ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ভাসানচরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ২২:০৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

অবশেষে ভাসানচরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে অবশেষে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে সকল আয়োজন ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ বুধবার পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। তবে কক্সবাজারের সরকারী ও বিভিন্ন এনজিও দফতরসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অবশেষে আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার উখিয়া টেকনাফ থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়া পেছাতেও পারে। এতে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা নেই। সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন এনজিও। সূত্র জানিয়েছে, স্থানান্তরের এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে ৪ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা করা হলেও এখন তা আড়াই হাজার বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভাসানচর প্রকল্প পরিচালক নৌবাহিনী কর্মকর্তা কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বুধবার থেকে সপ্তাহান্তের যে কোন সময়ে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণের কথা জানাননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় ২২টি এনজিও সহযোগিতা দিচ্ছে। বুধবার জাতিসংঘের ঢাকাস্থ অফিসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে স্থানান্তর বিষয়ে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের যেন প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল ও হালনাগাদ তথ্য পায় এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার ওপর জাতিসংঘ গুরুত্বারোপ করছে। উল্লেখ্য, গত ২৮ নবেম্বর বিভিন্ন এনজিওসহ বেসরকারী পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনের জন্য সরকারের সুপরিকল্পিত আয়োজনে এসব প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেছেন, উন্নতমানের একটি আবাসিক এলাকায় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে তার সবই সেখানে রয়েছে। এসব প্রতিনিধি এখন ভাসানচরে কাজ করছেন। সঙ্গে নিয়েছেন টনে টনে খাদ্যসামগ্রী। রয়েছে মেডিক্যাল প্রতিনিধিগণ। সূত্র জানায়, স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হলে লাখখানেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। উখিয়া টেকনাফ থেকে ভাসানচরে নেয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রথমে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজযোগে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৪টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩১শ’ কোটি টাকায় ভাসানচরে নির্মিত হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আবাসস্থল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা এ দ্বীপটিকে বাসস্থানের উপযোগী করে অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে বেসামরিক প্রশাসনের জন্য আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের জন্য ভবন, মসজিদ, স্কুল ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ। এছাড়া আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এ চরে মহিষ, ভেড়া, কবুতর, হাঁস পালন শুরু করা হয়েছে। শাক সবজির আবাদও হচ্ছে। ধান চাষ হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। নির্মিত প্রতিটি প্লাস্টার হাউস ও শেল্টার স্টেশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত নক্সায় ভূমি থেকে চারফুট উঁচু করে ভবনসমূহ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাসানচরে এসব ক্লাস্টার হাউসে ১২টি করে ঘর, প্রতি ঘরে ১৬টি রুম নির্মাণ করা হয়েছে। সঙ্গে চারতলা বিশিষ্ট কম্পোজিট স্ট্রাকচারের শেল্টার স্টেশন করা হয়েছে, যা ২৬০ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড় সহনীয়। ভাসানচর প্রকল্পে ১ লাখ ১ হাজার ৩৬০ রোহিঙ্গা বসবাসের সংস্থান করা হয়েছে ইতোমধ্যে। সে হিসাবে নির্মিত হয়েছে গুচ্ছগ্রাম। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০ প্রতি ঘরে প্রতি পরিবারের ৪ জন করে মোট ১৬ পরিবার বসবাস করার উপযোগী করা হয়েছে। নারী পুরুষের জন্য আলাদা গোসলখানা, শৌচাগার ও রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদেশী প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের ক্ষেত্রে আলাদা আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ৩৬টি শেল্টারকে মোডিফাই করে দুটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। গত ২৮ নবেম্বর বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা ভাসানচর প্রকল্প পরিদর্শন শেষে জানিয়েছেন, এ প্রকল্প নিয়ে যা ধারণা করা হয়েছিল তারচেয়ে আরও কয়েক ধাপ ওপরে রয়েছে এর কর্মকাণ্ড। শেল্টারগুলো নিঃসন্দেহে ভালমানের। এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিদল ভাসানচরের পরিবেশ ও বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের চেয়ে ভাসানচরের পরিবেশ অনেক উন্নতমানের। ৩২ আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে রোহিঙ্গারা থাকছে গাদাগাদি করে। ভূমি ধসের আশঙ্কা বিদ্যমান। সে হিসেবে ভাসানচরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। পাকা ভবন, সুপেয় খাবার পানিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসানচরের এ প্রকল্পে ১২০ গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে ১ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ১৭৬ বছরের মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় এ দ্বীপের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অতি নিকটে যেটি গেছে সেটি মূলত ৩৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। বর্তমানে ভাসানচরে ৩০৬ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। এরা সাগরপথে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পথে উদ্ধার হয়েছিল। প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে এ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত নিজ দেশে যেতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত তারা এখানে থাকবেন। জাতিসংঘের ঢাকা অফিসের বিবৃতি ॥ রোহিঙ্গাদের উখিয়া টেকনাফ থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে রাখা হয়নি। স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর প্রাক্কালে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে বুধবার এক বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসানচরে প্রাথমিক স্থানান্তরের কাজ আগামী কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনাবিষয়ক কিছু প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত রয়েছে। সেই স্থানান্তরের প্রস্তুতিতিমূলক কার্যক্রমে অথবা শরণার্থী শনাক্তের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যও নেই।