ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা সহায়তার নতুন প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর

’২৪ সালের নির্বাচনে ফের প্রার্থী হতে পারেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

’২৪ সালের নির্বাচনে ফের প্রার্থী হতে পারেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের প্রার্থী হতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ফক্স নিউজ, ইউএসএ টুডে ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও সমর্থকদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, চারটি বছর খুব চমৎকার ছিল। আরও চার বছরের জন্য চেষ্টা করছি আমরা। না হলে, চার বছরের মধ্যে আবার আমাদের দেখা হবে। অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন বলে সেখানে উপস্থিত রিপাবলিকান পার্টির সদস্য নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হলেও ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করেননি বরং নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের জন্য আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফের দাঁড়ানোর সম্ভবনার বিষয়ে এর আগ পর্যন্ত চুপ ছিলেন ট্রাম্প। ২৬ নবেম্বর, ‘থ্যাংসগিভিং ডে’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আমি এখনই ২০২৪ নিয়ে কথা বলতে চাই না। কিন্তু চার বছর পর তিনি আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, রুদ্ধদ্বার কক্ষে ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের এমনটি বলেছিলেন বলে ফক্স নিউজের প্রধান হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা জন রবার্টস তার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলেন। ২০ জানুয়ারি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগেই বা ওই অনুষ্ঠান চলাকালে ট্রাম্প ফের চার বছর পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ ওই বিতর্ক সম্পর্কে অবহিত একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ২০ জানুয়ারি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে বরং ওই সময়ই ২০২৪ সালের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন বলে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ট্রাম্প। তবে তখন এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনা সহায়তার নতুন প্রস্তাবে সই করেছেন ট্রাম্প ॥ করোনাকালীন সহায়তা নিয়ে মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেলের আনা এক প্রস্তাবে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ কথা জানান। তবে এটি পাস করতে ভোটাভুটির জন্য ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেন, ট্রাম্প মিচ ম্যাককনেলের ওই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। আগের দিন গত মঙ্গলবার ৯০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের দ্বিদলীয় এক সহায়তা প্যাকেজের প্রস্তাব নাকচ করেন ট্রাম্প। ম্যাককনেলের নতুন খসড়া প্রস্তাবের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সিনেটে ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা চাক শুমার। তিনি বলেছেন, ম্যাককনেল এই প্রস্তাবের জন্য ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতাদের সমর্থন চাননি। অথচ ডেমোক্র্যাটরাই প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। সিনেটের রিপাবলিকান পার্টির একটি সূত্র বলেছে, নতুন প্রস্তাবে ৩৩ হাজার ২৭০ কোটি ডলার ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে ঋণ বা মঞ্জুরি হিসেবে রাখার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ক্যাপিটল হিলে মনুচিন সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাককনেল মঙ্গলবার ওই প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে সই করবেন। এরপর আমরা এটি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাব। অর্থমন্ত্রী মনুচিন ও হোয়াইট হাউসের চীফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস গত সোমবার ম্যাককনেল ও প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কোভিড-১৯ সহায়তার বিষয়টি তোলেন। তারা এমন এক প্রস্তাবের ওপর মনোযোগ দেন, যা আইন হিসেবে পাস করার লক্ষ্যে সই করতে পারেন ট্রাম্প। ম্যাককনেল ৫০ হাজার কোটি ডলারের একটি প্রস্তাব পাসে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু তা নাকচ করে দেন ডেমোক্র্যাটরা। ছেলেমেয়ে জামাতার দায়মুক্তি চান ট্রাম্প ॥ শেষ মুহূর্তে নিজের ছেলেমেয়ে- ট্রাম্প জুনিয়র ও ইভাঙ্কা, জামাতা ও হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জারেড কুশনার ও ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি গিলানিকে দায়মুক্তি দিয়ে ও ক্ষমা করে যেতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ জন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এমন তথ্য ছড়ানোর কারিগর গিলানি নিজেও ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ‘ঘুষের বিনিময়ে’ অপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়। ফেডারেল কোর্ট এ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। ‘ব্রাইবারি ফর পারডন’ নামের ওই তদন্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র খুব বেশি সম্পাদনা করে সামান্য প্রকাশ করা হয়েছে। নিজের ছেলেমেয়ে, জামাতা ও আইনজীবীকে ক্ষমা করা তথা দায়মুক্তি দিয়ে যাওয়া যায় কিনা, বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে অবহিত দুই ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আলোচনায় ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিচার বিভাগ ট্রাম্পকে উচিত শাস্তি দিতে পারে তার ছেলেমেয়েদের টার্গেট করার মাধ্যমে। ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় হিলারি ক্লিনটনের প্রচার সংক্রান্ত তথ্য রাশিয়াকে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তদন্ত করছেন রবার্ট মুলার। তবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি কখনও। অন্যদিকে কুশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের নিরাপত্তা ছাড়ের জন্য বিদেশীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের নামে যোগাযোগ করেছেন এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এরিক ট্রাম্প ও ইভাঙ্কার বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগ কি নিয়ে তা স্পষ্ট নয়। ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কফিনে আরও একটি পেরেক ॥ নির্বাচনের ফল নিয়ে ট্রাম্প যে ধূম্রজালের সৃষ্টি করেছেন, তাতে বড় ধরনের হানাহানি হতে পারে, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জর্জিয়ার জ্যেষ্ঠ নির্বাচনী কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়েল স্টারলিং। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে যেকোন সময় মানুষ খুন হতে পারে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জর্জিয়ার দুই রিপাবলিকান সিনেটরের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে শারীরিক আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে, আপনারা কেউই তার নিন্দা করেননি। দয়া করে সহিংস কাজে উসকানি দেয়া বন্ধ করুন। যারা ক্ষমতা গ্রহণে আগ্রহী, তাদের পক্ষে এই সামান্য কাজ করা খুব কঠিন হওয়া উচিত নয়। নির্বাচনে কারচুপি হয়নি, উইলিয়াম বারের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের বাদ-প্রতিবাদ বন্ধ হবে এমন কথা ভাবার কোন কারণ নেই। এর একটি সম্ভাব্য কারণ, কারচুপির বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে ট্রাম্প তহবিল সংগ্রহ অভিযানে ব্যস্ত রয়েছেন। তার জন্য এটি একটি চমৎকার ‘বিজনেস অপরচুনিটি’। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর থেকে ট্রাম্প শিবির ১৭ কোটি মার্কিন ডলার চাঁদা তুলেছে। অধিকাংশ অর্থই সাধারণ ট্রাম্প সমর্থকদের কাছ থেকে এসেছে, যারা বিশ্বাস করে ভোট চুরির মাধ্যমে তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্টকে ঠকানোর চেষ্টা হচ্ছে। আইনী লড়াইয়ের নামে তোলা হলেও এই তহবিলের সিংহভাগই যাবে ট্রাম্প প্রতিষ্ঠিত একটি পলিটিক্যাল এ্যাকশন বা রাজনৈতিক কার্যক্রমবিষয়ক কমিটির খাতে। নিজেকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রাখতে ট্রাম্প এই তহবিল তার ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবেন। ‘আপনাদের হয়ে লড়তে আমাকে সাহায্য করুন,’ এই ভাষায় চাঁদা চেয়ে ট্রাম্প শিবির থেকে অসংখ্য ই-মেইল ছাড়া হয়েছে। অন্য একটি ই-মেইলে বলা হয়েছে, আগের চেয়েও এখন আপনাদের আমার বেশি প্রয়োজন। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, যেভাবে অর্থ আসছে তাতে ভোট কারচুপির দাবি মিথ্যা জানা সত্ত্বেও ট্রাম্প ও তার দলের কেউ সুর বদলের কোন প্রয়োজন দেখছেন না। ক্যাম্পেন লিগ্যাল সেন্টারের অন্যতম পরিচালক ব্রেনডান ফিশার বলেছেন, ‘ইলেকশন ডিফেন্স ফান্ড’-এর নামে যে চাঁদা তোলা হচ্ছে, তা আসলে ব্যবহৃত হবে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ঋণ মেটাতে ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায়। সিএনএনের এক ভাষ্যকার বলেছেন, এটা আসলে জোচ্চুরি, যা আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে।
×