ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল ভেঙ্গে গেছে রোহিঙ্গাদের

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

ভুল ভেঙ্গে গেছে রোহিঙ্গাদের

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) স্ট্যান্ডার্ড ক্লাস্টারের নিয়ম মেনে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৩.৯ বর্গমিটারের আবাসস্থল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬৪২ রোহিঙ্গার স্থানান্তরের প্রথম ধাপ শেষ করেছে নৌবাহিনী। শনিবার সকালে নৌবাহিনীর পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে আসা রোহিঙ্গারা নিরাপদ আবাসন দেখে খুশি। তাদের দূর থেকে ভাসানচর সম্পর্কে যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল শুক্রবার এখানে এসে সে ধারণাটি ভেঙ্গে যায়। ইতোমধ্যে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। একই সঙ্গে তাদের এক মাসের বিভিন্ন খাবার সামগ্রীর সহায়তা প্রদান করা হবে। তাদের কর্মসংস্থানের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের সকল বিষয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে শুরু করে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প কর্মকর্তা রয়েছেন তারা তাদের সর্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। বাকি রোহিঙ্গাদেরও নিয়ে আসা হবে। এটা আমাদের প্রথম ধাপ ছিল। এর আগে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা জীবন ও জীবিকার জন্য শতভাগ প্রস্তুত করা হয়েছিল ভাসানচর। নিরাপদ আবাসন ও জীবনযাপনের জন্য প্রায় সব উপাদানই রাখা হয়েছে এখানে। তৈরি করা হয়েছে আবাসিক ভবন, বাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিক, থানা, অফিস সেন্টার। জীবিকা নির্বাহের জন্য রয়েছে পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালনসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে তারা ৩টি জাহাজে করে নারী-পুরুষ,শিশুসহ ভাসান চরে এসে পৌঁছায়। এর আগে, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে যাত্রা করে ১ হাজার ৬৫২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয় ৩টি জাহাজ। দুটি অত্যাধুনিক হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু ॥ হাতিয়া থেকে ইসমাইল হোসেন কিরন জানান, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, উন্নতমানের এক্সরে মিশিন, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত সুবিধা, বিদেশ থেকে ক্রয় করা ইসিজি মেশিন, পর্যাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ৩২ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করল ২০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল। যা স্থাপন করা হয়েছে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে তোলা আবাসস্থল ভাসানচরে। রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত হাসপাতাল-১ এর দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডবয় মিরাজ উদ্দিন জানান, শুক্রবার ২টার সময় ভাসানচর অবস্থান করার পর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোহিঙ্গা তাদের স্বাভাবিক জ্বর ও সর্দি নিয়ে এই দুটি হাসপাতাল-১ এর জরুরী বিভাগ থেকে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন । শনিবার সকালে মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতাল-১ এ চিকিৎসা নিতে আসেন মোঃ আনাস (৫৬) নামে একজন । তিনি বসবাস করেন রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ১৩ নং ক্লাস্টারের ৭নং হাউসে। চিকিৎসা নিতে আসা আনাস হাসপাতালের উন্নত পরিবেশ দেখে অনেক খুশি। আলাপকালে আনাস আরও জানান, কুতুপালং থেকে ভাসানচরের পরিবেশ অনেক ভাল। এখানে খোলামেলা পরিবশে তাদের অনেক ভাল লাগে। আনাসের মতো ৩নং ক্লাস্টারের ১০ নং হাউসে বসবাস করা জানিয়া (১৯), ২০ নং ক্লাস্টারের ১০ নং হাউজের মোঃ আলম (৪৫) ও ১৪ নং ক্লাস্টারের ৭ নং হাউসের জাহানারা (২৪) আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে নতুন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। হাসপাতাল দুটির দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে ভাসানচরের হাসপাতালের অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করছি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে দুটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বা যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে তাতে জটিল অপারেশন সফলতার সঙ্গে করা যাবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি ও সিজারের খুব ভাল ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ২০ শয্যার এই দুটি হাসপাতালে সরকারী একজন, এনজিও এর দুইজনসহ ৩জন মেডিক্যাল অফিসার কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ৬ জনসহ বিভিন্ন পদে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ভাসানচরের হাসপাতালের দায়িত্বরত অফিস সহকারী আকরাম হোসেন । এছাড়াও রয়েছে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে রোহিঙ্গাদের দেয়া হবে প্রাথমিক চিকিৎসা। এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে তারা পাবে ৩০ প্রকারে ওষুধ। এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান, ভাসানচরে এই দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম শুক্রবার থেকে চালু করা হয়েছে। এখানে সরকারী ও এনজিওদের মেডিক্যাল অফিসারগণ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া যে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে তাতে অচিরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। শুক্রবার সকালে নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে ১ হাজার ৬শত ৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুপুরে এসে পৌঁছে তারা। প্রথম ধাপে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ১৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০ জন, পুরুষ ৩৬৮ জন, নারী ৪৬৪ জন রয়েছে । নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ভাসানচরে আসা সকল রোহিঙ্গার প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর ওয়্যারহাউসে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফিং করেন। ব্রিফিং শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ৭,৮,৯,১০,১৪ ও ২০ নম্বর ক্লাস্টারে তাদের রাখা হয়।
×