ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধার জীবিকা নির্বাহ

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

ভ্যান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধার জীবিকা নির্বাহ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি জেলার গৌরনদী উপজেলার কান্ডপাশা গ্রামের অসহায় হারুন খলিফা (৭৪)। জীবন যুদ্ধে হেরে পরাজিত সৈনিক হিসেবে বৃদ্ধ বয়সেও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে হারুন খলিফাকে। তার সহযোদ্ধারা সবাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু হারুন খলিফার নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তিনি ভাতা পাচ্ছেন না। তাই বৃদ্ধ বয়সেও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হারুন খলিফা। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা, মরার আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম দেখতে চান। এ জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত কেরামত খলিফার পুত্র হারুন খলিফা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্থানীয় নলচিড়া গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা কালু খান, কান্ডপাশা গ্রামের কদম খান, মোফাজ্জেল বালী, আউয়াল প্যাদা, পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের আক্কাছ প্যাদা, বাসুদেবপাড়া গ্রামের কাঞ্চন প্যাদা সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য ভারত গমন করেন। হারুন খলিফা বলেন, ভারতের চব্বিশ পরগনার হাসনাবাদের আম্লানী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছি। ওই ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার আবুল কাসেম। প্রশিক্ষণ শেষে গৌরনদীর বাসুদেবপাড়া গ্রামের এচাহাক প্যাদার নেতৃতে ১৮ জনের একটি গ্রুপ দেশে ফিরে আমরা ৯নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার নিজাম উদ্দিনের সাথে যুক্ত হই। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহুর্তে আমরা নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে বরিশালের অবদা কলোনী, গৌরনদীর হোসনাবাদ, বাটাজোর, গৌরনদী কলেজ, কসবাসহ বিভিন্নস্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। দেশ স্বাধীনের একবছর পর জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়ে রিকসা চালানো শুরু করি। মুক্তিযোদ্ধা হারুন খলিফা বলেন, ২০০৩ সালে আমার বসত ঘর আগুনে পুড়ে যায়। যে কারণে আমার মুক্তিযোদ্ধার সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বিনষ্ট হয়। এছাড়া দীর্ঘ তিন যুগ ঢাকায় থাকার কারণে তিনি এলাকার সাথে তেমন একটা যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। যেকারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আমার নাম বাদ পরে যায়। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহু লোক যুদ্ধ না করে এমনকি প্রশিক্ষণ না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছে। অথচ হারুন খলিফা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও তার নাম তালিকায় নেই, তিনি ভাতা পাননা, এটা বড়ই কষ্টের কথা।
×