ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিনাযুদ্ধে হানাদারমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলাকে হানাদারমুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ ও মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্টের ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। এতে শহরের চারপাশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থানে থাকায় হানাদার বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কেএম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে পৌর শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। এছাড়া শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কলেজের হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর বিনাযুদ্ধেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মুক্ত ঘোষণা করে। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ভালুকা নিজস্ব সংবাদদাতা ভালুকা থেকে জানান, আজ ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ভালুকা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ’৭১- এর ১৭ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অব) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফছার উদ্দীন একটি রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে মল্লিকবাড়ি বাজারে খেলু ফকিরের বাড়িতে গোপনে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। অসীম সাহসিকতায় কয়েক দিনের মধ্যেই তার বাহিনী ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬ টি রাইফেল ও একটি এল এম জি ও প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করে শক্তি অর্জন করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাওরাইদ থেকে ক্ষীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ একটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেন। পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষণসহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার পর এটি একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। মীরসরাই নিজস্ব সংবাদদাতা মীরসরাই চট্টগ্রাম থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর মীরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মীরসরাইকে হানাদার মুক্ত করেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর থেকেই মীরসরাইয়ের আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন শুরু করে। নানা ঘটনা পরিক্রমার পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার চূড়ান্ত ক্ষণ আসে ৮ ডিসেম্বর। এদিন সকালে সুফিয়া রোড ওয়্যারলেস স্টেশন থেকে একটি পাক বাহিনীর জিপ তীব্রগতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎপেতে থেকে শত্রুর অবস্থান নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে এ খবর পাঠানো হয়। সকাল ১০টা নাগাদ মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের বিএলএফ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় দুইশত মুক্তিযোদ্ধা মীরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকি তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে একযোগে ঝটিকা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়। পাক সেনাদের অবস্থান ছিল হাইস্কুল, থানা, মীরসরাই সি ও অফিস। মোহনগঞ্জ নিজস্ব সংবাদদাতা মোহনগঞ্জ থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মোহনগঞ্জ শহর যখন পাক হানাদার বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী মোহনগঞ্জের পশ্চিম দিক দিয়ে বারহাট্টা অভিমুখে পালিয়ে যায়। মোহনগঞ্জ মুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন ইলিয়াস চৌধুরী, গোলাম এরশাদুর রহমান, গোলাম মৌলা ও কালা মিয়া। কালকিনি নিজস্ব সংবাদদাতা কালকিনি থেকে জানান, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস মঙ্গলবার ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানী হানাদারদের ওপর। এতে করে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয়বরণ করে। সেদিন তারা মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে কালকিনি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক কমান্ডার মালেকুজ্জামান মালেক বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় এ উপজেলা ছিল পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত। উপজেলা হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি মুখোমুখি যুদ্ধসহ ১৫টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। যেমন উপজেলার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু লালপোল পাক হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালায়। পরে পাক হানাদাররা দিশাহারা হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ঝালকাঠি নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন ঝালকাঠিতে অবস্থানকারী অবসরপ্রাপ্ত পাক সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিহারীদের সমন্বয়ে গঠিত পাক মিলিশিয়া বাহিনী সদস্যরা বেলা সাড়ে ১২টায় শহরে কারফিউ দিয়ে গানবোর্ড যোগে পালিয়ে যায়। শহরের চারপাশে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং মুক্তিবাহিনী থানা চত্বরে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যায় তৎকালীন এই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার সেলিম শাহানাজ আসার পরে পুলিশ বাহিনী তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে এবং রক্তপাতহীন অবস্থায় ঝালকাঠি হানাদার মুক্ত হয়। মানুষ এ সময় বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে। তবে পলায়নপর রাজাকারদের মধ্যে যারা মানুষকে অত্যাচার করেছিল সেই সকল রাজাকারদের জনতার হাতে নিহত হয় এবং কিছু রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়।
×