ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে বিয়ে করা ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১ ডিসেম্বর ২০২০

কারাগারে বিয়ে করা ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেনীতে কারাগারে বিয়ে করা ধর্ষণ মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনকে এক বছরের জন্য জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এখন তার মুক্তি পেতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। জামিন দেয়ার আগে আদালত বলেছে, আমাদের দেশে অনেকাংশে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে ডিভোর্সের মধ্যে শিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে এদিন আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। শুনানিকালে পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে মন্তব্য করেছে আদালত। শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলে, ‘আমরা তো নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছি। আসলে ব্যক্তিগতভাবে দুই-একটি পত্রিকার রিপোর্ট দেখে খুব অফেন্ডেড (অপরাধ বোধ) হয়েছি। যেখানে লেখা হয়েছে ‘ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে’ এভাবে তো রিপোর্ট হওয়া উচিত না। আবার নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে এ ধরনের বিয়েতে ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে। যে যাই সমালোচনা করুক, আমরা এটাকে উৎসাহিত করব। এমনটি উল্লেখ করে বিচারক বলেন, প্রযুক্তির কারণে এখন সমাজে মানুষের সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, ভাঙতেও সময় লাগে না। দেখবেন আমাদের দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। শিক্ষিত লোকদের মধ্যে বেশি হচ্ছে বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম। এর আগে গত ১৯ নবেম্বর ফেনীর কারাগারে আসামি জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই নারীর। মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর ৮ নম্বর চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামে । গত ২৭ মে ভোরে একই ঘর থেকে জিয়া ও অভিযোগকারী নারীকে আটক করে গ্রামবাসী। স্থানীয়রা তাদের বিয়ে দিতে চাইলে ছেলের বাবা আবু সুফিয়ান মেম্বার রাজি হননি। ওইদিনই মেয়েটি সোনাগাজী থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার পরপরই পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত জিয়াকে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বিচারিক (নিম্ন) আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি। এর আগে গত ১ নবেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ওই মেয়েকে বিয়ে করলে জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আদেশ দেয়। ওই আদেশের পরই ফেনী জেলা কারাগারে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। জিয়া ওই নারীকে বিয়ে করার শর্তে জামিনের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করলে হাইকোর্ট জিয়াকে এক বছরের জামিন দেয়। সোমবার শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী জিয়ার জামিন প্রার্থনা করে বলেন, ‘যেখানে মামলায় মেয়েটা বলছে, আমি তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভালবাসি, তার সঙ্গে আমার মনোমালিন্য ঠিক হয়ে গেছে। এখানে দেখতে হবে অন্যায় কিছু হয়েছে কিনা। মেয়েটা বলছে, আমার সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক কিন্তু বিয়ে না করায় থানায় মামলা করা হয়েছে। এটা নিয়ে জজকোর্টেও আপস করার চেষ্টা করেছে মেয়েটি। তারপর তারা হাইকোর্টে এসেছে। সকলের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে, এখানে অন্যায়ের কী হয়েছে। আর এভাবে কথায় কথায় যদি ধর্ষণের মামলা হয়ে যায়, যেখানে ধর্ষণের কোন ভিত্তি নেই, কোন মেডিক্যাল রিপোর্টও নেই। তারপরও কেন জামিন হবে না। এ সময় আদালতে সংযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড এমন আদেশ দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে তাদের সংসারে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। বিয়ে নামক কথার কারণে জামিন হয়ে গেল তারপরে যাতে সংসার ভেঙ্গে না যায়। সে জন্য কোন নির্দেশনা বা কঠোরতা দিয়ে দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখবেন। তখন হাইকোর্ট আরও বলেন, মিস্টার ডিএজি ঘর সংসার কি কোন কঠোরতা দিয়ে হবে। ১৫/২০ বছর সংসার করার পরও ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। শিক্ষিত লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দুইজনই কোর্টে এসেছেন; দেখা গেছে তাদেরও এতদিনের সংসার ভেঙ্গে গেছে।
×