ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রে ধর্মঘট!

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

সমুদ্রে ধর্মঘট!

অনেক খবরের ভিড়ে সংবাদটি কিছুটা অভিনব বটে। সমুদ্রে অর্থাৎ, সুবিশাল বঙ্গোপসাগরে চলছে ধর্মঘট। ফলে মৎস্য আহরণ প্রায় বন্ধ। সমুদ্রগামী অনেক ট্রলার মাছ ধরা বন্ধ রেখে ইতোমধ্যে ফিরে আসতে শুরু করেছে বন্দরে। এই ধর্মঘট আহ্বান করেছে ট্রলার মালিক এবং এর সঙ্গে জড়িত নাবিক, অফিসারসহ অন্যরা। এতে শামিল হয়েছে ২৫৩ ট্রলারের প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার অফিসার ও নাবিক। তাদের সম্মিলিত দাবি, নবপ্রণীত সংশোধিত সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০-এর কয়েকটি ধারা সংশোধন করতে হবে। সমুদ্রে বিপুলসংখ্যক ট্রলারের মৎস্য আহরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অচিরেই অভ্যন্তরীণ ও রফতানি পর্যায়ে মাছের সঙ্কট দেখা দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আর এই সুযোগে প্রতিবেশী দেশগুলোর জেলেদের বঙ্গোপসাগরের বুকে হানা দিয়ে মৎস্য আহরণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। অতীতে এমন বহু ঘটনার নজির রয়েছে। বিদেশী ট্রলার এবং নাবিকদের জাল ও মাছসহ গ্রেফতারের খবরও আছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড কর্তৃক। দেশে বর্তমানে স্টিল ও কাঠ বডির ২৫৮টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে বছরে অন্তত দেড় লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ আহৃত হয়ে থাকে। এই সুযোগ আরও বাড়ানো যেতে পারে আগামীতে। আপাতত সামুদ্রিক মৎস্য খাত ১৫-১৬ শতাংশ চাহিদার জোগান দিতে সক্ষম। বিপুল বঙ্গোপসাগরের তুলনায় তা খুবই নগণ্য বলা চলে। তদুপরি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের উপযোগী বড় আধুনিক জাহাজ বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। মেরিন ফিশারিজ এ্যাসোসিয়েশনের দাবি, নতুন সামুদ্রিক মৎস্য আইনের কিছু ধারা ব্যবসাবান্ধব হয়নি। বরং কিছু ধারা সাংঘর্ষিক, যা অবিলম্বে সংশোধন করা প্রয়োজন। আবার কিছু ধারা প্রচলিত ফৌজদারি আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক, যাতে লঘু পাপে রাখা হয়েছে গুরুদণ্ডের বিধান। তাদের মতে, আইনের কঠোর বিধানগুলো সংশোধন করে নমনীয় করতে হবে, যাতে তা হয় সমুদ্রে মৎস্য আহরণের উপযোগী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলেই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও, তার পরিমাণ বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত সম্পদের তুলনায় খুবই নগণ্য। এমনকি সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে জরিপ চালানোর উপযোগী আধুনিক জাহাজ পর্যন্ত নেই। সময়ে সময়ে বাপেক্সসহ বিদেশী সহায়তায় যৎসামান্য জরিপ কার্য চালানো হলেও বঙ্গোপসাগরের অমিত ও অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমরা জানি খুব কম। বঙ্গোপসাগরে কী পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। ব্লু ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এই অঞ্চলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্লু ইকোনমি সেল। গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও মৎস্য সম্পদ জরিপের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ। বাকি ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অবকাঠামো উন্নয়নসহ গবেষণার কাজে। জরিপ জাহাজটির মাধ্যমে সুবিস্তৃত ও সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের বুকে ও তলদেশে যাবতীয় মৎস্য সম্পদসহ জলজ সম্পদ এবং তেল-গ্যাসসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং এসবের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জানা সম্ভব হবে। ব্লু ইকোনমির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে।
×