ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাক উদ্যাপন শুরু

শীতের শুরুর আগেই কুয়াশার আদর মাখা চাদর, হিম হিম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

শীতের শুরুর আগেই কুয়াশার আদর মাখা চাদর, হিম হিম

মোরসালিন মিজান ॥ শীতের এখনও বাকি। কয়েক দিন হাতে আছে। কিন্তু তার আগেই কুয়াশার চাদরে ঢাকতে শুরু করেছে চারপাশ। হিম হিম ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। না, শুধু সকালে বা রাতে নয়। বেশিরভাগ সময়ই, শীত যে এসেছে, বেশ অনুভব করা যাচ্ছে। তবে প্রকৃতই শীত নামবে আগামী ১ পৌষ। তার আগের এই কিছুদিন, বলা চলে, রিহার্সালটা চলছে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে নিত্য রূপ বদলায় প্রকৃতি। তবে সহজেই আলাদা করা যায় গ্রীষ্ম ও শীতের কালটিকে। একটি সবচেয়ে বেশি উষ্ণতার জন্য। অন্যটি সবচেয়ে বেশি শীতল অনুভূতি নিয়ে আসে। শীতের বাহন বলা হয় হেমন্তকে। আর কয়েকদিন পর বিদায় নেবে হেমন্ত। তার আগে আসন্ন শীতের কাছে সে নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। এখন রাজধানী ঢাকায়ও বেশ শীত পড়ছে। নানা ছুঁতোয় মুখ লুকোচ্ছে সূর্যমামা। হালকা কুয়াশা এসে জড়িয়ে নিচ্ছে গোটা শহরকে। রবিবারের কথাই ধরা যাক, সারাদিনে রোদের দেখা মেলেনি। আবহাওয়া ছিল ঠাণ্ডা। মনে হচ্ছিল, পৌষ বুঝি চলছে। শীত বাড়াতে ভূমিকা রাখছে ঘন হয়ে ঝরতে থাকা শিশিরও। যান্ত্রিক নগরীর যেটুকু মাটি, ভিজিয়ে নরম ও শীতল করে রাখছে। মাঝে মাঝে আবার বইছে মৃদু হাওয়া। গা হঠাৎ কেঁপে ওঠে। প্রকৃতির এ রূপ দেখেই হয়ত কবি লিখেছিলেন : আনল ডেকে কুয়াশাকে/সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।/সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে...। এখন রাতে ঘুমানোর সময় বাতির সঙ্গে ফ্যানটি বন্ধ না করলে আর চলছে না। শেষ রাতে গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে কাঁথা কম্বল। শহরের ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তিটা পুরনো। সন্ধ্যা হতে না হতেই তারা শীতের পোশাক পরে নিচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে, পাশেই ফুটপাথে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে ছেলে বুড়ো সকলেই। দেখে জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত পঙ্ক্তি মনে পড়ে যায়, যেখানে কবি বলছেন : পাণ্ডলিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;/শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো...। শীতের আগেই শীত বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাবাসীর প্রস্তুতিও বেশ জোরদার হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা গায়ে তুলেছেন গরম কাপড়। শীতের ফ্যাশন সামনে এসেছে। নতুন ডিজাইনের হাল্কা দেখতে সুয়েটার পরছেন কেউ কেউ। সব বোতাম খোলা ব্লেজারও গায়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। বাকিরা মোটা কাপড়ের ফুলহাতা জামা বা টিশার্ট গায়ে দিচ্ছেন। তরুণীরা মিষ্টি রঙের কার্ডিগান ফুল তোলা চাদর ইত্যাদি পরিধান করছেন। শীতের পীঠাপুলিও বাদ নেই। অনেকেই ঘরে চিতই ভাপা পুলি পিঠা করে খাচ্ছেন। তবে বেশি চোখে পড়ছে ফুটপাথে চুলা ধরিয়ে পিঠা তৈরির দৃশ্য। একদিকে পিঠা হচ্ছে। অন্যদিকে গরম গরম খাওয়া। খেতে খেতে শীত ভুলে থাকার চেষ্টা। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ। উদ্যাপনের ছবি। বাংলা পৌষ ও মাঘ- এই দুই মাস প্রকৃত শীতের কাল। এ সময় তীব্র থেকে তীব্রতর হবে শীত। আর তার ঠিক আগের সময়টি রিহার্সালের। কেমন হচ্ছে রিহার্সাল?
×