ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ৪৫৫ ভূমিহীনের জন্য বসত বাড়ি

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ৩০ নভেম্বর ২০২০

যশোরে ৪৫৫ ভূমিহীনের জন্য বসত বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে জমি নেই, ঘর নেই এমন ৪শ’ ৫৫ পরিবারের জন্য খাস জমি ও সেমিপাকা সরকারী বাড়ি বরাদ্দ আসলেও সুবিধামতো সব জমি সঙ্কুলান হচ্ছে না। যে কারণে দু শ’ বাড়ি নির্মাণে বরাদ্দের টাকা ফিরে যাওয়ার শঙ্কা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বাড়ি প্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা হিসেবে যশোরে বরাদ্দ ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আগামী দু’মাসের মধ্যে ব্যয় করে নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় খাস জমির খোঁজে ও মাপজোকে বিরামহীন মাঠে রয়েছেন ভূমি বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তাগণ। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে দরিদ্রদের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ জমি আছে এমন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয় সরকারীভাবে। এ ব্যাপারে মুজিব জন্মশত বর্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরে বৃহৎ কর্মসূচী হাতে নেয় সরকার। এবার জমি বাড়ি কিছুই নেই এমন ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনে দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচী শুরু হয়। এর আওতায় যশোর সদর উপজেলায় ৪শ’ ৫৫টি পরিবারকে খাস জমি ও বাড়ি বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশনা আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ থেকে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা তৈরি করে ২০২০। দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের যুগ্ম সচিব আবু বক্কর সিদ্দিকী গত ১৪ অক্টোবর যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র পাঠান। স্ব স্ব উপজেলার ভূমি সহকারী কমিশনারের মাধ্যমে টেকসই গৃহ নির্মাণ করার মতো খাস জমি বাছাই করে কমপক্ষে ২ শতক জমি দিয়ে বাড়ি করে দেয়ার সিডিউল দেয়া হয়। দু’কক্ষ একটি বাথরুম ও একটি রান্না ঘরের সেমি পাকা বাড়ি (দেয়াল পাকা টিনের চাল) বিপরীতে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আবার এই বাড়ি ১৯৮৮ সালের বন্যার বিপদ সীমার ওপর পর্যন্ত মাটি ভরাট করে গৃহ নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত নক্সা অনুযায়ী দেশের ২২টি জেলার ২০ হাজার ৩শ’ ৭৩টি পরিবারকে গৃহ দেয়ার জন্য ৩শ’ ৪৮ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভূমিহীন বাছাই সম্পন্ন হয়েছে, জমি শনাক্ত শেষের পথে। দ্রুতই নির্মাণ শুরু হবে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রশাসককে সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে সদস্য সচিব, এছাড়া সদস্য করা হয়েছে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকের নিযুক্ত দুজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও কমিটি করা হয়। এই কমিটি ভূমিহীন বাছাই সম্পন্ন করতে পারে সবার জন্য বাড়ি করে দেয়ার মতো বিধি মোতবেক খাস জমি সঙ্কুলান করতে পারছে না। যে কারণে বরাদ্দ পাওয়া ৪৫৫ পরিবার খাস জমিতে সরকারী বাড়ি পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশনা কি তা এখনও পরিষ্কার নয়। আবার প্রায় একই নক্সার বাড়িতে প্রায় বরাদ্দ এক লাখ কমে যওয়ায় নির্মাণের মান নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ ও তার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, চলমান প্রকল্প নিয়ে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে নীতিমালা অনুযায়ী সুবিধামতো জমি মিলছে না। নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ করা যাবে না। ১৯৮৮ সালের বন্যার বিপদ সীমার ওপরে মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। আবার যে নক্সায় বাড়ি করতে বলা হচ্ছে গতবছরের প্রকল্পে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। আবার এবারের প্রকল্পে বাড়ি প্রতি বরাদ্দ মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এরপরও এখন বড় সমস্যা, সুবিধামতো খাস জমি মিলছে না। ভূমি অফিসারগণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দিন রাত কাজ করছেন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে।
×