ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্মৃতির জানালা খুলে দেখা

যে ম্যারাডোনা শুধুই বাংলাদেশ ও বাঙালীর

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৯ নভেম্বর ২০২০

যে ম্যারাডোনা শুধুই বাংলাদেশ ও বাঙালীর

মোরসালিন মিজান ॥ বাংলাদেশের কোন গঞ্জে-গ্রামে আপনি যেতে চান? ম্যারাডোনাকে সেখানেই পাবেন। কী আশ্চর্য, না? সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থেকেও পুরোদস্তুর বাঙালীর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ দেশের ছোট বড় শহরে, অজপাড়া গাঁয়ে গিয়ে চারপাশে তাকালে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে ম্যারাডোনাকে একটিবারের জন্যও অন্যের মনে হয় না। হবে না। বাঙালী তার সহজাত আবেগ আর ফুটবলপ্রীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে নামটিকে বড় আদরে মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান রাষ্ট্রীয় কাঠামো জন্মের সনদ পাসপোর্ট ভিসার উর্ধে স্থান হয়েছিল ভালবাসার। এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই ভালবাসা। আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার ম্যারাডোনার প্রতি বাংলাদেশের এই প্রেম যেমন অকৃত্রিম, তেমনি বহু বছরের পুরনো। মোটামুটি হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, গোটা দুনিয়ার মতো ’৮৬-এর বিশ্বকাপেই তাকে আবিষ্কার করে এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। টেলিভিশন তখন যারপরনাই দুর্লভ। এর পরও নানা সাধনায় ফুটবল ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার উপভোগ করে বাঙালী। সে সময়ের আরও তারকাদের কথা উল্লেখ করে খ্যাতিমান ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী বলছিলেন, মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ আসরে তারকা ফুটবলারের ছড়াছড়ি। ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, ব্রাজিলের সক্রেটিস, ক্যারেকা, জিকো, ইতালির পাওলো রোসিদের মতো বিশ্বখ্যাত তারকারা মাঠ দাপিয়ে বেরাচ্ছেন। কিন্তু অচিরেই সবাইকে পেছনে ফেলে নিজেকে উদ্ভাসিত করলেন ম্যারাডোনা। পায়ের জাদু বলতে যা বোঝায়, তা স্পষ্ট দেখাতে লাগলেন তিনি। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার করা দুটি গোল সারা দুনিয়ার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল। একটি গোল ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি।’ পাঁচজন ইংলিশ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে করা গোল তাক লাগিয়ে দিল ফুটবল বিশ্বকে। তবে দীর্ঘ আলোচনা সমালোচনার বিষয় হলো তার হাতের স্পর্শে করা প্রথম গোলটি। চায়ের দোকানে বসে বাংলাদেশের তরুণরাও গোলের আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত হলেন। দিন শেষে পক্ষ নিলেন ম্যারাডোনারই। সবার থেকে আলাদা করা যায় এমন খেলা ও ‘হ্যান্ডস অব গড’ ভিন্ন ভিন্ন দুটি অনুভূতিকে ছুঁয়ে দিয়ে গেল। ফাইনালে গোল না পেলেও, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখলেন ম্যারাডোনাই। সালাম মুর্শেদী বলেন, ১৯৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক