ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলপিজির দাম প্রথম সরকারীভাবে নির্ধারণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

এলপিজির দাম প্রথম সরকারীভাবে নির্ধারণ হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ উচ্চ আদালতের আদেশে এবার তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর আগে কখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এতে করে সারাদেশের ভোক্তারা এলপিজি ক্রয়ে প্রতারিত হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিইআরসি সূত্র বলছে রবিবার এলপিজি বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। আজ সোমবারের মধ্যেই কোম্পানিগুলোকে দর বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিশন এলপিজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে গণশুনানির দিনও নির্ধারণ করেছে। পর্যায়ক্রমে ১৪, ১৭ এবং ১৮ জানুয়ারি গণশুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরাসরি অথবা অনলাইনে এই শুনানি হবে কি না সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর মধ্যে সরাসরি গণশুনানিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। বিইআরসি চেয়ারম্যান রবিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য তারা বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান গত ১ ডিসেম্বর কমিশন প্রস্তাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কবে এই চিঠি বিপণন কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। গণশুনানির জন্য একটি সিডিউল তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে এই চিঠি কবে গেছে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। আব্দুল জলিল জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা শুনানি করতে চান। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর মধ্যে কোন পক্ষ গণশুনানিতে আপত্তি জানালে কমিশন কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও সেই আলোচনা হয়নি। কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য একটি রিট আবেদন করে। এই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত বিইআরসিকে গণশুনানি করে এলপিজির দাম নির্ধারণের আদেশ দেয়। কিন্তু কমিশন সেই আদেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিপালন না করাতে গত ২৯ নবেম্বর উচ্চ আদালত বিইআরসি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। বিইআরসি সূত্র বলছে রবিবার দিনই আদালতের আদেশ তারা হাতে পেয়েছেন। আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিপণন কোম্পানির কাছে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি গণশুনানির দিনও নির্ধারণ করা হয়েছে। আদালত অবমাননার রুল থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ৬ ডিসেম্বর আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার দিন থেকে এত অল্প সময়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জানতে চাইলে বিপিসির এলপিজি লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের বিইআরসি আজ রবিবারই দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। সোমবারের মধ্যে প্রস্তাব দেয়ার জন্য বলেছে। আমরা প্রস্তাবটি তৈরি করছি। আশা করছি সোমবারেই প্রস্তাবটি জমা দিতে পারব। তিনি বলেন, বিইআরসি চিঠিতে লিখেছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে। এ জন্যই প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশী পশ্চিমবাংলার চেয়েও দেশে এলপিজির দর কেজিপ্রতি অন্তত ৩০ টাকা বেশি। বেসরকারী কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ভোক্তা এবং বিপণন কোম্পানির মধ্যে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা এই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোন নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। আবার এলপিজির দামও নির্ধারণ করা হচ্ছে না। এতে করে এলপিজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক দরে এলপিজি বিক্রি করছে। সরকারী এলপিজি বিতরণ কোম্পানি এলপিজি লিমিটেড ৭৫০ টাকা দরে এলপিজি বিক্রি করে। তবে তা মোট এলপিজি সরবরাহের মাত্র এক ভাগ। যার প্রধান ক্রেতা আবার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন প্রভাব ফেলা সম্ভব হয় না। এলপিজির বোতলের গায়ে একটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণী অঙ্ক যোগ করে দিতে চাইলেও বেসরকারী বিক্রেতারা তাতে সম্মত হয়নি। এতে করে এক এক কোম্পানির এলপিজির দাম বাজারে এক এক রকম। জনতে চাইলে এলপিজি অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতা আজম জে চৌধুরী বলেন, আমরা গত মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে বিইআরসিকে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। এখানে কারিগরি অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। ফলে একবারে দাম বৃদ্ধি করলে চলবে না। প্রতিমাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে হবে। বিইআরসি তো একটি দাম নির্ধারণ করে আমাদের বলতে পারে। তখন এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তারা এটি করে না। আর এলপিজির দাম বৃদ্ধির জন্য যে প্রবিধানমালা প্রয়োজন বিইআরসির তো তাই নেই। ফলে দাম বৃদ্ধি কতটা আইনসিদ্ধ হবে সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতার পাশাপাশি কাঠের অপ্রতুলতার জন্য এখন গ্রামেগঞ্জেও এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধু রান্নার জ্বালানিই নয় গাড়ির জ্বালানি হিসেবেও এলপিজি ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে এখন থেকেই ভোক্তার অধিকারের চিন্তা না করা হলে একটি পক্ষের পকেটে চলে যাবে সব মুনাফা।
×