ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনে ৩০৮ যাত্রী দিয়াবাড়ি ও আশকোনা সেন্টারে

নেগেটিভ সনদ না থাকলে পাঠানো হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

নেগেটিভ সনদ না থাকলে পাঠানো হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘোষণা দেয়ার পরও করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে না থাকায় বিদেশ ফেরত যাত্রীদের নেয়া হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে। গত দুদিনে প্রায় চারশত যাত্রীকে নেয়া হয়েছে উত্তরার দিয়াবাড়ির প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। কোন ধরনের তদ্বির ও প্রভাবের কাছে মাথানত করেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার থেকে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের নেগেটিভ সনদ আনা বাধ্যতামূলক ঘোষণার পরও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৭২ যাত্রী সনদ ছাড়াই ঢাকায় আসেন। তাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি নেয়া হয় দিয়াবাড়িতে। এ বিষয়ে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সামনের দিনগুলোতে আরও কড়াকড়ি করা হবে। প্রয়োজনে তাদের দেশে ঢোকার পরিবর্তে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। বারবার ঘোষণা দেয়ার পরও এয়ারলাইন্সগুলো কেন তাদের করোনা সনদ ছাড়াই ঢাকায় আনছে তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদেরও জরিমানার আওতায় আনার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কোন এয়ারলাইন্সই করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। এটা ব্যাপক হারে দেশের সব এয়ারলাইন্সকে সার্কুলার করে জানানো হয়েছে। তারপরও গত দুদিনে ৩০৮ জন সনদ ছাড়াই দেশে ফেরেন। পরিণতিতে তাদের রাজধানীর দুটি স্থানে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। এ সময়ে আনুমানিক ২০টি ফ্লাইটে বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি যাত্রী দেশে ফেরেন। তাদের মধ্যে ৩০৮ যাত্রীর সঙ্গে কোন করোনা সনদ ছিল না। তাদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, বেবিচকের ঘোষণা অনুয়ায়ী বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই তা মেনে যাত্রী বহন করছে। দেশে ফেরা যাত্রীদের বেশিরভাগই সঙ্গে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসছেন। ফলে আগের তুলনায় তাদের কাজের চাপ কমেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সকলেই করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরবেন বলে মনে করেন তিনি। সবাই যদি করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফেরেন তাহলে বিমানবন্দরেও ঝামেলা কম হয়। কাজের বাড়তি চাপ পড়ে না। কয়েক যাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাদের অনেকেই জানতেন না করোনার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সৌদি আরব থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরা মাহমুদ জানান, তিনি ভুলক্রমে নেগেটিভ সনদ আনতে পারেননি। তাই যেতে হয়েছে আশকোনা হজক্যাম্পের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। তাকে যে কক্ষে দেয়া হয় সেই কক্ষে তার্কিশ এয়ারলাইন্সেরও একজন যাত্রী রয়েছেন। দুজনের করোনা পরীক্ষায় যিনি তার্কিশ এয়ারলাইন্সে এসেছেন, তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। মাহমুদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও পজিটিভ রোগীর সঙ্গে একই কক্ষে থাকায় তার নেগেটিভ এলেও ছাড়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, যে কোন সিদ্ধান্ত নতুন করে বাস্তবায়ন করাটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রেও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে যারা করোনা সনদ না নিয়ে আসবেন তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হবে। যাত্রী নিজে পজিটিভ না হলেও একই কক্ষে অবস্থানকারী একজনের পজিটিভ হলে তাকেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যারাই আসবেন তাদেরও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে নিজ খরচে করোনো নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো যাত্রীদের অধিকাংশই মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিক। তাদের অধিকাংশকই রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আসেন। আগাম টিকেট কেটে রাখায় তাদের বিমান নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। যাত্রীদের অনেকেই নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতার কথা জানতেন না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের তো কিছু করার নেই। এটা একটা সমন্বিত কাজ। এদিকে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘোষণা দেয়ার পরও করোনাভাইরাসের সনদ ছাড়া এসব যাত্রীকে উড়োজাহাজে ওঠানোয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বেবিচকের কাছে বাংলাদেশ বিমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আকরাম বলেন, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ৭১ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ জনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেন এসেছেন। রিয়াদ থেকে আসা বিমানের বিজি-৪০৪০ ফ্লাইটে ৬৮ যাত্রী এসেছেন যথাযথ করোনা সনদ ছাড়া। দোহা থেকে আসা বিমানের ফ্লাইটে দুজনকে পাওয়া যায়, যাদের যথাযথ করোনা সনদ ছিল না। এ ছাড়া ওমান থেকে আসা সালাম এয়ারের একটি ফ্লাইটে একজনের করোনা সনদ ছিল না। জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশের প্রধান গেটওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাতে কোন পজিটিভ রোগী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শনিবার থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নেগেটিভ সনদ না থাকলে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে।
×