হিসেবে গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল দিয়েগোর নাম। সুখ্যাতি। নিয়মিত ছবি ছাপা হতে লাগল ঢাকার পত্রপত্রিকায়। ছবি দেখে সাক্ষাতকার ইত্যাদি পড়ে আরও জানার সুযোগ হলো তাকে। আমরা ফুটবলাররা তখন থেকেই তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতে লাগলাম। সাধারণ ভক্ত অনুরাগী সংখ্যাও হু হু করে বাড়তে লাগল বলে জানান তিনি। অবশ্য দিয়েগো ম্যারাডোনা পুরোপুরি বাংলাদেশের হয়ে উঠলেন নব্বইয়ের দশকে। আগের বিশ্বকাপটি যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই শুরু করল বাংলাদেশ। শুরু ও শেষের যোগসূত্রটি ম্যারাডোনা। স্মৃতির জানালা দিয়ে এখনও স্পষ্ট দেখতে পাই, বাংলাদেশে ফুটবল তখন ছেলে বুড়ো সকলের। স্কুলের মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, স্টেডিয়াম- সবখানে খেলাটির জয়জয়কার। আবাহনী মোহামেডান নিয়ে ধুন্ধুমার সব কা- ঘটে যাচ্ছে। ঠিক তখন শুরু হয়ে গেল ইতালি বিশ্বকাপ। ঘরোয়া খেলার উত্তাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঙালী। তখনই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হলো ম্যারাডোনাপ্রেম। তার নাম জপতে শুরু করল সবাই। ছবি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। আজকের দিনে সব কিছুই সহজলভ্য বটে। সে সময় তা ছিল না। ঘরে ঘরে তো দূরের কথা, কয়েক উপজেলা ঘুরে দেখা পাওয়া যেত না বিদ্যুতের। টেলিভিশনও ছিল দুর্লভ। বিশ্বকাপ সামনে রেখে টিভি আছে এমন বাড়ির লোকদের সঙ্গে অনেকেই সখ্য গড়ার চেষ্টা করতেন। ক্লাবে হাটে বাজারে আরও বড় পরিসরে টিভি দেখার ব্যবস্থা করা হতো। এমনকি টেলিভিশন ও ব্যাটারি ভাড়া করে আনা হতো। ছোট্ট স্ক্রিনে রাজ্যের লোক বিশ্বকাপ দেখতেন। কেউ আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। কেউ আরও আগে থেকে ব্রাজিলের। তা-ই থাকলেন। তবে ১৪ ইঞ্চি সাদা কালো নিক্কন বা ফিলিপস টিভিতে ম্যারাডোনাকে খুঁজতেন সবাই। অধিকাংশের পর্যবেক্ষণ এই যে, ম্যারাডোনাকে খুঁজতে গিয়েই আর্জেন্টিনার সন্ধান পায় বাংলাদেশ। দেশটির পক্ষে জুটে যায় বিপুল সমর্থন। শহরের বাড়ির ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ানো হয়। গ্রামে গাছের মগডালে ওড়ে সেই পতাকা। একই সময় বিপুল আগ্রহ দেখা যায় ম্যারাডোনার ছবি নিয়ে। কোথায় নেই তার ছবি। স্কুল শিক্ষার্থীর লেখার খাতার প্রচ্ছদে সযত্নে তিনি ছিলেন। পেপার কাটিং হয়ে দেয়ালে ছিলেন। বিশেষ করে জনপ্রিয় হয়েছিল তার ছবি সংবলিত ভিউকার্ড। হাজার হাজার ভিউকার্ডে বিশ্বকাপ হাতে ম্যারাডোনা। বিভিন্ন মাপের পোস্টারে তিনি। এসব ছবি পড়ার টেবিলে, বইয়ের পাতার ভাঁজে, চায়ের স্টলে, মুদি দোকানে, দর্জি বাড়িতে সযতেœ সাজিয়ে রাখা হতো। ম্যারাডোনার একটি ছবি যার কাছে নেই, তার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ধরে নেয়া হতো অসম্পূর্ণ। যতদূর মনে পড়ে, ’৯০ সালে টি-শার্টেও ফুটে উঠেছিল ম্যারাডোনার ছবি। দু’ হাত ওপরের দিকে প্রসারিত, উচ্ছ্বাস করতে করতে ছুটছেন তিনি, সে কি ভুলা যায়? সারাদেশেই কিনতে পাওয়া যেত বিশেষ এই টি-শার্ট। বুকে প্রিয় তারকাকে নিয়ে পাড়া-মহল্লা ঘুরে বেড়াতেন