ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা ভেবে দেখা দরকার। টেকসই উন্নয়নের জন্য সুরক্ষিত জীবনযাপনের মূলধারায় বিশেষ এ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে করোনাকালীন সঙ্কট থেকে উত্তরণে তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিজএবলড রিহ্যাবিলিটেশন এ্যান্ড রিসার্চ এসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। লিলিয়ানা ফনস, কনসার্ন বাংলাদেশ, ইউকে এইড, সিবিএম বাংলাদেশের সহযোগিতায় ডিআরআরএ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর করোনাকালীন নানা দুর্দশা, সমস্যা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। সভাপতিত্ব করেন ডিআরআরএর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, কনসার্নড বাংলাদেশের ডেপুটি টিম লিডার মেরি রশিদ, দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, কবি ও লেখক কামরুল ইসলাম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধিত্ব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের অধিকার লঙ্ঘনের মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য। সমাজের সর্বস্তরে এরূপ একটি বিশ্বাস আছে যে, প্রতিবন্ধিত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি, যা প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অংশগ্রহণের সুযোগকে প্রভাবিত করে। মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, উপযুক্ত সেবা, চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ পেলে প্রতিবন্ধীরাও সামাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর বিশেষ চাহিদাপূরণে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে আন্তরিক হতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সকল আর্থসামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমস্যার শেষ নেই। ঘরে ও বাইরে সর্বত্রই তারা অবহেলিত। বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য কোন পাঠ্যক্রম নেই। সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসাসেবা পান না প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। হাসপাতালগুলোতে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। অনেক সময় বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষকে অন্যান্য অসুস্থ মানুষের কাতারে ফেলে দেয়া হয়। যার মূল কারণ সচেতনতার অভাব। যাঁরা আইন-নীতি করছেন তাঁরা সচেতন নন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা ভালভাবে বিষয়টা বোঝেন না বা উপলব্ধি করেন না। সহযোগিতা না পাওয়ায় চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বড় অংশ। সমন্বিত উদ্যোগ, প্রতিবন্ধীবান্ধব আইনের বাস্তবায়ন, চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণ, চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি বাজেটে বরাদ্দ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। ডিআরআরএর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা ভেবে দেখা দরকার। টেকসই উন্নয়নের জন্য সুরক্ষিত জীবনযাপনের মূলধারায় বিশেষ এ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই আপনজন। কাজেই তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া, সমাজে তাদের একটা সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করা এবং তাদের আরও সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া-এটাই আমাদের কর্তব্য। প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
×