ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই, বরাদ্দ তুলে আত্মসাত

প্রকাশিত: ২০:০০, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই, বরাদ্দ তুলে আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ৪ ডিসেম্বর ॥ প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই। অথচ বরাদ্দ উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএনএম জাহাঙ্গীর হোসেন পটুয়াখালীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান, পিআইওসহ প্রকল্প কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জেলা ও দায়রা জজ রোকসানা পারভীন মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দাশপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড খাজুরবাড়িয়া সুলতান সিকদার বাড়ি হতে লোকমান সিকদার বাড়ি অভিমুখ রাস্তার পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি টন চালের মূল্য ৪৩ হাজার ৮৮৬ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হলেন আতিকুর রহমান ওরফে মোহন। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোথাও এমন সড়কের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হানিফ সিকদার ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য সালমা মরিয়ম অভিন্নভাবে বলেন, ‘ওই নামে কোন সড়ক নেই। আর সুলতান সিকদার ও লোকমান সিকদার নামে ওই ওয়ার্ডে কোন ব্যক্তি নেই। এটি একটি ভুয়া প্রকল্প।’ একই কথা বলেন, দাশপাড়া ইউপির দফাদার মোঃ ইউনুচ জোমাদ্দার। একই ওয়ার্ডে বলরাম ধূপীর বাড়ি হতে আসমত আলী মুন্সির বাড়ির অভিমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য ১৫ টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি টন গমের মূল্য ৩১ হাজার ৩৭৯ টাকা। সড়কটিতে নামমাত্র কাজ হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সিংহভাগ বরাদ্দ আত্মসাত করা হয়েছে। দাশপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জোনাব আলী মৃধা বাড়ি হতে সাইড বেড়ি অভিমুখী রাস্তার পুনর্নির্মাণের জন্য ৯ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। লুৎফর রহমান মৃধা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিগত সাত-আট বছরে এই সড়কে কোন মাটির কাজ করা হয়নি।’একই কথা বলেন মোঃ ইয়াছিন নামে এক ব্যক্তি। সরেজমিনেও তাদের বক্তব্যের প্রমাণ মিলেছে। ওই রাস্তার কোন কাজ করা হয়নি। একই ওয়ার্ডের কাজী বাড়ি হতে আনছার খলিফার বাড়ি অভিমুখী রাস্তার পুনর্নির্মাণের জন্য ১৫ টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্রকল্পটি ও বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হলেন আতিকুর রহমান ওরফে মোহন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি জানান, এই সড়কের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। এ সড়কটিতে নামমাত্র কাজ হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প ববাস্তবায়ন কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, ‘কাজ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।’ দাশপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এএনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্পের নামে এবং একাধিক প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দকৃত চাল ও গম আত্মসাত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপির সদস্যদরা রেজুল্যুশন করে আমাকে এ বিষয়ে মামলা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই আমি গত ১২ নবেম্বর পটুয়াখালীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা করেছি।’ এ বিষয়ে আতিকুর রহমান ওরফে মোহন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। কাজ করেই গম ও চাল উত্তোলন করেছি।’ তিনি বরাদ্দের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ কাজ করেছেন বলে দাবি করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস বলেন, মামলার বিষয়ে আমি জানিনা। তবে কাজ না করে বরাদ্দকৃত চাল কিংবা গম আত্মসাত করার কোন সুযোগ নেই। কাজ করার পরেই চাল কিংবা গম ছাড়করণ করা হয়। একই ব্যক্তি দুইয়ের অধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হলেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ ডিও লেটারের মাধ্যমে কমিটির অনুমোদন দেন। তাই এখানে আমার কিছু করার ছিলনা।
×