বাতজ্বর কি?
বাতজ্বর হল শরীরের অস্থিসন্ধি বা গীড়াগুলোর একটি প্রদাহজনিত রোগ যার ফলে জ্বর এবং তীব্র ব্যথা হতে পারে। মূলত গলায় ব্যথা বা টনসিলের প্রদাহ বাতজ্বরের প্রধান উৎস। রোগটি সাধারণত ৫ থেকে ৫ বছরের ছেলে মেয়েদের বেশি হয়।
বাতজ্বরের কারণ : স্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর আক্রমণে এ রোগটির উপসর্গ দেখা যায়। প্রথমে গলায় বা টনসিলে প্রদাহ হয় পরে তা সম্পূর্ণরূপে ও যথাযথ সুচিকিৎসা না করনোর ফলে জ্বর এবং গলা ব্যথা হতে পারে। এর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে শরীরের বড় বড় গীড়াগুলি একটির পর একটি আক্রান্ত হতে পারে ফলে গীড়াগুলি ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয় এবং চলাফেরায় অসুবিধা হয়। স্ট্রেপটোকক্কাস এ জীবাণুটির আক্রমণ অধিকাংশ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বেশি হয় যারা ঘনবসতিপূর্ণ স্যাঁত স্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারে না। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বাতজ্বরের লক্ষণ : বাতজ্বর শরীরের বড় অস্থিসন্ধি, হৃদপিন্ড, চামড়ার নীচে এবং স্নায়ুকে আক্রান্ত করে। এর মুখ্য লক্ষণগুলি হলো-
* গীড়ায় বা অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত ব্যথা এবং এক গীড়া থেকে অন্য গীড়ায় সংক্রমিত হয়, ফলে গীড়াগুলি ফুলে যায়, তীব্র জ্বর হয় এবং প্রচণ্ড ব্যথার জন্য চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়।
* হৃদপিন্ড বা হার্টের প্রদাহের ফলে বুক ধড়পড় করতে পারে, বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে, সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে উঠতে পারে। কখনও কখনও হার্টফেল করে পা ফুলে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* অল্প বয়সে রোগটি হয় তাই শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
* চামড়ার নিচে প্রদাহের ফলে লালচে দাগ বা ত্বকে ছোট ছোট এক ধরনের গোট দেখা দিতে পারে।
* স্নায়ুপেশীর জটিলতা বা স্নায়ুর নির্দিষ্ট স্থানে প্রদাহের ফলে মনের অগোচরে নাচের মত করে হাত ও পা এর অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া হতে পারে।
বাতজ্বরের প্রতিকার : বাতজ্বর হৃদরোগের অন্যতম একটি প্রধান কারণ। বাতজ্বরের প্রতিকারের জন্য স্ট্রেপটোকক্কাল নামক জীবাণুর আক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে তাই-
* শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সাধ্যমত সুষম খাবার বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে, ভাত-রুটির সাথে মাছ, মাংস, সবজি, ফল পরিমানমত খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
* বাচ্চাদের যতদূর সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে হবে।
* ঘন বসতিপূর্ণ স্যাঁত স্যাঁত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস না করার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে।
* সবসময় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য টিউবওয়েলের পানি অথবা পরিমিত পানি কমপক্ষে ২০ মিনিট ফুটিয়ে কিংবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে প্রয়োজনে ফিল্টারের দ্বারা পানি বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করতে পারি।
* প্রতিবার খাবার গ্রহণের আগে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে খাবার তৈরি করে পরিবেশন করতে হবে এবং খেতে হবে।
* মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য নিরাপদ স্যানেটারী ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং মলমূত্র ত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
* ময়লা আবর্জনা নিরাপদ এবং নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
* জ্বর এবং গলা ব্যথা হলে যথাশীঘ্র সম্ভব অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ডাঃ অমর বিশ্বাস
সহযোগী অধ্যাপক
রেসপিরেটরি মেডিসিন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: