ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যারাডোনার বার্সা অধ্যায় দুর্ভাগ্যজনক!

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৩০ নভেম্বর ২০২০

ম্যারাডোনার বার্সা অধ্যায় দুর্ভাগ্যজনক!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্পেনের ফুটবল প্রতিনিধি জোসে মারিয়া মিঙ্গুয়েলা। যিনি সেই ১৯৭০ সাল থেকে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সিলোনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই সময় অনেক ফুটবলারকেই কাতালান ক্লাবটির কাছে উপস্থাপন করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে রয়েছেন দু’জন জগদ্বিখ্যাত আর্জেন্টাইন। হ্যাঁ, তাদেরই একজন দিয়েগো ম্যারাডোনা আর অন্যজন লিওনেল মেসি। তবে ম্যারাডোনাকে আনা ছিল তার জন্য কঠিন ও ধৈর্যের এক পরীক্ষা। এই চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাকে গুম ঘরে যেতে হয়েছে, আবার পড়তে হয়েছে পিস্তলের মুখেও। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনাকে বার্সিলোনায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন মিঙ্গুয়েলা। কিন্তু আর্জেন্টাইন ফুটবলের ঈশ্বর হিসেবে বিবেচিত ম্যারাডোনার ভাগ্যে যে ছিল নেপোলি! বার্সায় হতাশার দুই মৌসুম কাটিয়েই ইতালির নেপোলিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার ন্যুক্যাম্পে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আর্জেন্টিনা জুনিয়র্সের হয়ে ততদিনে নাম করে ফেলেছেন তিনি। তাকে দেখতে সুদূর আর্জেন্টিনা উড়ে যান স্প্যানিশ প্রতিনিধি। প্রথমদিন ম্যারাডোনার খেলা দেখেই মুগ্ধ। দক্ষ জহুরির মতো হীরা চিনতে ভুল করেননি মিঙ্গুয়েলা। সঙ্গে সঙ্গে জাউমে রোসেলকে প্রস্তাব দেন তরুণ ডিয়েগোকে কিনতে। আর্জেন্টিনা জুনিয়র্স ক্লাব প্রেসিডেন্ট তখন অগুস্তো মোন্তাল কস্তা। মাত্র ১৬ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে বিক্রি করার সম্ভাবনা তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে দেন তিনি। ওই সময় ম্যারাডোনার দাম ধরা হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ডলার। টাকার জন্য নয়, মাত্র ১৬ বছরের একটি ছেলেকে বিদেশ বিভুঁইয়ে দিতে রাজি ছিল না আর্জেন্টিনা জুনিয়র্স ও আর্জেন্টিনা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন। তারপরও হাল ছাড়েনি মিঙ্গুয়েলা। অনেক জল্পনা-কল্পনা আর নাটকীয়তার পর ৪ জুন ১৯৮২ সালে চুক্তি সম্পন্ন হয়। রাজি হয়ে যায় আর্জেন্টিনা জুনিয়র্স ও আর্জেন্টিনা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন। তার কারণ টাকার অঙ্ক। ওই সময়ের বিশ্বরেকর্ড ট্রান্সফার ফি ৭২ লাখ ইউরোতে ম্যারাডোনা হয়ে যান বার্সিলোনার। কিন্তু বার্সায় ম্যারাডোনার ভাগ্য ভাল ছিল না। প্রথম ম্যাচটিতে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে গোল করেছিলেন ঠিকই কিন্তু দল হারে ২-১-এ। হার দিয়ে শুরু করা ম্যারাডোনা প্রথম মৌসুম অসুস্থতাতেই কাটান। হেপাটাইটিস ধরা পড়ে তার। মৌসুমের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় মাঠের বাইরে থাকেন। লা লিগায় চতুর্থ হয়ে শেষ করে বার্সা। যদিও ম্যারাডোনা ব্যক্তিগতভাবে ভাল করেছিলেন। ২০ ম্যাচে ১১ গোল ছিল তার। পরের মৌসুমের জন্য নতুন উদ্যমে তৈরি হচ্ছিলেন ম্যারাডোনা ও বার্সিলোনা। কিন্তু এবারও বিপত্তি। লীগ শুরুর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গোড়ালির মারাত্মক ইনজুরিতে ম্যারাডোনা। আবারও অর্ধেক মৌসুম মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। ৮৫’র জানুয়ারিতে দলে ফিরে নিজের ছন্দেই খেলেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে মিস হয় অনেক ম্যাচ। সেই মৌসুমে মাত্র ১৬ ম্যাচে করেছিলেন ১১ গোল। ম্যারাডোনার বার্সায় সফল না হওয়ার ব্যাপারে তাকে ক্লাবটিতে আনা মিঙ্গুয়েলা বলেন, ‘ম্যারাডোনা-মেসি দু’জন একই রকম ফুটবলার। দু’জনই নাম্বার ১০। আর্জেন্টিনায় এই পজিশনটা এমনিতেই গুরুত্বের। কিন্তু ব্যাপার হলো এখানে (বার্সা) আসার পর ম্যারাডোনার ভাগ্যটা খারাপ হয়ে যায়। সে অসুস্থতা ও ইনজুরিতে পড়ে একাকী সময় পার করে। তাই নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেনি। ম্যারাডোনা নিজেকে মেলে ধরতে পারে নেপোলিতে গিয়ে। কিন্তু মেসির ক্ষেত্রে এই দুর্ভাগ্যে পড়তে হয়নি।’
×