ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ২০:০১, ১ ডিসেম্বর ২০২০

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

দেশে মুমূর্ষু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা ও নিরাময় নিয়ে এক শ্রেণীর চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার খবর প্রায়ই শোনা যায়। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অজ্ঞানতাবশত ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগও মাঝে-মধ্যেই আসে গণমাধ্যমে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই প্রায় কোন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ জনিত মহামারী সর্বশেষ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক ঘাটতি ও সমন্বয়হীনতাকে প্রকট করেছে নিদারুণভাবে। সে অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা নীতি-নৈতিকতা ও জবাবদিহির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে গেছে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইউরোলজি বিভাগের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি। ঘটনাটি দুই বছর আগের হলেও শাহবাগ থানার পুলিশ এতদিন অজ্ঞাত কারণে মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। গত শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন মৃত কিডনি রোগী রওশন আরার ছেলে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোঃ শফিক সিকদার। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর বিএসএমএমইউতে মৃত্যু হয়। রওশন আরার। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা যে কারণ উল্লেখ করেছেন তা হলো, সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং তার দুটি কিডনিই সার্জিক্যালি অপসারণ করা হয়েছে। ইউরোলজি বিভাগের চার চিকিৎসকসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করে মৃত নারীর ছেলে যে মামলা দায়ের করেন তাতে বলা হয়েছে, বিষয়টি চিকিৎসকরা গোপন করেছিলেন বাদীর কাছে। উপরন্তু মৃত্যুপথযাত্রী নারীকে আরও উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে ডিসচার্জ করে মগবাজারের অন্য একটি বেসরকারী কিডনি ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছিলেন। চিকিৎসক সার্জনরা রওশন আরার অকেজো বাম কিডনিসহ দুটো কিডনিই অপসারণ করেছিলেন। ফলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে, যা প্রকারান্তরে হত্যার শামিল। পরে ময়নাতদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি হলেও তার ফল জানা যায় না। যদিও ঘটনাটি তখন হাসপাতালে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ময়নাতদন্ত করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগার বিষয়টিও স্বাভাবিক নয়। আরও উল্লেখ্য, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। শাহবাগ থানা মামলাটি তদন্ত করে পরবর্তী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাই এখন দেখার বিষয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, এসব ক্ষেত্রে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়। আর ভুক্তভোগী খুব কম ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পেয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের একটি বিখ্যাত প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় একটি শিশুর মৃত্যু হলে র্যাব অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়। এই ঘটনায় গোটা চট্টগ্রামের চিকিৎসক সমাজ তাৎক্ষণিক ধর্মঘট ডেকে সমস্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ বিরত থাকে চিকিৎসা সেবায়। ফলে সৃষ্টি হয় প্রবল অচলাবস্থার। পরে যা মীমাংসা হয় আলোচনার মাধ্যমে। ইতোপূর্বে সময়ে সময়ে চিকিৎসকের অনিয়ম-অবহেলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে তথাকথিত সাময়িক বহিষ্কার অথবা বদলির মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়, সেখানে কেবল এটুকুই কি যথেষ্ট? চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শুধু অসততা, নীতি-নৈতিকতাবহির্ভূত অভিযোগই নয়, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সর্বজনমহলে। এহেন অব্যবস্থা, অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি এমনকি প্রায় অরাজকতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ব্যবস্থা না নিলে স্বাস্থ্য খাতে স্বেচ্ছাচারিতা চলতেই থাকবে আগামীতেও। আর তাতে বিপন্ন হবে জনস্বাস্থ্য ও জনজীবন। বিএসএমএমইউর কতিপয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে এমনটি হবে না বলেই প্রত্যাশা।
×