ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আস্ফালনে নয় ॥ দেশ পরিচালিত হবে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ভিত্তিতে

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

আস্ফালনে নয় ॥ দেশ পরিচালিত হবে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ভিত্তিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে ধর্মবাদী অপশক্তির আস্ফালন রুখতে সকল অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। বৃহস্পতিবার ভাস্কর্য বিতর্কসহ সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ আহ্বান জানান। সকাল ১১ টায় ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে মেনন বলেন, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ধর্মবাদীরা ভাস্কর্যের বিরোধীতা করছে। অগণতান্ত্রিক অপশক্তি সব সময়ই ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ পরবর্তী সময়েও করা হয়েছে। এবারও ধর্ম বিতর্ককে সামনে আনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ সকল ভাস্কর্য বিরোধীতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৭২-এর সংবিধান, এমনকি বর্তমান সংবিধানের বিরোধী। তাই ধর্মবাদী অপশক্তিকে রুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সকলকে সোচ্চার কণ্ঠেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাদের যে অবস্থান, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী মেনন। সম্প্রতি খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম সহ বেশ কিছু ধর্মীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক তোলা হয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চাণ করে বলেছে, মসজিদের নগরীতে কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজেন ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। মৌলবাদী গোষ্টীর পক্ষ থেকে সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী এমন বক্তব্যের পরই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। দাবি ওঠেছে অপরাধীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, হেফাজতসহ ধর্মবাদীদের ভাষ্কর্য বিতর্ক তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করার কূট প্রচেষ্টা। বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ থেকে বিচ্যুত করে আবার পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়াই তাদের লক্ষ্য। তাই ধর্মবাদীদের শর্ত মেনে ও আস্ফালনে নয়, বাংলাদেশ পরিচালিত হবে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ভিত্তিতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিৎ করতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থানের পেছনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি মদদ দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন ফজলে হোসেন বাদশা। সে সময় জামাত-শিবির যেমন তাদের পেছন থেকে পরিচালনা করেছিল এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যেই তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তেমনি এখনও যে তারা সমর্থন করছে না, সেটা হলফ করে বলা যাবে না। ভাস্কর্য প্রসঙ্গে তাদের নীরবতাও তাদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধীতার অর্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরোধীতা। অপর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা, টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নেয়ার কথা বলাও আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রেও কোনো ছাড় দেয়ার অবকাশ নাই। ওয়ার্কার্স পার্টি আশা করে সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টি রাষ্ট্রযন্ত্র নয়, জনগণের ওপর নির্ভর করেই এই ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, এই একই ধর্মবাদী মহল লালন ও সুপ্রীম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাষ্কর্য নিয়ে তাদের চূড়ান্ত বিরোধীতা শুরু করেছিল। সেই সময়ের সরকার উভয় ক্ষেত্রে তাদের বিরোধীতাকে প্রশ্রয় দিয়ে ঐ সকল ভাষ্কর্য স্থাপন করা থেকে পিছিয়ে আসে। তাদের ঐ সাময়িক বিজয়ে সাহসী হয়ে তারা এখন খোদ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই অপশক্তিকে এখনই রুখে দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পলিটব্যুরোর সদস্য কামরূল আহসান। উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, ড. সুশান্ত দাস, নূর আহমদ বকুল, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন কুমার দত্ত চৌধুরী, হবিবর রহমান, মোস্তফা আলমগীর রতন, রফিকুল ইসলাম, বিকল্প সদস্য কিশোর রায়, শাহানা ফেরদৌসি লাকী, কাজী মাহমুদুল হক সেনা ও কন্ট্রোল কমিশন সদস্য আব্দুল হক।
×