ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন নামঞ্জুর

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২ ডিসেম্বর ২০২০

টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন নামঞ্জুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আতাউর রহমান খানের ছেলে সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই। সহিদুর রহমান খান মুক্তি তার পিতা আতাউর রহমান খান এমপি ও ভাই সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার সঙ্গে বুধবার বেলা ১১টার দিকে আদালত চত্তরে প্রবেশ করেন। পরে টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি। তিনি দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন। আত্মসমর্পণ করার পরে তারপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জামিনের বিরোধিতা করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত হয়ে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও মামলার বাদী নাহার আহমেদ ন্যায়বিচারের স্বার্থে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে জামিন না দেয়ার জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ করেন। পরে আদালত বেলা ৩টার দিকে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালতের বিচারক সিকান্দর জুলকার নাইন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া এই হত্যা মামলায় আত্মসমর্পনের পরেই সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি একটি অস্ত্র মামলায় পুলিশ হেফাজতে টাঙ্গাইল দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সাবেক পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি পলাতক হওয়ার পর বিগত ২০১৫ সালে গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি থেকে দুটি পিস্তলসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর স্বীকারোক্তিতে এই পিস্তল সহিদুর রহমান খান মুক্তি তাঁদের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন বলে জানান। এ মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ সহিদুর রহমান খান মুক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এদিকে সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত ২৩ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করতে টাঙ্গাইল আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু বিচারক আদালতে না আসায় আসামী মুক্তি গ্রেফতার এড়িয়ে চলে যান। উল্লেখ্য, বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ টাঙ্গাইল শহরে কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ফারুক হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিগত ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা নামের একজনকে গ্রেফতার করে। পরে রাজার দেয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এর এক সপ্তাহ পরে গোয়েন্দা পুলিশ মোহাম্মদ আলী নামের অপর একজনকে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদ আলী আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার অপর দুই ছোট ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এবং ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকনের নাম বের হয়ে আসে। তারপরই জাহিদুর রহমান খান রানা ও সানিয়াত খান বাপ্পা গা ঢাকা দেন। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সহিদুর রহমান খান মুক্তি আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে তদন্ত শেষে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ বিগত ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি তাঁর দুই ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট জমা দেয়। ওই বছরের ৬ এপ্রিল আদালত মামলার চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার স্বাক্ষী চলছে টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। এই হত্যা মামলার অপর আসামী সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তিনি প্রায় দুই বছর হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন।
×