ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জবির গেটের সামনে বাস কাউন্টার দুর্ভোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারীরা

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ২৯ নভেম্বর ২০২০

জবির গেটের সামনে বাস কাউন্টার দুর্ভোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ॥ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবাই হাত উঁচিয়ে, গা বাঁচিয়ে কোনো রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত পৌঁছার চেষ্টা করছেন। কারণ জবির মূল ফটকের সামনের রাস্তাটিতে জ্যাম লেগে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ ছাড়া ফটকসংলগ্ন রাস্তার উভয় পাশ রয়েছে হকার এবং গেটের সামনেই রয়েছে বাস কাউন্টার। এখানকার এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন দিয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বাস ও ফুটপাথে বাস কাউন্টার। যে ফুটপাথ ব্যবহার করে সবসময় যাতায়াত করছে পথচারীরা। এ অবস্থাতে এসব ফুটপাথের ওপর বাস কাউন্টার থেকে টিকেট কাটার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া সাধারণ মানুষ। বাসগুলার মধ্যে অন্যতম তানজিল, বিহঙ্গ, সাভার পরিবহন, ভিক্টর ক্লাসিক, ৭ নাম্বার, আজমেরী গ্লোরী। অন্যদিকে জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা যাওয়ার জন্য লেগুনা পরিবহনগুলোও ক্যাম্পাসের সামনের ফটক দিয়ে যাতায়াত করছে। গুলিস্তানগামী টমটম ঘোড়ার গাড়ির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে উঠা নামা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রয়েছে তিনটি রাস্তার সংযোগ। প্রতিটি রাস্তারই উভয় দিক থেকে গাড়ি চলাচল করছে। রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী সেখানে গাড়ি চলাচলের হার মাত্রাতিরিক্ত। এ ছাড়া দেখা যায় মূল ফটকের বাইরে ফুটপাতগুলোতেও নেই শান্তিতে চলাচলের উপায়। সেগুলো হকারদের দখলে। রয়েছে লোকাল বাসগুলোর টিকিট কাউন্টার, যেখানে সর্বদা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। আর বাঁ দিকে জবির দেয়ালসংলগ্ন ফুটপাতে চা দোকান আর রিকশা গ্যারেজ। ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং বের হতেও বিপাকে পড়তে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। সারাক্ষণ জ্যাম লেগেই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রধান ফটকের পাশেই ৮টি বাস কাউন্টার। এই কাউন্টারগুলোতে সর্বদা ভিড় লেগেই থাকে। ফলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও বের হতে বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। দীর্ঘদিন থেকে বিষয়টি দেখেও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রধান ফটকের সামনে বাস কাউন্টারের কোন অনুমতি নেই। কিন্তু বিষয়টি চালক পক্ষ মানছে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের এমন অসুবিধার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, সাড়ে সাত একরের ছোট ক্যাম্পাস হওয়ায় এর প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীই থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে বা বাসায়। ফলে সপ্তাহের পাঁচ দিনই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পদচারণে ভরে ওঠে ক্যাম্পাস। এই যানজটের কারণে নিত্যদিন তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকলেও ইভিনিং শিক্ষার্থীও এমন হয়রানির শিকার হয়। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার একটিমাত্র ফটক হওয়ায় প্রতিদিন সকালে ভিড় জমে শিক্ষার্থীদের। প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্ক-সদরঘাট যাতায়াতের জন্য লোকাল বাসগুলোর সর্বশেষ কাউন্টার এখানে থাকায় বাসের চাপও থাকে সব সময় বেশি। জবি ছাড়াও এর আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর একমাত্র চলাচলের রাস্তা হলো জনসন রোড ও লক্ষ্মীবাজার রোড। আর এ দুই সড়কের মিলনস্থল হলো জবির মূল ফটকের সামনে। ফলে সব সময় লেগে থাকে যানজট। চলতি মাসে বাহাদুর শাহ পরিবহনের দুর্ঘটনার শিকার হন দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘চা খেয়ে টিএসসি থেকে ফেরার সময় বাহাদুর শাহ পরিবহনের একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। এতে হাত ও বুকে প্রচ- ব্যথা পাই। তবে সরাসরি না লাগায় গুরুতর কোনো সমস্যা হয়নি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাস এভাবে এলোমেলোভাবে জটলা পাকিয়ে থাকে না। আমি আশা করবো পরিবহন মালিকেরা যেন গাড়িগুলো এভাবে না রাখে। আমরা অতীতে লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা ব্যাংকের সামনে থেকে এক সারিতে গাড়ি রাখত কিন্তু এখন আমরা লক্ষ্য করছি যে, তারা রাস্তার দুই সারিতেই গাড়ি রাখছে। যারফলে দক্ষিন অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যারয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পরিবহনের যারা দায়িত্বে আছে তাদেরকেউ অনুরোধ জানাই পাশাপাশি প্রশাসনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিও অনুরোধ জানাই যে, জবি শিক্ষার্থীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত যাতে আর দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়।
×