ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্ক ব্যবহারে আরও সচেতন করবে পুলিশ

থুতনিতে মাস্ক থাকলে দ্বিগুণ জরিমানা ॥ ভ্রাম্যমাণ আদালত

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

থুতনিতে মাস্ক থাকলে দ্বিগুণ জরিমানা ॥ ভ্রাম্যমাণ আদালত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হাত থেকে জীবন বাঁচতে মাস্ক পরিধান করার বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে আইনগত জটিলতার কারণে যারা মাস্ক পরছেন না, তাদের বিরুদ্ধে আর অভিযান চালাবে না। আগের মতো ঢাকার রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানোর সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ইতোপূর্বে জলকামানসহ এ ধরনের অন্যান্য যানবাহন দিয়ে রাস্তায় দু’বেলা জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছিল। জীবাণুনাশক ছিটানোর কারণে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ওইসব যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। কোন কোনটির যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দিয়েছে। এদিকে মাস্ক পরিধান না করায় ৫০ জনকে অর্থদণ্ড ছাড়াও মাস্ক নিয়ে কারসাজি করার দায়ে চার প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুখে মাস্ক পরিধান না করে যারা থুতনিতে পরবেন তাদের দ্বিগুণ জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মূলত মাস্ক পরিধানে বাধ্য করে করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতেই এমন কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। বুধবার দুপুরে ঢাকার বাড্ডা লিংক রোডে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানা প্রিয়াংকার নেতৃত্বে তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান। অভিযানে মাস্ক না পরায় বিশ জনকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা মাস্ক পরিধান করতে মানুষের মধ্যে উৎসাহ জাগাতে এবং সচেতনতা বাড়াতে মাস্কও উপহার দেন। ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানা প্রিংয়াকা জানান, কোন নাগরিককে জেল-জরিমানা করা তাদের উদ্দেশ্য না। সবাইকে সচেতন করতেই মূলত এটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আগেও অভিযান চালানো হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষ সচেতন না হলে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে প্রয়োজনে সরকার আরও কঠোর হবে। কারণ জনগণের যাতে মঙ্গল হয়, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। এদিকে মাস্ক নিয়ে কারসাজি করায় রাজধানীর চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মঙ্গলবার সারাদিন অভিযান চালিয়ে এসব জরিমানা করা হয়। অভিযানকালে মাস্ক নিয়ে কারসাজির পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কি-না তা মনিটরিং করা হয়। অভিযানে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় রসিদের গরমিল, পণ্যের ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও পণ্য, নকল পণ্য, ওজনে কারচুপিসহ ভোক্তার স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে সারাদেশের ৬১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনাকারী সকল ব্যবসায়ীকে এ অধিদফতর সবসময় সাধুবাদ জানায়। ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব একটি সুশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। বাজারে সেই আহ্বানের প্রতিফলন ঘটছে কিনা তা দেখতেই শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে মাস্ক বিষয়ে অভিযান চালানো হয়। সবাইকে মাস্ক পরিধান করে পণ্য বেচা কেনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মাস্ক পরিধান করা নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে র‌্যাব-১০ এর তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানে ৩০ ব্যক্তিকে মাস্ক না পরার জন্য ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় প্রায় এক হাজার মানুষকে মাস্ক উপহার দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নানা পরামর্শ দেয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। শীত আসছে। করোনার সঙ্গে ঠাণ্ডার যেহেতু একটি সংযোগ থাকার কথা চিকিৎসকরা বলছেন, তাই মানুষকে আরও সচেতন করতেই এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, অনেকেই মাস্ক পরিধান করার নানা অজুহাত দেখান। আবার অনেকে নাক-মুখে না ব্যবহার করে থুতনিতে দিয়ে রাখেন। তাদের দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে। করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করতেই দেশ-জাতি ও মানুষের স্বার্থেই তারা কঠোর হচ্ছেন। সম্প্রতি সারাদেশে করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনজীবন একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছিল। ওই সময় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান- র‌্যাব, পুলিশ এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সারাদেশে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, ওষুধ বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখির মধ্যেও খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। রাস্তায় মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা। খোলা জায়গায় বাজার বসানো থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে যা যা করণীয় সবই করেছে। রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ভাষ্য মোতাবেক, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। যদিও সে তুলনায় ঢাকায় বাড়েনি। সামনে ঢাকায় শীত পড়বে। চিকিৎসকদের ভাষ্য মোতাবেক, ঠাণ্ডায় করোনার প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে পারে। ইতোমধ্যেই প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়ছে। তাই আবারও করোনাভাইরাসে মানুষকে সচেতন করতে সরকারের তরফ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, অতীতে করোনার হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় মাইকিং করে মানুষকে ঘরে থাকতে সচেতন করা। রাস্তায় দুই বেলা জীবাণুনাশক ছিটানো ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এবারও ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষকে আরও সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আইনগত জটিলতার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারছে না। আবার রাস্তায়ও জীবাণুনাশক ছিটানোর আপাতত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ ইতোপূর্বে পুলিশের তরফ থেকে যেসব যানবাহন দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে, সেগুলো মূলত পুলিশের অন্য কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। সেগুলো জীবাণুনাশক ছিটানোর যানবাহন নয়। ওইসব যানবাহন দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানোর কারণে কোন কোন যানবাহনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আবার কোন কোন যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
×