ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ফেরায় নেগেটিভ সনদ

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

দেশে ফেরায় নেগেটিভ সনদ

বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল ভিন্ন দেশ থেকে আসা কোভিড-১৯ রোগীর মাধ্যমেই। সীমান্ত দিয়েই বিশেষ করে বিমান পথে প্রবেশ করেছিলেন প্রথম করোনা রোগী। আধুনিককালে বিভিন্ন রাষ্ট্রে যাতায়াতে বিমানবন্দরই দেশের সবচেয়ে বড় এন্ট্রি পয়েন্ট বা প্রবেশমুখ। সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে আমাদের বলতেই হবে যে, মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ব্যাপারে শতভাগ সতর্কতা জরুরী ছিল। কিন্তু সে সময়ে কর্তৃপক্ষ শৈথিল্য প্রদর্শন করে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই করোনাক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভেতর যারা কোভিড-১৯ রোগী ছিলেন তাদের মাধ্যমেই দেশের নানা প্রান্তে সহজেই করোনার বিস্তার ঘটেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যারা করোনা নেগেটিভ সনদ প্রদর্শনে ব্যর্থ হবে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের আবশ্যকতার স্বার্থে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টির সার্বিক চিত্র। গত দুদিনে প্রায় চারশত যাত্রীকে নেয়া হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। কোন ধরনের তদ্বির ও প্রভাবের কাছে মাথা নত করেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সাধারণত যে কোন দেশের বিমানবন্দর ত্যাগের আগে যাত্রী বহনকারী উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে চায় তাদের বিমানে কোন করোনা রোগী রয়েছেন কিনা! এটি যে কেবল সংশ্লিষ্ট উড়োজাজের বাদবাকি যাত্রীদের জন্যেই ঝুঁকিপূর্ণ তা নয়। একইসঙ্গে গন্তব্যের দেশটির জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এটাই সঙ্গত করোনা রোগী যে দেশেই যেখানেই আছেন সেখানেই চিকিৎসা নেবেন। স্থানত্যাগ করবেন না। উন্নত দেশগুলোতে যেসব বাংলাদেশী নাগরিক নানা কাজে যাচ্ছেন তারা করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে নিয়ে সেসব দেশে গেলেও দেশগুলো শতভাগ আগতদেরই ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখছে। সে দিক দিয়ে বিচার করলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দেশে আগত শতভাগ যাত্রীকেই কোয়ারেন্টাইনে পাঠাচ্ছে না। শুধু যারা করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারাই যাচ্ছেন কোয়ারেন্টাইনে। একদিক দিয়ে এটি ঠিকই আছে। বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে না। যদিও ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো এক্ষেত্রে অতি সতর্কতা অবলম্বন করছে। অনিয়ম দূর করার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। আশা করা যায় বারবার ঘোষণা দেয়ার পরও এয়ারলাইন্সগুলো কেন তাদের করোনা সনদ ছাড়াই ঢাকায় আনছে তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদেরও জরিমানার আওতায় আনার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কোন এয়ারলাইন্সই করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। এটা ব্যাপক হারে দেশের সব এয়ারলাইন্সকে সার্কুলার করে জানানো হয়েছে। তারপরও গত দুদিনে ৩০৮ জন সনদ ছাড়াই দেশে ফেরেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে যারা করোনা নেগেটিভ সনদ না নিয়ে আসবেন, তাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হবেই। তাই ভোগান্তি এড়াতে হলে যারাই দেশে আসবেন তাদের নিজ খরচে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হবে। একজন করোনা রোগী দেশে ফেরা মানে অন্যকে সংক্রমিত করার সমূহ ঝুঁকি নিয়েই দেশে আসা। তার মাধ্যমে নিকটজনেরাও রোগাক্রান্ত হতে পারেন। তাই সবচেয়ে ভাল হয় করোনার চিকিৎসা সম্পন্ন করেই দেশে প্রত্যাবর্তন। দেশবাসী প্রত্যাশা করে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করবে। কোন অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করে দেশের মানুষকে করোনার ঝুঁকির ভেতর ঠেলে দেবে না।
×