ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়-টিলা সাবাড়

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

পাহাড়-টিলা সাবাড়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদে পরিবেশ অধিদফতর কিংবা জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্রের তোয়াক্কা না করে সংরক্ষিত বনের পাহাড়-টিলা কেটে এবং আবাদি জমির শ্রেণী পরিবর্তনে চলছে মাটি লুটের মচ্ছব। সরকারী দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত অথবা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ধরনের একাধিক চক্র উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে কয়েক মাস ধরে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে। চাষের জমি কেটে মাটি লুটে নিচ্ছে তারা। অভিযোগ উঠেছে, পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের লোকজন যেন নীরব দর্শক। তারা দেখেও দেখে না। এতে উজার হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বেহাত হয়ে যাচ্ছে সরকারী ভূসম্পদ। বর্তমানে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে বগাচতর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র মালিকদের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে মইনুল হক ও রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি চক্র শক্তিশালী এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। তাতে আবাদি জমির শ্রেণী পরিবর্তনের কারণে পরিণত হচ্ছে পুকুরে। এই অবস্থায় আশপাশের অন্তত দুই শ’ একর চাষের জমি ভেঙ্গে ছড়াখালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে চাষের জমি রক্ষা করতে চরম হিমশিম খাচ্ছে ভুক্তভোগী জমি মালিক ও চাষীরা। পাশে ছড়াখাল থেকে মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ফজল করিম, সজীব ও পুতুসহ একাধিক চক্র। স্থানীয় ভুক্তভোগী জমি মালিক আবুল কাশেম, নেজাম উদ্দিন, দেলোয়ার সওদাগর, চুন্নু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টার, মাহাবুব আলমসহ অনেকে অভিযোগ করেন, কয়েকমাস ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মাটি লুটে নিচ্ছে। ওই এলাকায় যেসব চাষের জমি রক্ষিত আছে, তার বেশিরভাগই ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে। জমি মালিকরা দাবি করেন, তাদের জমির আশপাশ থেকে শক্তিশালী এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নেয়ার কারণে বগাচতর এলাকার অন্তত দুই শ’ একর চাষের জমি হুমকিতে পড়েছে। জমি মালিকরা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন বন বিভাগের পাহাড়-টিলা কেটে এবং পাশের বগাচতরে চাষের জমি কেটে মাটি লুটের ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। সর্বশেষ গত ২৯ নবেম্বর ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কেটে লুটের স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি সরবরাহকালে দুটি ডাম্পার (মিনি ট্রাক) জব্দ করেন তিনি। ইউএনও বলেন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন পাহাড় কেটে কতিপয় ভূমিদস্যু মাটি লুট করার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে জব্দকৃত দুটি গাড়িকে একলাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। জড়িতরা মুচলেকাও দিয়েছে, সেখান থেকে আর মাটি কাটবে না। জানা গেছে, শুধু ডুলাহাজারা নয়, নানা কৌশলে পাহাড় কাটা চলছে খুটাখালীর নোয়াপাড়া, গর্জনতলী, সেগুনবাগিচা, মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, বিএমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ী গ্রামে। সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রভাবশালী চক্র কক্সবাজার উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উপকূলীয় বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় এবং সামাজিক বনায়নের জায়গা দখল করে ও চাষের জমি এস্কেভেটর দিয়ে কেটে মাটি লুটের বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। সংরক্ষিত বনের পাহাড় এবং চাষের জমি কেটে প্রতিদিন শতাধিক গাড়িতে করে মাটি লুট অব্যাহত থাকলেও দৃশ্যমান কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আবার উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও পরবর্তীতে আবারও মাটি লুটের মহোৎসব শুরু করে অভিযুক্ত চক্রের লোকজন। চকরিয়া ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের এরিয়ায় কোন ধরনের পাহাড় কাটা নেই। অবশ্য আগে কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কাটা হলেও সেই ঘটনায় ইতোমধ্যে বন বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় এবং চাষের জমি কাটার জন্য কাউকে ছাড়পত্র দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যেখানে পাহাড় কাটা ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করার ঘটনা একটি বেআইনী কাজ সেখানে অনুমোদন পাবে কীভাবে। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা ও মাটি লুটের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছি। পাহাড় ও জমি কেটে শ্রেণী পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×