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল এবং হালনাগাদ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তথ্যসমৃদ্ধ এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বরাবরই আহ্বান জানিয়ে এসেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ এই বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। এর আগে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে, ওই দ্বীপে শরণার্থী স্থানান্তর স্বেচ্ছা-নির্ভর হবে এবং জাতিসংঘ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, যেসব শরণার্থী ভাসানচরে স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হতে চাইবেন ওই দ্বীপে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তা এবং সেখান থেকে মূল ভূ-খণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকার ও সেবাসমূহ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ গুরুত্বারোপ করেছে। এটি ভাসানচরে একটি কার্যক্ষম ও নিরাপদ জনপদের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভাসানচর প্রকল্পের ঘোষণার সময় থেকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব রেখেছে এবং সরকারের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও পদ্ধতিগত এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে। এই আলোচনা চালিয়ে যেতে জাতিসংঘ এখনও আগ্রহী। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভাসানচরে যে কোন স্থানান্তরের আগে সর্বাঙ্গীন সুরক্ষাবিষয়ক একটি প্রায়োগিক মূল্যায়ন করার জন্য জাতিসংঘ বারবার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের এই নিরপেক্ষ মূল্যায়নে শরণার্থীদের বাসস্থান হিসেবে ভাসানচরের নিরাপত্তা, প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা, স্থায়িত্ব এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা কাঠামো এবং তাদের সহায়তা ও সেবা গ্রহণের অবকাঠামোর সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে, জাতিসংঘ প্রায়োগিক এবং সুরক্ষাবিষয়ক মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জাতিসংঘ সরকারের ভাসানচর প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত হতে পারবে কি-না সেটা নির্ধারণে এই মূল্যায়নগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি তাই হয়, তবে সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রস্তুতকরণে আরও কিছু কার্যক্রম প্রয়োজন হবে। এদের সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সেবা কার্যক্রম সম্ভব হয়েছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘের ঢাকা অফিস আরও জানায়, কক্সবাজারে বসবাসরত প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য কার্যকর ও সুদক্ষ মানবিক সহযোগিতা প্রদান কার্যক্রমে সরকারের নেতৃত্বমূলক ভূমিকাকে সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছা-নির্ভর, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনসহ তাদের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতে জাতিসংঘ কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের সরকার এবং এ দেশের জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা এবং আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে যে উদারতা এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছে সেজন্য জাতিসংঘ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।’ এছাড়া লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে যে মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাতে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি অটুট রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। ভাসানচরে যেসব এনজিও সহযোগিতা দিচ্ছে ॥ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত যে ২২টি এনজিও কাজ করছে সেগুলো হচ্ছে পার্লস বাংলাদেশ সোসাইটি, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ, ফ্রেন্ডশিপ, এসএডব্লিউএবি, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্লোবাল উন্নয়ন সেবা সংস্থা, আল মানচিল ওয়েলফেয়ার, সনি ইন্টারন্যাশনাল, কারিতাস বাংলাদেশ, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, জনসেবা কেন্দ্র, হেলথ দ্য নিড়ি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), সোশ্যাল এইড, সিডিডি, ভলানটারি অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, মুক্তি কক্সবাজার, মাল্টি সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল (এমএসআই), আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হেলথ এ্যান্ড এ্যাডুকেশন ফর অল (হায়েফা)। যে কারণে আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার সম্পৃক্ততা নেই ॥ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার পক্ষে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অনাহূতভাবে নেতিবাচক মনোভাব। বর্তমানে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে সেখানকার পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে। মিয়ানমার সরকার এদেরকে প্রত্যাবাসনের কথা বলেও তা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে গড়ে তুলেছে এ প্রকল্প, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের ব্যক্তি সুবিধার স্বার্থে নেতিবাচক মনোভাবে রয়েছেন। কক্সবাজার শহরে বিলাসবহুল হোটেলে থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা যেভাবে উখিয়া টেকনাফ আশ্রয় শিবিরগুলোতে দাবড়ে বেড়াতে পারেন সে সুযোগ ভাসানচরে নেই। এ চরে যেতে হলে কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। আর সেখানে আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও বিলাসবহুল হোটেল মোটেল নেই। মূলত এসব কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং এরসঙ্গে সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রকল্প নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ প্রক্রিয়ায় জট লেগে থাকে। অবশেষে সরকারী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ জট খুলতে শুরু করেছে। সংবাদ কর্মীদের এ প্রকল্প দেখানো হয়েছে। নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা নেতাদের। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিদেরও প্রকল্পের আদ্যোপান্ত দেখানো হয়েছে। সকল পক্ষ সন্তুষ্ট। একবাক্যে সকলে বলেছেন কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের চেয়ে ভাসানচরের পরিবেশ শতগুণ উন্নত। এটি একটি টেকসই প্রকল্প। এখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে কোন বাধা থাকতে পারে না। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনেকাংশে উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং ধাপে ধাপে সেখানে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
×