স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের পয়সা দিয়ে ভ্যাকসিন কেনার ক্ষমতা নেই। তাই প্রতিটি মানুষের জন্য বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর লালবাগের আমলীগোলা পার্কে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের ব্যবস্থাপনায় দুই মাসব্যাপী কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজ কার্যালয়ে অপর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এরশাদের ছোট ভাই ও সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, ১৯৯০ সালে যেটুকু আন্দোলন হয়েছে, সেটাকে রাষ্ট্রপতি এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর আন্দোলন বলা যেতে পারে, কিন্তু সেটা কোনভাবেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হতে পারে না। কারণ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার স্বৈরাচারী সরকার ছিল না।
জিএম কাদের বলেন, যারা সারাদিন খাবার জোগাড় করতে সংগ্রাম করে, যারা লকডাউন হলে ক্ষুধার তাড়নায় আইন ভঙ্গ করে খাবারের জন্য- তাদের পক্ষে পয়সা দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, শীতের সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। কিন্তু করোনা চিকিৎসায় দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেই মন্ত্রণালয়ের। রাজধানীতে কিছু বেসরকারী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট ও অক্সিজেন সহায়তা আছে কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতালগুলোতে লাইফ সাপোর্ট ও অক্সিজেন সহায়তা নেই বললেই চলে। আবার সাধারণ মানুষের পক্ষে বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ নেই।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিয়ে ভাল হচ্ছেন, অথবা মারা যাচ্ছেন। তাই দেশের প্রতিটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বলেন, একটি মানবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় জাতীয় পার্টি সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশের মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। শুধু জাতীয় পার্টিই পারে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারবে জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এনএমএইচ বুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসহাক ভূইয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, যুগ্ম-দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টি নেতা কাজী জামাল উদ্দিন, আবদুল কাদের, বজলুর রহমান, মোঃ রফিকুল আলম প্রধান প্রমুখ।
ফিরোজ রশিদের অনুদান ॥ দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী ফিরোজ রশিদ।
শনিবার রাজধানীর টিকাটুলিতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কাজী ফিরোজের পক্ষে এ অনুদান তুলে দেন ঢাকা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশীষ বর্ধন। এ সময় ৪০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম মিন্টু, ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকনুজ্জামান রোকন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর লাভলি বেগম, জাতীয় পার্টি ওয়ারী থানা সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সেন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯০ সালের আন্দোলন স্বৈরাচারবিরোধী ছিল না ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ১৯৯০ সালে যেটুকু আন্দোলন হয়েছে, সেটাকে রাষ্ট্রপতি এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর আন্দোলন বলা যেতে পারে, কিন্তু সেটা কোনভাবেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হতে পারে না। কারণ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার স্বৈরাচারী সরকার ছিল না।
তখনকার সরকার ছিল আদালত কর্তৃক স্বীকৃত গণতান্ত্রিক সরকার দাবি করে তিনি বলেন, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাও সাংবিধানিক পন্থায়। শনিবার বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কায়েমী স্বার্থবাদীরাই তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ওই আন্দোলনে ইন্ধন জুগিয়েছে। আর সে কারণেই উপজেলার মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কার, ওষুধ নীতি, ভূমি সংস্কার এবং বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ দেশের জনগণ।
তিনি বলেন, যারা একদা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে- তাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। কিন্তু আমরা আমাদের স্বকীয়তা বিসর্জন দেইনি। এখন আমরা বিরোধী দল। আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে যেকোন নির্বাচনে আমরা অংশ নেব।
দলের অতিরিক্ত মহাসচিব এ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জহিরুল ইসলাম জহির, সরদার শাহজাহান, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, নুরুল ইসলাম ওমর, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, তোফাজ্জল হোসেন, সাইফুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।