ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফাখরিজাদেহ হত্যার জেরে আমিরাত যুবরাজকে এ হুমকি দেয় ইরান

আমিরাতে হামলার হুমকি

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

আমিরাতে হামলার হুমকি

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরাসরি হামলার হুমকি দিয়েছিল ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের বহুল প্রচারিত গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই অনলাইনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবরে বলা হয়েছে, ইরানের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার পর তেহরান আশঙ্কা করেছিল যে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানে হামলা করতে পারে। এ আশঙ্কায় ইরান থেকে সরাসরি আমিরাতের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন জায়েদকে ফোন করে এ হুমকি দেয়া হয়। মোহাম্মাদ বিন জায়েদের কয়েকটি ঘনিষ্ঠসূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই অনলাইন সংবাদটি ছেপেছে। খবর মিডল ইস্ট আই ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। ইরান মনে করে মোহসেন ফাখরিজাদেহকে ইসরাইল হত্যা করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ইরানে আকস্মিক হামলা চালাতে পারেন। এ আশঙ্কা থেকে ইরানী নেতারা সরাসরি আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্সকে ফোন করেন। ফোনে বলা হয়, ইরান আক্রান্ত হলে তারা সরাসরি আমিরাতে হামলা চালাবে। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ইরানের দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি সরকারী সূত্র জানিয়েছে, আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন জায়েদের সঙ্গে ইরানী নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওই ফোনে বলা হয়, আপনারা দ্রুত মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করুন। ওই ফোনের পরই মূলত আমিরাত গত রবিবার তড়িঘড়ি মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার নিন্দা করে। ইরান মোহাম্মাদ বিন জায়েদকে আরও জানায়, মার্কিন কর্তৃপক্ষ যদি খেয়ালের বশে ইরানের মাটিতে হামলা চালায় তবে এ অঞ্চল অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইরানের টার্গেট থেকে বাদ যাবে না। এদিকে পরমাণু সক্ষমতা বাড়াতে নতুন একটি আইন পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে জাতিসংঘের পরিদর্শন বন্ধ করতে এবং ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে আইনটি পাস করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, আগামী দুই মাসে ইরানের ওপর থেকে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে সরকার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সম্মত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে। শুক্রবার রাজধানী তেহরানের বাইরে রাস্তার পাশে রহস্যমূলক এক হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচীর স্থপতি মোহসেন ফাখরিজাদেহকে। ইরান বিশ্বাস করে, ইসরাইল এবং একটি নির্বাসিত একটি বিরোধী গোষ্ঠী রিমোট-কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত অস্ত্র ব্যবহার করে ফাখরিজাদেহকে হত্যা করেছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ফাখরিজাদেহর। তবে দেশটির সরকার বারবারই বলে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। পরমাণু অস্ত্র যাতে উৎপাদন করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বরাবরই নানা ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে আসছে দেশটি। ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোকে দুই মাস সময় দেয়া হবে দেশটির তেল এবং অর্থনৈতিক খাতের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে এলে ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনঃআরোপ করা হয়। এই সময়ের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে সরকার ইউরেনিয়াম উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়াবে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসাবে যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কাজ করবে। দেশটির নাতান্জ এবং ফর্দো পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে এসব পদক্ষেপ নেয়া হবে। আর এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেয়া হবে।
×