ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জনতা ব্যাংকের ফের এমডি হলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

জনতা ব্যাংকের ফের এমডি হলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে ফের নিয়োগ পেয়েছেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর তাকে ব্যাংকটিতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। গত ৩ ডিসেম্বর তার মেয়াদ শেষ হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আব্দুছ ছালামকে আবার ব্যাংকটির এমডি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মঙ্গলবার সেই প্রজ্ঞাপন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে আব্দুছ ছালাম আজাদকে ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত (তার বয়স ৬৫ বছর পর্যন্ত) চুক্তিতে পুনঃনিয়োগে সরকারের সম্মতি নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন করা হলো ব্যাংক কোম্পনি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী তার নিয়োগের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। ১৯৮৩ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জনতা ব্যাংকে যোগদান করা আব্দুছ ছালাম আজাদ ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চর নবীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাবনা সরকারী এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শাখায় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে ৩৮ বছরের মধ্যে ২৬ বছরই বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে রাজারবাগ কর্পোরেট শাখায় দায়িত্ব পালনের সময়কার কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে তাকে ব্যাংকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক শাখা কামাল আতাতুর্ক কর্পোরেট শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি শাখাটিকে ব্যবসা সমৃদ্ধ করে কর্পোরেট-২ থেকে কর্পোরেট-১ শাখায় উন্নীত করতে সক্ষম হন। এরপর ২০০৮ সালে ডিজিএম হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ২০১০ সাল থেকে জনতা ভবন কর্পোরেট শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেও তিনি ব্যবসায়িক সফলতা বজায় রেখে শাখাটিকে ব্যবসায়িক সব সূচকে শীর্ষস্থানে নিতে সক্ষম হন। ফলে শাখাটি জিএম হেডেড শাখা হিসেবে উন্নীত হয়। ২০১১ সালে জিএম হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ওই শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগে যোগদান করেন। আব্দুছ ছালাম আজাদ ২০১৬ সালে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করেন। যোগদানের তিন মাস পর আবার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে জনতা ব্যাংকে যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা, সুনাম বিচার-বিশ্লেষণ করে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব অর্পণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিভিন্ন জেলায় কর্মী সমাবেশ করে ঋণ আদায়সহ এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর তাগিদ দেন। এর ফলে আশানুরূপ সাফল্যও অর্জিত হয় ব্যাংকটির। আব্দুছ ছালাম আজাদ বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের একজন ডিপ্লোমেড এ্যাসোসিয়েট তিনি। ২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচলক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে যোগদানের সময় ব্যাংকের আমানত ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে আমানতের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৭৯ হাজার কোটি টাকা। গত তিন বছরে জনতা ব্যাংকের আমানতে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৫৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত তিন বছরে জনতা ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ শতাংশ। এ সময়ে বিতরণকৃত কোন ঋণ খেলাপী হয়নি। কঠোর ঋণ শৃঙ্খলা মেনে ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। বিশেষ পুনঃতফসিলের প্রজ্ঞাপনের আওতায় ৮৬৮টি আবেদন নিষ্পত্তি করে ১৪৩ কোটি টাকা নগদ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে জনতা ব্যাংক। এর মাধ্যমে ৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জনতা ব্যাংকের আমদানি বাণিজ্যে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলমান মহামারীতেও ব্যাংকের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকের আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য এর আগে প্রায়ই অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে হতো। বর্তমানে অন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। ২০১৮ সালে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ব্যাংকের সব সেবায় প্রযুুক্তির সংমিশ্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জনতা ব্যাংক। গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি খাতে জনতা ব্যাংকের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। জনতা ব্যাংক নিজেদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে জনতা ব্যাংকের কর্মীরা ৬০টি সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছে। ব্যাংকের সবকটি শাখা কোর ব্যাংকিং সলিউশনের আওতায় আনা হয়েছে। পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টে জনতা ব্যাংক এখন আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি ব্যাংক।
×