ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু টি২০তে মুস্তাফিজের ছোঁয়ায় দুর্বার শরিফুল

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধু টি২০তে মুস্তাফিজের ছোঁয়ায় দুর্বার শরিফুল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আগের ১২ ম্যাচে মাত্র ৭ উইকেট পেয়েছিলেন, পরবর্তী ৭ উইকেট নেয়ার জন্য খেলতে হয়েছে মাত্র ৪ ম্যাচ। ক্রমেই নিজের দক্ষতা ও সামর্থ্যরে উন্নতি করছেন উদীয়মান তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ১৯ বছর বয়সী এ যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য গত দুই মাসে বদলে গেছেন অনেকখানি, হয়ে উঠেছেন অনেক বেশি কার্যকর। এর কারণ মূলত গত দুই মাস জাতীয় দলের অপরিহার্য বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সাহচর্য। অক্টোবর মাসে হওয়া বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে দু’জন ছিলেন তামিম একাদশে। তখন থেকেই অগ্রজ মুস্তাফিজের কাছ থেকে দীক্ষা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়া এবং সরাসরি দেখা ও একসঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন শরিফুল। দু’জনই বাঁহাতি, বোলিং এ্যাকশনেও আছে সামঞ্জস্য। ২৫ বছর বয়সী মুস্তাফিজ ৬ বছরের বড়, কিন্তু উচ্চতায় ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে শরিফুল আবার ৪ ইঞ্চি লম্বা। দু’জন চলমান বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপেও আছেন একই দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামে। টানা একসঙ্গে থাকার সুফল পাচ্ছেন দু’জনই, উইকেট শিকারের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন পরস্পরের সঙ্গেই। চলতি আসরে সফলতম এ দুই পেসারের শিকার ৪ ম্যাচে ১৯ উইকেট। মুস্তাফিজ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য। আর শরিফুল লাইমলাইটে এসেছেন এ বছর যুব বিশ্বকাপ খেলে। মর্যাদার বিশ্বকাপ ঘরে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম অবদান রেখেছেন এ বাঁহাতি। অথচ ৩ বছর আগে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, ২ বছর আগে লিস্ট ‘এ’ এবং স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল শরিফুলের। তবে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে গেছে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে। সেখানে তিনি তামিম একাদশে সাহচর্য পেয়েছেন জাতীয় দলের দুই নির্ভরযোগ্য পেসার মুস্তাফিজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। প্রায় আড়াই সপ্তাহ একসথে কাটিয়েছেন তারা একই দলে। শরিফুল তখন জানিয়েছিলেন মুস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিন তাকে অনেক কিছুতেই সহায়তা করছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সেটা কাজে লাগিয়ে ওই আসরেই একটি ম্যাচে ৪ উইকেট তুলে নেন শরিফুল। দুই বাঁহাতি দেশের দুই প্রান্তের বাসিন্দা- মুস্তাফিজের উত্থান সাতক্ষীরা থেকে আর শরিফুল পঞ্চগড়ের। তাদের একসূত্রে গেঁথে ফেলেছে ক্রিকেট। প্রেসিডেন্টস কাপে তাদের জুটিটা দারুণ জমে গিয়েছিল বলেই হয়তো এবার বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপেও তারা একই দলে সুযোগ পেয়েছেন। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য বারবার দুর্যোগ বয়ে আনছেন তারা। মুস্তাফিজ চলতি আসরে ৪ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে। সমান ম্যাচে ৭ উইকেট শরিফুলের। দুই বাঁহাতি গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে টানা ৪ জয় পাওয়ার পেছনে অনেক বড় অবদান রেখেছেন। শরিফুল স্ট্রাইক বোলারে পরিণত হয়েছেন, ইনিংসের শুরুটা তিনিই করেন। আর মুস্তাফিজ বোলিংয়ে আসেন মূলত ডেথ ওভারগুলোয়। এ বিষয়টাও দেখে শিখতে পারছেন শরিফুল, অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে তার। কথা, পরামর্শের সঙ্গে যোগ হয়েছে সরাসরি প্রয়োগ দেখার সুযোগ। তিনি বলেন, ‘দু’জনের মধ্যে ভাল একটা প্রতিযোগিতা চলছে। ওনার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করা যায়, উনি সবকিছু বুঝিয়ে দেন। খুব ভাল লাগে, খুব মজা লাগে ওনার সঙ্গে বোলিং করতে।’ তাই ক্রমেই উন্নতি করছেন শরিফুল, এগিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার বেগে। তার ছোট্ট সিনিয়র ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলেই তা পরিষ্কার। আগে ১২ টি২০ ম্যাচে ৭ উইকেট নেয়া শরিফুল সর্বশেষ ৪ ম্যাচেই নিয়েছেন ৭ উইকেট। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে দুই ম্যাচে আগেই ২৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন শরিফুল। বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে তার ইকোনমি ৬.৯২ ও গড় ১৩.৮৫! যে কোন পেসারের জন্যই এ ফরমেটে এটি দুর্দান্ত নৈপুণ্য। কিন্তু মুস্তাফিজকে দেখে হয়তো আরও ভাল করার অনুপ্রেরণা পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। কারণ মুস্তাফিজের ইকোনমি ৫.১৪ এবং গড় ৬.৫০। চার-ছক্কার ম্যাচ টি২০তে মুস্তাফিজের বোলিং বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ‘ডট বল’। এখন শরিফুল সেই ‘ডট বলের’ প্রতিযোগিতা করছেন অগ্রজ মুস্তাফিজের সঙ্গে। শরিফুল বলেন, ‘পেস বোলাররা আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পছন্দ করে, আমি নতুন বলে বোলিং করাটা উপভোগ করছি। লক্ষ্য থাকে ডট বল করা, রান চেক দেয়া। টি২০ খেলায় যত ডট বল করব, টিমের জন্য তত ভাল।’
×