ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডোপ টেস্টে ধরা রাজশাহী জেলা পুলিশের চার সদস্য

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

ডোপ টেস্টে ধরা রাজশাহী জেলা পুলিশের চার সদস্য

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ডোপ টেস্টে রাজশাহী জেলা পুলিশের চারজন কনস্টেবল মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কীট না পাওয়ার কারণে রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) এখনও সন্দেহভাজনদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের আরও ৮ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে সেসব ফলাফলও ঢাকা থেকে রাজশাহীতে পৌঁছাবে। জেলা পুলিশের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় দেশের মধ্যে রাজশাহীর বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও বিভিন্ন ইউনিটগুলিতে কর্মরত পুলিশের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি অধিক। রাজশাহী জেলায় পুলিশের মাঝে মাদকাসক্তির হার অধিক বিবেচনায় ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ মতে, গত অক্টোবরে রাজশাহী জেলা পুলিশে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৭ সন্দেহভাজনের ডোপ টেস্ট করার পর চারজনকে শনাক্ত করা হয়। এই চারজনই বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল। ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্তসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, গত রবিাবর রাজশাহী জেলা পুলিশের আরও ৮ জনের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল রয়েছেন। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে এসব টেস্টের ফলাফলও জেলা পুলিশের হাতে আসবে। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে আরও কিছু সন্দেহভাজন পুলিশের ডোপ টেস্ট হবে। রাজশাহী পুলিশ হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে ডোপ টেস্ট কমিটি করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রথমে ফলাফল ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়ে থাকে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে ফলাফল জানানো হচ্ছে। এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি রাজশাহীর প্রতিটি থানা ও ফাঁড়িসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে। মাদকাসক্ত হিসেবে যারা সন্দেহভাজন তাদের নাম গোপনে তার কাছে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন থানার ওসি বা ইউনিট প্রধান অধীনস্ত কোন সন্দেহভাজনের বিষয়টি গোপন করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসপি বলেন, গণহারে সকলের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র যারা সন্দেহভাজন তাদেরই করা হচ্ছে। এদের মুখ, চোখ ও ঠোট-চোখ দেখেও অনেক সময় মাদকাসক্ত বলে সন্দেহভাজনদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। ডোপ টেস্টের সময় তাদের এসব লক্ষণও দেখা হচ্ছে। পুলিশের সুত্রগুলো বলছে, রাজশাহী সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পুলিশের অনেকের কাছে মাদক সহজলভ্য। তাই কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। এই সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। আবার অনেকেই মাদকের কারবারেও জড়িয়ে পড়েছেন। ইতিপুর্বে মাদক পাচারের সময় একাধিক পুলিশ সদস্য রাজশাহীতে গ্রেফতার হন। এদিকে জেলা পুলিশে ডোপ টেস্ট শুরু হলেও আরএমপিতে এখনো এই কার্যক্রম শুরু হয়নি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুশ জানান, আরএমপিতে ডোপ টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় কীট আসেনি। কীট এসে পৌঁছালে আরএমপিতেও মাদকাসক্ত পুলিশ শনাক্তে ডোপ টেস্ট শুরু করা হবে। কবে নাগাদ কীট আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সদর দফতর যখন সরবরাহ দেবে তখনই শুরু হবে। পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, রাজশাহী জেলা ও মহানগর পুলিশে কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা ও পুলিশ কনস্টেবল রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ফেনসিডিল ও ইয়াবার মতো কঠিন মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।আবার কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব পুলিশ সদস্য কেউ কেউ ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ঘুরেফিরে রাজশাহী জেলা থেকে মহানগরে আবার মহানগর থেকে জেলা পুলিশে পোস্টিং নিয়ে রাজশাহীতেই থাকছেন। মুলত তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও মাদক গ্রহণের অভিযোগ বেশি। আবার ডোপ টেস্টে ধরা পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই তবদির করে বদলি নিয়ে অন্য জেলায় চলে যাচ্ছেন।
×