ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাস

প্রকাশিত: ২০:০০, ১ ডিসেম্বর ২০২০

বিজয়ের মাস

আজ ডিসেম্বরের প্রথম দিন। ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম একটি মাস। এটি আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে তাড়িয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ নিয়েছিল দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের মাসের সূচনার প্রথম দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয় কয়েক বছর আগে। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই উদ্যোগ নেন। একটা সময় গেছে যখন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো হতো না। এজন্য বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তর হঠাৎ করে আসেনি। হঠাৎ করে কোনকিছুই হয়নি। সুদীর্ঘ সময়ের আন্দোলন, সংগ্রামের পথ বেয়ে এমন এক পর্যায় এসেছিল যেটা ছিল ঐ আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়। সেটাই একাত্তর। একাত্তরের ইতিহাস বলতে গেলে সঙ্গে আসে তার পূর্ববর্তী ইতিহাসও। প্রাথমিক পর্যায়ের সূচনাপর্বের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা আন্দোলনের পর সংগ্রামের ধারাটি স্রোতের মতো বাহিত হয়ে পৌঁছেছিল একাত্তরে। এই পথের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে রয়েছে এদেশের মানুষের বহু ত্যাগ, বহু অশ্রু, অনেক জীবনদানের ঘটনা। ছয় দফার আন্দোলনের সঙ্গে এক পর্যায়ে যুক্ত হয় এগারো দফার আন্দোলন। আসে ১৯৭০ সাল। সে বছর অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে দেশের মানুষের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের ঘটনা ঘটে। তারপর একাত্তরের মার্চ। এলো ৭ মার্চ। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং তাতে সুস্পষ্ট ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এলো ২৫ মার্চ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত সশস্ত্র আক্রমণ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো পাকিস্তানে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সশস্ত্র প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রুখে দাঁড়াল এ দেশের বীর সন্তানরা। তারাই দেশপ্রেমিক বীরমুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে, তার নামে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ থেকে শত্রু বিতাড়নের শপথ নিয়ে। নয় মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এলো ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল পাক হানাদাররা ঢাকা মহানগরীর রেসকোর্স তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দেশ হলো শত্রুমুক্ত। নিরঙ্কুশ হলো স্বাধীনতা। অর্জিত হলো মহান বিজয়। এসব উজ্জ্বল গৌরবের ইতিহাসকে দীর্ঘদিন আড়াল করা হয়েছে। নবীন প্রজন্মকে জানতে দেয়া হয়নি। তাদের ভুল এবং বিকৃত ইতিহাস শোনানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। সুখের বিষয়, সেসব দিন বিগত হয়েছে। আবার নবীন প্রজন্ম জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। গৌরবের অধ্যায় সৃষ্টির সেই মাস শুরু হলো আজ। এ মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেটা দূরদর্শী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। আরও ব্যাপকভাবে সরকারী উদ্যোগে এই দিবস প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার উদ্যোগ নেয়া হোক। ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হোক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ধরে রাখার। মুক্তিযোদ্ধাদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে নেয়া হোক আরও নানা উদ্যোগ। বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা, সম্মান ও অভিনন্দন। করোনা মহামারীর কারণে বিজয়ের মাস প্রায় অনাড়ম্বরভাবে প্রধানত ভার্চুয়াল মাধ্যম সীমিত পরিসরে পালিত হলেও বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির জীবনে দিনটি অমলীন, অবিস্মরণীয়।
×