ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মীর আব্দুল আলীম

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

সময়টা সারা বিশ^বাসীর জন্য দুঃসময় বটে। করোনা মহামারী জনমনে ভীতি তৈরিসহ অর্থনীতিতেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের মৃত্যু হার এবং অথেনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হওয়ার কথা। আমরা তাতে উদ্বিগ্নও ছিলাম। এরপরও কিছু সুখ সংবাদে আমরা সুখ পাচ্ছি; আশার আলো দেখছি। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে এমন আশাজাগানিয়া সংবাদ আমাদের আন্দোলিত করে বৈকি! পত্রিকায় কয়েক দিনের সংবাদ শিরোনাম এমন-মহামারীর ৪ মাসেও রেমিটেন্স বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ, গার্মেন্টসে আশার আলো, রেমিটেন্স রিজার্ভের মতো রাজস্ব আদায়েও বিস্ময়, করোনা দুঃসময়েও মেঘা প্রকল্প থেমে নেই। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে এমন সংবাদে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। সঙ্কটেও বাংলাদেশের এমন অগ্রগতির কারণ কি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসী কিছু সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে বাজে প্রভাব থেকে মুক্ত রেখেছে। ঝুঁকি নিয়ে কারখানা খোলার ইতিবাচক ফলও এটা। সকল মহল থেকে বার বার বলা হচ্ছিল যেন দেশ পূর্ণ লাগডাউনে যায়। সরকারের ইচ্ছায় লগডাউনে শিথিলতা ছিল। গার্মেন্টস, কলকারখানা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথা বলছিলাম আমরা। দেশে পরিবহন চালু না রাখার কথাও বলা হচ্ছিল। ভিতিকর পরিস্থিতিতে সারা বিশ^ যখন লকডাউনে তখন আমাদের গার্মেন্টস, কলকারখানা চলেছে, পরিবহনও চালু করা হয়েছে। যার সুফল এখন পাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন আর হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন- ‘দশ বছর আগের আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান।’ কথাটা কিন্তু নিরেট সত্য। এ সময়ে আমাদের জীবন যাত্রারমান বেড়েছে, আমাদের সঙ্গতি বেড়েছে। উন্নয়নে, অর্থনীতিতে এগুচ্ছে দেশ। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্বপ্নের মেট্রোরেল হচ্ছে। পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের টাকায়। এটা চাট্টেখানি কথা নয়। মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে এটা আশাজাগানিয়া সংবাদ। কেন্দ্র্র্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে)। একক মাস হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিটেন্স এসেছিল চলতি বছরের জুলাইয়ে। ওই মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। চলতি বছরের অক্টোবওে পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছর অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে রীতিমতো ধস নামিয়েছে। অনেক দেশেরই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও করোনা আঘাত হেনেছে। রফতানি আয় কমে গিয়েছিল। রাজস্ব আদায়ের হার কমেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে। চাকরি হারিয়েছে লাখো মানুষ। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি পারবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যেতে- সৃষ্টি হয়েছিল এমন প্রশ্ন বা সন্দেহের। তা কেটেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এবং সরকারের যৌথ পর্যবেক্ষণে। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিন সূচকেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আশা করা যায়, ২০২৪ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বিদ্যুতে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। করোনার মধ্যেও বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি ছাড়া অন্যান্য খাতেও রফতানি বাড়ছে। বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৬৬টি দেশে। প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতিও মিলছে। লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের যে ১০টি উদীয়মান বাজারকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী গার্মেন্ট ও কৃষিভিত্তিক পণ্য রফতানি করে দেশটি ক্রমেই জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ব্লুমবার্গ বলছে, বাংলাদেশ হতে পারে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনই তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার এমন আশাবাদেরই প্রতিফলন দেখা যায় বাংলাদেশের দৃশ্যমান অগ্রগতিতে। শুধু অর্থনৈতিক অগ্রগতি নয়, জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, শিক্ষা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হরাস, নারীর উন্নয়নসহ সামাজিক নানা সূচকেও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। ফলে বাংলাদেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে।
×