ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘরের চাল বেড়া খুটি নষ্ট হয়ে গেছে রান্নাঘর টয়লেট নেই হতদরিদ্র ৭০ পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন

গামুরিবুনিয়ার ১০০ কক্ষের আবাসনের চরম বেহাল দশা

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৯ নভেম্বর ২০২০

গামুরিবুনিয়ার ১০০ কক্ষের আবাসনের চরম বেহাল দশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ ছয় নং ব্যরাকের চার ও পাঁচ নম্বর জীর্ণ দসার বাস অনুপযোগী খড়কুটার বেড়া দেয়া কক্ষে বসবাস করেন বাবুল হাওলাদার ও মোসাম্মৎ রিতু দম্পতি। বৃদ্ধা শতায়ু মাসহ সন্তান নিয়ে আট জনের সংসারে এখন অচলাবস্থা। সেই সকালে ছুটেছেন কামলার সন্ধানে। জোটেনি। ভর দুপুরে ফিরেছেন, হতাশার চোখ-মুখ। জানেন না কী রান্না হয়েছে। রিতু বেগম জানালেন, কলা গাছের থোড় রান্না করেছেন। এদিয়েই দুপুর চালাতে হবে। কথা হয় হাইলা-কামলা শ্রেণির এই পরিবার প্রধান বাবুল হাওলাদারের সঙ্গে। আবাসনের ঘরটির চাল শতচ্ছিন্ন ছিদ্র। জং ধরা টিনের ফাক দিয়ে সূর্যের আলাতে সব পরিষ্কার। পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির পানি ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা। ঘরের খুটিগুলো সব ভেঙ্গে গেছে। এ্যাঙ্গেলগুলে নেই। বেড়া নেই। খড়কুটায় জোড়াতালি দেয়া। যেন গোয়াল ঘরের হাল। ২০০৮ সালে নির্মিত চাকামইয়া ইউনিয়নের গামুরিবুনিয়া আবাসনের ছয় নম্বর ব্যারাকের জীর্ণদশার এই নামকাওয়াস্তের কক্ষই এখন এ পরিবারের ঠিকানা। কষ্ট-দূর্ভোগ আর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ছিন্নমূল, ঠিকানাবিহীন এই মানুষগুলোর একটু ঠিকানার জন্য আবাসন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এসব আবাসনের এখন চাল নেই। বেড়া নেই। ঘরের ভিটি নেই। বাথরুম টয়লেট নেই। যেন কষ্ট-দুঃখের সীমাহীন যাতনা। তারপরও উপায় না পেয়ে এসব আবাসনে থাকছেন হতদরিদ্র এসব মানুষ। ইটভাটিতে কাজ করা ইউসুফ বিশ^াস ১০ নম্বর ব্যরাকের নয় ও আট নম্বর কক্ষ মেরামত করে এখন থাকছেন। আর দশ নম্বর কক্ষ পড়ে আছে নামে মাত্র। চাল-বেড়া কিছুই নেই। বরাদ্দ নেয়া খলিল মুন্সি থাকছেন বন্দোবস্ত পাওয়া খাস জমিতে। বাদল হাওলাদার- মোসাম্মৎ সালমা দম্পতি চার জনের সংসার নিয়ে জীর্ণদশার ছয় এবং সাত নম্বর কক্ষে জোড়াতালি দিয়ে থাকছেন। কোন উপায় না থাকা এ মানুষটি আগে বেড়িবাঁধের স্লোপে থাকতেন। এখন তো একটু ঠিকানা হয়েছে, তাই পড়ে আছেন। তাও বৃষ্টিতে সবাই কাকভেঁজা হয়ে থাকেন। পানিতে মাটির ফ্লোর তলাইয়া কাদা হইয়া যায়-এমনটিই বললেন। দশ নম্বর ব্যারাকের পাঁচ নম্বর কক্ষটির কিছু নেই। চাল-বেড়া সব উধাও। এখন সিম গাছে ভরে গেছে। যেন সবজির বাগাান। বরাদ্দ পাওয়া শেফালী বেগম অভাবের কারণে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টএ কাজ করেন। একই দশা চার নম্বর কক্ষের সোহেল/তানিয়ার। দশটি ব্যারাকের এক শ’ কক্ষের অন্তত ৩০টি খালি পড়ে আছে। থাকার উপযোগিতা নেই। আবাসনটির সংগঠনের সভাপতি জামাল হাওলাদার জানালেন, ২০০৮ সালে নির্মাণের সময় নি¤œমানের খুটি, এ্যাঙ্গেল, টিন ব্যবহার করা হয়েছে। মাটির ফ্লোর থাকায় বেশি সমস্যা হয়েছে। এরপরে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন তান্ডবে আবাসনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। অর্ধেক কক্ষের চাল বেড়া উড়িয়ে নেয়। আর মেরামত করা হয়নি। চাল-বেড়া যে যার মতো পলিথিন, কলাপাতা দিয়ে বেড়া দিয়ে থাকছে। শীতকালে বাতাস পর্যন্ত ঠেকানো যায় না। অধিকাংশ কক্ষের এমন বেহাল দশা। একটি রান্নাঘর ও টয়লেট ব্যবহার উপযোগী নয়। আয়শা বেগম-রাজ্জাক গাজী দম্পতি বললেন, ‘প্যাডের জ¦ালা মিডামু, না ঘরের চাল ঠিক করমু। ভিক্ষা করে এ দম্পতির সংসার চলে। আছে শধু আবাসনের এই ঠিকানাটুকু। আর কিছুই নেই। গামুরিবুনিয়া মৌজার সাড়ে আট বিঘা খাস জমিতে এই আবাসনটি করা হয়েছে। নয় নম্বর ব্যারাকের এক নম্বর কক্ষের কোহিনুর-লালন মৃধা দম্পতি জানান, চারজনের সংসার নিয়ে এখানে থাকছেন। কোহিনুর বললেন, ‘বাবার বাড়ি থেইক্যা তিনটি গরু বেইচ্যা ৮৫ হাজার এবং ৩০ হাজার টাহা লোন কইর‌্যা ঘরডা সারছি’। তারপরও বেড়া মেরামত বাকি রয়েছে। এসব কক্ষে বসবাস করা ৭০ পরিবারের আড়াইশতাধিক হতদরিদ্র মানুষের দাবি ঘরগুলো মেরামত করে দেয়া হোক। টয়লেটগুলো মেরামত করা ও টিউবওয়েল বসানো হোক। ছেলেমেয়েদের সকালের শিক্ষার জন্য কমিউনিটি সেন্টার এবং পুকুরের ঘাটলা দুইটি মেরামত করা হোক। তবে এসব মানুষও জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আবাসনের ঘাটলা ও কমিউনিটি সেন্টার করার জন্য টাকা দিছিল, সেই টাকা এক কর্মকর্তা কাজ না করে তুলে নিয়েছে। তারা এর প্রতিবাদে কলাপাড়ায় গিয়ে প্রতিবাদ সভাও করেছেন বলে এসব মানুষ জানালেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরকে মোবাইল করলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
×