অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ঋণগ্রহীতাদের নানা ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন গ্রাহক কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপী করা যাবে না। এই ছাড়ে খেলাপী ঋণ গত তিন মাসে এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা কমে গত সেপ্টেম্বর শেষে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মোট ঋণের যা ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন করে কাউকে খেলাপী না করার পাশাপাশি করোনার ক্ষতি পোষাতে ব্যবসায়ী, কৃষকসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি সুদে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। আবার লকডাউনের সময় তথা এপ্রিল ও মে মাসে সব ধরনের ঋণের সুদে ব্যাংকগুলোকে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এর আগে গত বছর মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সুযোগ নিয়ে গত বছর রেকর্ড ৫২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল হয়।
তিন মাস আগে জুন শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণের যা ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের যা ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মূলত করোনার আগ থেকেই বিশেষ উপায়ে পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা ছাড় দিয়ে খেলাপী ঋণ কমাতে চাইছিল সরকার। আগের অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছিলেন, বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত করা ঋণের বেশিরভাগই আবার খেলাপী হবে। তবে করোনার এ সময়ে কিস্তি না দিলেও খেলাপী না করার সুযোগে তা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ সামান্য কমে ৪২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা হয়েছে। মোট ঋণের যা ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৪২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের ৪৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা থেকে কমে ৪৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকায় নেমেছে। বিদেশী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১৫ কোটি টাকা কমে ২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগে জুন শেষে ছিল ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। এর মানে তিন মাসে ঋণস্থিতি বেড়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। তিন মাস আগে বেড়েছিল ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। বিদ্যমান খেলাপী ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ৬৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের কথা। তবে কয়েকটি ব্যাংকের কারণে পুরো খাতে ২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: