ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ঢাকার প্রথম জয়

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ঢাকার প্রথম জয়

অনলাইন ডেস্ক ॥ ফরচুন বরিশালকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে বেক্সিমকো ঢাকা। প্রথম জয়ের খোঁজে খেলতে নামা ঢাকার পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন রবিউল ইসলাম রবি, নাইম শেখ, শফিকুল ইসলামরা। তাদের ক্ষুরধার বোলিংয়ে মাত্র ১০৮ রানেই থেমে যায় বরিশালের ইনিংস। জবাবে ঢাকার ম্যাচ জিততে খেলতে হয়েছে ১৮.৫ ওভার। মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বির ৩০ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে ঢাকা। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে ঢাকা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হন রবিউল ইসলাম রবি। নাইম শেখের জোরালো শট ঠেকাতে পারেননি বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। তার হাতে লেগে ভে্ঙ্গে যায় ননস্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প। তখন উইকেটের বাইরে বেরিয়ে ছিলেন রবিউল। ফলে রানআউট হন তিনি। বল হাতে ৪ উইকেট নিলেও ব্যাট হাতে ১২ বলে ২ রানের বেশি করতে পারেননি । পাওয়ার প্লে'তে আসে মাত্র ২২ রান। ইনিংসের সপ্তম ওভারে আবার হয় রানআউট। এবার শিকার নাইম শেখ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে নিজের উইকেট বিসর্জন দিতে হয় নাইমকে। আউট হওয়ার আগে ১ চারের মারে ২০ বলে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর রানের চাপ সরানোর চেষ্টা করেন বিশ্বজয়ী যুব দলের বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ২০ বলে ২২ রান করে জুনিয়র তামিম। ঢাকার ইনিংসের ১২ ওভার শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫৪ রান। শেষ ৮ ওভারে তাদের জয়ের জন্য বাকি থাকে আরও ৫৫ রান। অপরপ্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন মুশফিক। পাঁচ নম্বরে নেমে অধিনায়ককে নির্ভার করেন ইয়াসির রাব্বি। মূলত তার সাবলীল ব্যাটিংয়েই চাপমুক্ত থাকতে পারেন মুশফিক। এ দুজনের জুটিতে প্রথম ৪ ওভারে আসে ২১ রান। ফলে শেষের ২৪ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪ রান। কামরুল রাব্বির করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ইয়াসির রাব্বির বাউন্ডারিসহ মোট ৯ রান নিয়ে নেয় ঢাকা। আবু জায়েদ রাহীর করার পরের ওভারেও আসে ৯ রান। ফলে ১২ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৬ রানের। যা কি না ৫ বলেই দিয়ে দেন তাসকিন। তার করা ১৯তম ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন ৩ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৪ রান করা রাব্বি। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৩৪ বলে ২৩ রান করে। এর আগে ঢাকার আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে সাবধানী শুরু করেছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল। প্রথম ৪ ওভারে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ২৬ রান। পঞ্চম ওভারে রবিউল ইসলাম রবির হাতে বল তুলে দেন মুশফিক। নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই সাইফকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রবি। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ৯ রান করেন সাইফ। ঠিক পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে গোল্ডেন ডাক নিয়ে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। এক ওভার পর ফের আঘাত হানেন রবি। এবার তার শিকারে পরিণত হন আফিফ হোসেন ধ্রুব। অপরপ্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়লেও অধিনায়ক তামিম আগলে রাখেন আরেক প্রান্ত। পাঁচ নম্বরে নামা তৌহিদ হৃদয় চাপ কমাতে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন। রবির তৃতীয় ওভারে পরপর দুই বলে হাঁকান ছক্কা ও চার। তবু রানের গতি বাড়েনি বরিশালের। দশম ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫২ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ২৫ থেকে ৩১ রানে পৌঁছে যান তামিম। আর এতেই পূরণ হয় তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৬ হাজার রান। ক্যারিয়ারের ২১৩তম ম্যাচের ২১২তম ইনিংসটি খেলতে নেমে এ মাইলফলকে পৌঁছলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে নামা তামিম। আর এতেই তিনি হয়ে গেছেন কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে ৬ হাজার রান করাদের মধ্যে বিশ্বের দশম দ্রুততম ব্যাটসম্যান। তার সামনে রয়েছেন ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি, ডেভিড ওয়ার্নার, ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা। তবে তার পেছনে রয়েছেন রোহিত শর্মা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কুমার সাঙ্গাকারা, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানরা। চলতি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর আগে তামিমের ক্যারিয়ার সংগ্রহ ছিল ৫৮৪৯ রান। প্রথম ম্যাচে ১৫ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে তিনি খেলেন ৭৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। পরে তৃতীয় ম্যাচে ৩২ রানে আউট হলে আজ বুধবার তার ৬ হাজারের জন্য বাকি থাকে ২৭ রান। যা পূরণ করতে সম্ভাব্য সেরা পথ অর্থাৎ ছক্কাই হাঁকান তামিম। তবে এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি। ক্যারিয়ারের ৬ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে এক বল পরেই সাজঘরে ফিরে যান তামিম। করেন ৩১ বলে ৩১ রান করা । অধিনায়কের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকাটারি রুপ দেখাতে পারেননি তিনিও। তৌহিদ আউট হন ১৯তম ওভারে। শফিকুলের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৩ বলে ঠিক ৩৩ রান করেন তৌহিদ। একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ১৯ বলে ১২ রান করা মেহেদি মিরাজও। সেই ওভারটিতে কোনো রান খরচ করেননি শফিক অর্থাৎ ১৯তম ওভারে ডাবল উইকেট মেইডেন তিনি। তৌহিদ-মিরাজের আরও একবার হতাশ করেন ইরফান শুক্কুর। প্রেসিডেন্টস কাপ মাতানো এ ব্যাটসম্যান করেন ৮ বলে ৩ রান। ইনিংসের একদম শেষ বলে তাসকিন আহমেদের ছক্কায় দলীয় সংগ্রহ পৌঁছায় ১০৮ রানে। যা তাড়া করতে পারলেই ঢাকা পাবে আসরে নিজেদের প্রথম জয়। বল হাতে ৪ ওভারে ১ মেইডেনসহ মাত্র ৮ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছেন নাইম হাসান। শফিকুল মেইডেন করেছেন ২ ওভার। তার ৩ ওভারে ১০ রান খরচায় এসেছে জোড়া উইকেট। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন রবিউল রবি। তার ৪ ওভারে ২০ রানের বিনিময়ে এসেছে ৪টি উইকেট।
×