ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুব আকাশে সূর্যের আভা সোৎসাহে জড়ো হয় শত শত পুণ্যার্থী

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১ ডিসেম্বর ২০২০

পুব আকাশে সূর্যের আভা সোৎসাহে জড়ো হয় শত শত পুণ্যার্থী

মেজবাহউদ্দিন মাননু ॥ সাগরের বুক চিরে সূর্যের লাল আভা ছড়াতেই জড়ো হতে থাকে রাসভক্ত শত শত নরনারী। সবার দৃষ্টি পুব আকাশে। সূর্য উঁকি দিতেই উলুধ্বনিতে সরগরম গোটা সৈকত। রাসভক্ত পুণ্যার্থীরা কেউ পূজা করছেন। কেউবা স্নানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সোমবার প্রত্যুষে কুয়াকাটার বেলাভূমের এমন দৃশ্য ছিল পুণ্যার্থীর মিলনমেলায়। করোনার কারণে এবারে রাস পূজায় ভক্তদের উপস্থিতি কম হয়েছে। রাতভর কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিলিত হন পুণ্যার্থী রাসভক্ত নারী-পুরুষ। কঠোর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত এ রাস পূজার অনুষ্ঠানে কুয়াকাটা কলাপাড়ায় প্রশাসনের নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর কুয়াকাটায় হয়নি রাসমেলা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই রাসপূজা এবং পুণ্যস্নানকে ঘিরে সরকারের ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রবিবার শেষ বিকেল থেকে কুয়াকাটায় রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে সমবেত হয় শত শত রাসভক্ত পুণ্যার্থী। সোমবার প্রত্যুষে সাগরে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সেখানকার অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে। সোমবার বিকেল থেকে উপজেলা সদর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রমে ধর্মীয় উৎসবে মিলিত হন রাসভক্ত পুণ্যার্থীরা। সেবাশ্রমে স্থাপন করা রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন ছাড়াও ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন আগতরা। সেবাশ্রম অঙ্গনে ক্ষুদ্র পরিসরে দোকানপাট বসেছে। প্রশাসন রাসমেলার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে অনুষ্ঠানমালায় কাটছাঁট করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। কুয়াকাটা এবং কলাপাড়ায় রাস পূর্ণিমায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উপজেলা প্রশাসন ও রাস পূর্ণিমার পূজা উদযাপন কমিটি এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। কলাপাড়ায় মদনমোহন সেবাশ্রমে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমার উৎসবে কিছুটা হলেও ধারাবাহিকতার ছেদ পড়েছে করোনার কারণে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারে প্রশাসন কঠোরভাবে আগেভাগেই কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবছর রাস পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগত দর্শনার্থী, রাসভক্ত সকলের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। করোনার কারণে রাসমেলা কিংবা মাস্কবিহীন সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগত রাসভক্তদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য অস্থায়ী লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। পুণ্যার্থীর নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য বাস, মোটরসাইকেলসহ সকল যানবাহন নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। কুয়াকাটার প্রবেশপথে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। স্থানীয় বঙ্গবন্ধু স্কুল থেকে কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রম এলাকায় রাসপূজা চলাকালীন সড়কে চলাচল ওয়ানওয়ে রাখা হয়। আগতদের জরুরী স্বাস্থ্য সেবার জন্য ছিল মেডিক্যাল টিম। এমনকি করোনাবিধি মানতে আগত পুণ্যার্থীদের মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। মাস্ক ব্যতীত কাউকে পূজা মণ্ডপে কিংবা ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানে প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। ঐতিহ্যবাহী এ রাস পূর্ণিমার উৎসব পুণ্যস্নান ও ধর্মীয় রীতি পালনে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে রাসপূজা উদ্যাপন কমিটি এবং কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন। হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস মতে শতবছরের এ পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সারা বছররের পঙ্কিলতা দূর করে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করবেন তারা। ফি বছরের মতো কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে হাজার হাজার রাসভক্ত কুয়াকাটায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিলিত হন। করেছেন সাগরে পুণ্যস্নান। সোমবার বিকেল থেকে কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে মিলিত হন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। তারা দর্শন করেন রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। মংলা, বাগেরহাট ॥ পুণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুবলার চরের দুই দিনের রাস পূজা। সোমবার ভোরে সূর্য্য ওঠার আগেই পুণ্যার্থীরা সাগরের নোনা জলে স্নান করেন। স্নানের পূর্বে সাগর পাড়ে নিজ নিজ প্রত্যাশা পূরণ এবং পুণ্য লাভের আশায় প্রার্থনা করেন তারা। এর আগে রবিবার পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। সোমবার ভোরে স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা সকালেই সকলের গন্তব্যে ফিরে যান। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব বা মেলা হয়নি। এছাড়া শুধু সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য ধর্মের কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে কোন মেলা বা উৎসব পালিত হয়নি।
×