ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চুরির অপবাদে শিশু গৃহকর্মীর গোপন অঙ্গে ছ্যাঁকা দিল ডাঃ গৃহকর্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০২০

চুরির অপবাদে শিশু গৃহকর্মীর গোপন অঙ্গে ছ্যাঁকা দিল ডাঃ গৃহকর্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে নির্যাতনের শিকার গুরুতর জখম বারো বছরের এক শিশু গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শিশুটির গোপনাঙ্গের ক্ষত মারাত্মক হওয়ায় তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল (ওসিসি) ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের তালিকাভুক্ত ভিক্ষুক মৃত বাছেদ আলী ফকিরের মেয়ে আঁখিমনি। আঁখিমনির মা শিরিনা খাতুন জানায়, ডালিম চন্দ্র রায় নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার মেয়ে দুই বছর থেকে গৃহকর্মীর কাজ করত রংপুর শহরের আর্দশপাড়া মহল্লার দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায়। তার স্বামী রেজাউল বারী সরকারী চাকরি করেন নওগাঁয়। শনিবার (২৮ নবেম্বর) ডালিম চন্দ্র রায় আমাকে নিয়ে যায় রংপুরের দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগমের বাসায়। সেখানে গেলে তারা জানায়, আমার মেয়ে টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবে না। এ সময় তার মেয়ে সেখানে বলে সে টাকা চুরি করেনি। তবুও বাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক নির্যাতন ও গোপনাঙ্গে গরম ছ্যাঁকা দিয়েছে। এ অবস্থায় ওই দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম ও তার স্বামী রেজাউল বারী ৩০০ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেয়। আমি মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসি। এখানে এসে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে ডেকে বিস্তারিত জানাই। সোমবার দুপুরে গ্রামের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। গ্রামের নুরউদ্দিন আলী জানান, বিষয়টি জানার পর আমরা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিস্তারিত খুলে বলি। এরপর কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ এসে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। উপজেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাঃ সাবির হোসেন সরকার জানান, শিশুটির সারা শরীরে ও তার গোপনাঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন মারাত্মক। তাই কালবিলম্ব না করে পুলিশের মাধ্যমে শিশুটিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল (ওসিসি) ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগমের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, মেয়েটি টাকা চুরি করেছে। ওর মাকে ডেকে আনলে মেয়েটির মা তাকে মেরেছে আমরা মারিনি বা নির্যাতন করিনি। তবে নির্যাতনের শিকার আঁখিমনি কান্নাবিজরিত কণ্ঠে সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ওই দাঁতের ডাক্তার, ডাক্তারের স্বামী রেজাউল বারী, তার মা খালেদা বেগম তাকে নির্যাতন করে ও প্রস্রাবের স্থানে গরম ছ্যাঁকা দেয়। কিশোরীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হক বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে আঁখিমনি মেয়েটি উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
×