষেতে এক নারীর লাশ অনেকটা বিবস্ত্র ও বিকৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অজ্ঞাত হিসেবে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠায়। ফেসবুকের মাধ্যমেই নিহতের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে নিহত নারীই নুরুন্নাহার বলে শনাক্ত করে। নুরুন্নাহারকে গলায় রশি বা কাপড় পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মতামত দেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে মামলাটি পিবিআইতে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে নুরুন্নাহারের ভাই জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে গত ১৬ নবেম্বর কটিয়াদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা অজ্ঞাত। বাদী আর্জিতে বলেন, তার ছোট বোন নুরুন্নাহার (২৬) ৫ মাস আগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার বাসিন্দা রুবেলের অধীনে সেলাইয়ের কাজ শিখছিল। গত ১৩ নবেম্বর বিকেল চারটার দিকে নুরুন্নাহার তার আড়াই বছর বয়সী দোহাই নামের একমাত্র ছেলেকে রেখে ময়মনসিংহে তার উকিল বাবাকে দেখতে যাবে বলে বের হয়। গত ১৮ নবেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জামির হোসেন জিয়া মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ২ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন দেওড়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রুবেল আহম্মদকে (৪৪) গ্রেফতার করা হয়। রুবেলের পিতার নাম আব্দুল হামিদ। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানাধীন নয়াকান্দি গ্রামে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রুবেল হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পিবিআইয়ের কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার ও মামলাটির তদারককারী কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন জবানবন্দীতে দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৫ সালে নুরুন্নাহারের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন নারান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে মোঃ বাছির উদ্দিনের (৩৪) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
×