ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হচ্ছে চিনিকল

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

বন্ধ হচ্ছে চিনিকল

রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল বন্ধ ঘোষণাসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের পর সরকার এবার ১৫টি চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যায়ক্রমে। আপাতত অব্যাহত লোকসানের অজুহাতে অন্তত ৬টি চিনিকল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে রীতিমতো বিপুল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বিরাজ করছে প্রায় এক কোটি আখচাষীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। দেশে চিনির সঙ্কটের বিষয়টি সুবিদিত। সময়ে সময়ে বিশেষ করে রমজানের আগে-পড়ে, ঈদ ও পূজাপার্বণ উপলক্ষে এর মূল্য প্রায়ই চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারকে তখন বাধ্য হয়ে চিনির আমদানি শুল্ক কমাতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মজুদ ভর্তুকি মূল্যে বাজারে ছেড়ে দিয়ে সামাল দিতে হয় পরিস্থিতি। টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকসেলে বিক্রি করতে হয় চিনি। অনেকটা চাল-ডাল-ভোজ্যতেল-আলু-পেঁয়াজের মতো অবস্থা আর কি! অথচ এসব পণ্যের আমদানিকারক, পরিশোধক ও পরিবেশকরা প্রতিবছর প্রায় অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে লুটে নিচ্ছে বিপুল মুনাফা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মতো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে চিনিকলগুলোর। এ কথা সত্য যে, দেশে আবাদকৃত আখে চিনির পরিমাণ কম। উৎপাদন খরচও বেশি। এ কথাও সত্যি যে, চিনিকলগুলো সময়মতো মাড়াই মৌসুমে আখচাষীদের কাছ থেকে সরাসরি আখ ক্রয় করে না। তাদের দামও পরিশোধ করে না যথাসময়ে। ফলে তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগের সীমা-পরিসীমা থাকে না। অথচ চুক্তিবদ্ধ আখচাষীদের ঋণ পরিশোধ করতেই হয় সুদসহ। আখচাষীদের অভিযোগ, দেশে চিনির উৎপাদন খরচ ৭০-৮০ টাকা হলেও মিল কর্তৃপক্ষ তা দেখিয়ে থাকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আখ ও চিনি কেনাবেচায় এ রকম অনিয়ম-দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চিনিকলগুলো বছরের পর বছর ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছে বলে আখচাষীদের অভিযোগ। এক্ষেত্রে বেসরকারী চিনি আমদানিকারক, পরিশোধক ও বাজারজাতকারীদের সঙ্গে সরকারের উপর মহলে যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে। অথচ আখচাষীরা সময়মতো সার, কীটনাশক ইত্যাদি পায় না। সরকারের ভ্রান্তনীতিও চিনিকলের লোকসানের জন্য দায়ী অনেকাংশে। চিনিকলের উপজাত-চিটাগুড় ও ঝোলাগুড় থেকে বিপুল পরিমাণে মিথাইল ও ইথাইল এ্যালকোহল আহরণ সম্ভব। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কায় এসব পণ্য রফতানির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ওষুধ শিল্পেও এর বিপুল ব্যবহার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন অত্যাবশ্যক। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তথা পিপিপির ভিত্তিতেও উপরোক্ত কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। শিল্পমন্ত্রী অবশ্য আশ্বস্ত করে বলেছেন, চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে কোন শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হবে না এবং তাদের বেতন-ভাতা পাওনা মিটিয়ে দেয়া হবে। বন্ধ ঘোষিত ৬টি চিনিকলের উৎপাদিত চিনি ও কৃষকের আখ কিনে নিয়ে বাকি ৯টি চিনিকলে মাড়াই করা হবে। এটি আপাত সমাধান হলেও এক্ষেত্রে সরকারকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
×