ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকগুলোকে দ্রুত অর্থছাড়ের পরামর্শ পরিকল্পনামন্ত্রীর

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর আভাস

প্রকাশিত: ১৯:২১, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর আভাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সফলভাবে মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর আভাস দেয়া হয়েছে। প্যাকেজের আওতা বাড়িয়ে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুজ্জীবিত ও কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে। এছাড়া ২১ প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় করতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আশা করা হচ্ছে, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এবার ব্যাংক আন্তরিকতার সঙ্গে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এড়িয়ে আসবে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ উত্তীর্ণ, কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা, করোনা মোকাবেলায় টিকা আমদানি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা প্যাকেজে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের দ্বিতীয় সভা ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় করোনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন বক্তারা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রণালয়েল সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। প্যানেল আলোচক হিসেবে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. ফজলে কবির, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. ফজলে কবির, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল ও এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ। এম এ মান্নান বলেন, করোনা মহামারির জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ থেকে অনেকেই সহায়তা পাচ্ছে না। এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু কেন যাচ্ছে না সে বিষয়ে অর্থসচিব ও গবর্নরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার প্রণোদনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়েছে। যদি কোন ব্যাংক কথা বা আইন না মানে তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার পর প্রণোদনা এটা সঠিক কোন মাধ্যম হতে পারে না। এজন্য প্রণোদনা ভর্তুকি কমিয়ে যদি পলিসি সার্পোট বেশি দেয়া ও সংস্কার করা যায় তাহলে আমাদের রির্টান বেশি হবে। আমাদের উদারতার মাধ্যমে এগিয়ে গিয়ে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। অর্থসচিব ও গবর্নরকে ইঙ্গিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থখাতের দুই প্রধান ব্যক্তি এখানে আছেন। আইন মানতে ব্যাংকগুলো বাধ্য, আইন আইনই তা অসম্মান করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলের মুল বার্তাটি হচ্ছে সাবলম্বী হওয়া। দেশের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু কাজ করতে হবে আমাদের। আমাদের সকলকে সার্বিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা জলো মিস টার্গেটিং। এর ফলে আমরা সার্বিকভাবে রির্টান কম পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এই জায়গাটা ঠিক করতে পারছে না। আমাদের এই প্রবণতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের এসএমই খাতে টাকা যাচ্ছে না কিন্তু কেনো? কারণ অধিকাংশ উদ্যোগক্তার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তারা পারিবারিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। তারা ব্যাংকে যায় না আসেও না। তাদের কে ব্যাংকের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল কাজে আসবে না। এম এ মান্নান বলেন, গত কয়েক বছর আমাদের অর্থনীতিতে সফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা যে কৌশলে সাফল্য অর্জন করেছি সেটা হলো প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা আমাদের অর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছি। ফলে করোনাকালেও আমাদের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক কাজ হয়েছে। কোভিডে আমাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ভাবে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু আমরা ভালো লড়াই করেছি। ফলে অতি তারাতারি উঠে দাঁড়িয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় দ্বিমুখী সংগ্রাম করেছি। মোকাবেলা করো তারপর আক্রমণ করো। প্রথম ধাপে আমরা মোকাবেলা করি, মৃত্যু কমাই, ইফেকশন কমাই ও সেবা দেই। এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবিকা, কাজ যাতে আরও নীচে না নেমে আসে সেবিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের করোনা মোকাবেলায় আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমাদের অক্সিজেনের যন্ত্রপাতি, ডাক্তার, সেবাখাতে সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা প্রশিক্ষণ এবং কৌশলে বড় কোন ব্যত্যয় না ঘটিয়ে আমাদের প্রস্তুতি রেখেছি। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় আমাদের অর্জিত সক্ষমতা ও জনগণের ঐক্য থাকলে করোনা মোকাবেলা করতে পারবো। তবে আমরা সার্বিকভাবে উৎরে যাবো বা গেছি সেটা বলবো না। খুটি নাটি কিছু ব্যর্থতা ছিল। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নয়ই। রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের করোনা কালেও রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে। এটা কেন বেড়ে সেই কারণ খুজে বের করতে হবে। আমাদের দুই শতাংশ প্রণোদনা ও ডিজিটাইলাজেশনের কারনে হয়েছে এর বাইরে আর কি আছে সেটা বের করতে। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মূল প্রবন্ধে অর্থসচিব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য কমে আসছিল কিন্তু করোনার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে করোনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে গার্মেন্টসখাতে চাকরি টিকিয়ে রাখতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়। সেখান থেকে শ্রমিকরা বেতন দেয়া হয়েছে। এতে করে দেশের প্রধান শিল্পখাতে চাকরির বাজার ঠিক ছিল। একই অবস্থা কৃষিতেও। কৃষিখাত পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি প্রণোদনা ছিল। আগামীতেও তা অব্যাহত রাখা হবে। প্রয়োজনে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. ফজলে কবির বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় করণে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যাংক টার্গেট অনুযায়ী ঋণ বিতরণে সক্ষম হয়েছে। তবে অনেক ব্যাংকের গাফিলতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাক থেকে এসব বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় করণে ব্যাংকগুলোর অনীহা রয়েছে। এই অনীহা দূর না হলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় তিনি সরকারকে প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার কারণে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে কিছুটা চাপে পড়লেও তা লক্ষ্যমাত্রা অনুযাযী ২০২৪ সালের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে। সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএই শিল্পখাতে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা প্রয়োজন। অর্থ যাতে দ্রুত ছাড়করণ করা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
×