ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভিডিও মামলা বন্ধ হওয়ায় যানজট বিশৃঙ্খলা বেড়েছে

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

ভিডিও মামলা বন্ধ হওয়ায় যানজট বিশৃঙ্খলা বেড়েছে

আজাদ সুলায়মান ॥ হঠাৎ ভিডিও মামলা বন্ধ করে দেয়ায় বেড়ে গেছে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা। প্রতিদিনই রাজধানীতে চোখে পড়ছে যানজটসহ যানবাহনের অরাজক চিত্র। অথচ অনেক ভেবেচিন্তে রাজধানীতে চালু করা হয়েছিল ভিডিও মামলা। এতে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছিল। কিন্তু হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সেই আগের মতোই তথৈবৈচ। এতে বেড়ে গেছে যানজটসহ বিশৃঙ্খলা। অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে- এটা সাময়িক। আপাতত করোনা তাণ্ডবের দরুন গত এপ্রিল থেকে ভিডিও মামলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই ভিডিও মামলা চালু করা হবে। উল্লেখ্য, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানজট কমানো ও যত্রতত্র গাড়ি পার্র্কিং ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশ ভিডিও মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিগত ২০১৬ সালের জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিডিও মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। ডিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগে (ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম) এটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এই মামলার অংশ হিসেবে অবৈধ পার্কিং, উল্টোপথে চলা বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্টরা যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিও করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে না পারলেও জরিমানার চিঠি মালিকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হতো। সে মামলার খবর যেত বিআরটিএর সার্ভারেও। চালক বা মালিক জারিমানা না দিলে ফিটনেস ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ ছিল। এতে রীতিমতো চালক ও মালিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক নেমে এসেছিল। অবৈধ গাড়ি পার্কিং করার জন্য কে কখন ধরা খায় সেজন্য চালকও সতর্ক থাকতেন। প্রভাবশালী মালিকরাও গাড়ির চালককে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং না করার পরামর্শ দিতেন। এ কারণে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি চোখে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশের এ ভিডিও মামলা কার্যক্রমে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল বলে বেশিরভাগ চালকদেরই অভিমত। কিন্তু সম্প্রতি তাতে ছেদ পড়েছে। এতে দেখা যায়-হঠাৎ করে রাজধানীজুড়ে যেখানে সেখানে এলোপাতাড়ি পার্কিং ও মূল সড়কের পাশে গাড়ি ফেলে রেখে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এ বিষয়ে গত দু’সপ্তাহ একটানা রাজধানীর ব্যস্তময় মতিঝিল গুলিস্তান ফার্মগেট বিমানবন্দর ও মিরপুর এলাকায় প্রচণ্ড যানজট। যে সময় যানজট লাগার কথা নয় সে সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এ সময়ে ট্রাফিককে দেখা গেছে আগের মতোই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে। কোথাও কোন ভিডিও মামলা চোখে পড়েনি। শুধু এ কারণেই আগের মতো অরাজক পরিস্থিতি নেমে আসে সড়কে। এটাই মূলত যানজটের কারণ। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়-এয়ারপোর্ট গোলচক্করে প্রায়ই যানবাহনের অবাধ পার্কিং। যেখানে পার্কিং করা নিষিদ্ধ সেখানেও অহরহ বাস, মিনিবাস ও অন্যান্য যানের অবস্থান। ওভারব্রিজের নিচে পশ্চিম পাশে পার্কিং করা একটা গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- ‘উনি যাত্রী আনতে টার্মিনালের ভেতরে গেছেন। সেই এক ঘণ্টা ধরে এখানে রেখে গেছেন। এরই মাঝে একবার ট্রাফিক কনস্টেবল এসে গাড়ি নিয়ে এখান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ করে গেছেন। আমি অনুনয় বিনয় করে আর কটা মিনিট থাকার জন্য কথা বলি। তিনি আবার আসলে তো মামলা দিবেন। এখন কি করা ? কোথায় যাব। বিমানবন্দরের দক্ষিণে বলাকা ভবনের পাশে দেখা গেছে মূল সড়কের ওপর বেশকটা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। তারা লাইন ধরে একটার পিছে আরেকটা পার্কিং করে ড্রাইভার বসে আছেন। একটার ভেতর দেখা গেল চালক নেই। অপরটার চালক ঘুমাচ্ছেন। দুটোর চালক ফোনে কথা বলতে দেখা গেছে মালিককে অনুরোধ করে তাড়তাড়ি আসার জন্য। তাদের একজন মালেক বলেন- স্যার গাড়িটা এখানে রেখেই এয়ারপোর্ট গেছেন তার ছেলেকে রিসিভ করতে। গাড়ি নিয়ে গেলে সেখানকার পার্কিংয়েই রাখতে পারতেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন- সেখানে তো ঘণ্টা হিসেবে টাকা আদায় করে। গাড়ি বের করতেও সময় লাগে। এসব কারণে এখানেই নিরাপদ। টাকাও লাগে না, সময়ও লাগে না। একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে গুলশান বনানী ও কাওরান বাজারে। এখানকার বাণিজ্যিক এলাকায় ভরদুপুরে গাড়ি রাখার যে দৃশ্য তা সামলাতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। অথচ আগে এসব এলাকায়ও ভিডিও মামলার ভয়ে কেউ গাড়ি রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন না। এখন এখানে পুলিশী কার্যক্রম একেবারেই ঢিলে ঢালা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু মামলা হয়। কিছু গাড়িতে রেকার লাগানো হয়। তারপরও পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। মতিঝিলের অবস্থা আরও খারাপ। মূল সড়কের ওপরই সারিবদ্ধভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। সপ্তাহের ৫ দিনই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে যারা চালক তাদের যুক্তি হচ্ছে- নগরে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কারও বাড়ি বা অফিসে গেলে ফটকে নির্দিষ্ট বোর্ডে লেখা থাকে-অতিথিদের গাড়ি বাইরে রাখুন। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কে গাড়ি পার্কিং করতে হয়। বাণিজ্যিক ও আবাসিক উভয় এলাকার সড়কেই এমন চিত্র। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহবুব বলেন- সড়কে বিশৃঙ্খলা আগের চেয়ে বেড়েছে এটা বলা যাবে না। সব সময় যা ছিল এখনও তাই আছে। তবে ভিডিও মামলার সময় পরিবেশ আরও ভাল ছিল। মানুষ ভয়েই গাড়ি ফেলে রেখে কোথাও যেত না। কিন্তু তাই বলে আমরা মামলা বন্ধ করিনি। প্রতিদিনই মামলা করা হচ্ছে অসংখ্য। আগের চেয়ে বেশিও হচ্ছে। তবে করোনার কারণে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আবার চালু হতে পারে। এ বিষয়ে ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, খুব শীঘ্রই চালু করা হবে ভিডিও মামলা। কারণ এটা বেশ কার্যকর একটা পদক্ষেপ। আগে গড়ে প্রতিমাসে ২৫০টি মামলা হতো। এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট সার্জেন্টরা নিয়মিত পরিদর্শনের ওপর থাকতেন। তাদের ভিডিও বা ছবি তোলার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ এবং আলাদা ক্যামেরা দেয়া হয়েছিল। সেগুলো সবই রয়ে গেছে। এটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। সময় সুযোগ বুঝে আবারও চালু করা হবে।
×