তরুণরা। কিশোররা। গভীর রাতে এই টি-শার্ট গায়ে দিয়েই টেলিভিশনের সামনে বসতেন প্রিয় তারকার খেলা দেখতে। এতকাল আগে কারা ওইসব টি-শার্ট তৈরি করেছিলেন তা আজ আর জানা যায় না। তবে স্মৃতি বেঁচে আছে লক্ষ কোটি ভক্তের হৃদয়ে। নব্বইয়ের বিশ্বকাপে তারকাদের তারকা ম্যারাডোনা। তার পায়ে বল গেলে হৈ হৈ করে ওঠে টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা বাঙালী। ম্যাচের আড়ে পড়ে জমে ওঠে আড্ডা। চায়ের কাপে ঝড় বয়ে যায়। ঝড় তুফানের কেন্দ্রে থাকেন ম্যারাডোনা। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে তছনছ হয়ে যায় স্বপ্ন। শেষ মুহূর্তে বিতর্কিত পেনাল্টি শটে পরাজিত হয় ম্যারাডোনার দল। সেই বুক ভেঙ্গে যাওয়ার গল্প, চোখ ভিজিয়ে কান্নার কথা সে সময়ের কেউ অন্তত কোনদিন ভুলতে পারবে না। মজার বিষয় হলো, এই পরাজয়ে ম্যারাডোনাপ্রেমে ভাটা তো নয়ই, বরং জোয়ারের সৃষ্টি হয়। কারণ আগের ম্যাচগুলো দিয়ে ততদিনে তিনি সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা চারপাশ থেকে ম্যারাডোনাকেই রুখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সফল না হয়ে মারাত্মক আঘাত করতেন তার পায়ে। মাঠে ছিটকে পড়তেন ম্যারাডোনা। ব্যথায় ককিয়ে উঠতেন। টেলিভিশনের পর্দা হয়ে ব্যথা এসে তখনি লাগত বাঙালী দর্শকের বুকে! ফাউল খেলা ফুটবলারদের ভিলেন হিসেবে গল্প আড্ডায় তুলোধুনো করা হতো। অবশ্য বছরের পর বছর বাঙালীর গালমন্দ শুনেছেন ফাইনালের সেই বিতর্কিত রেফারি কোডেসালের। অন্যদিকে, ট্র্যাজেডি হিরোর সম্মান পেয়েছিলেন ম্যারাডোনা। সেবার ম্যারাডোনার চোখের জলে ভেসেছিল গোটা বাংলাদেশ। ভাবা যায়? ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে এসে দিয়েগো ম্যারাডোনার ভক্ত বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। সবাই উন্মুখ হয়ে থাকে, এবার আর মিস হবে না। গতবারের অধরা বিশ্বকাপ ঠিকই ফেরত আনবেন ম্যারাডোনা। আমেরিকায় বিশ্বকাপ শুরুর আগে মেগা প্রস্তুতি চলতে থাকে বাংলাদেশে। সারাদেশেই উড়তে দেখা যায় আর্জেন্টিনার নীল সাদা পতাকা। কার পতাকার দৈর্ঘ্য কত তা নিয়ে চলে মধুর প্রতিযোগিতা। শহরের বিভিন্ন বাড়ির ওপর থেকে নিচের দিকে পতাকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এমনকি বাড়ির রং করা হয় আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে। তারও আগে থেকে ম্যারাডোনার পোস্টারে ভিউকার্ডে ছেয়ে যায় দেশ। একটি ভিউকার্ডের কথা খুব মনে পড়ে। সেখানে আক্রান্ত ম্যারাডোনা। পেছন থেকে তাকে অন্যায়ভাবে আঘাত করছে প্রতিপক্ষের খেলোয়ার। নব্বইয়ের বিশ্বকাপের ছবি। নিচে ক্যাপশনের মতো করে লেখা হয়েছে : ‘ওরা আমাকে এত মারে কেন?’ যেন সারা বাংলাদেশের মানুষের হয়েই প্রশ্ন তুলেছিল ভিউকার্ডটি। এর পর নতুন আশা নিয়ে খেলা শুরু হলো। সবে শুরু। এরই মাঝে অভাবনীয় দুঃসংবাদ! মাদক গ্রহণের প্রামাণ পাওয়া গেছে অভিযোগ তুলে ম্যারাডোনাকে ছেঁটে ফেলা হয় বিশ্বকাপ থেকে। তখন ডিশ সংযোগ নেই। তবে টেলিভিশনে সিএনএন সম্প্রচার হতো। সেখানেই দেখা গেল ব্রেকিং নিউজটি। বাংলাদেশের ভক্তদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ ঘটনাকে ফিফার ষড়যন্ত্র হিসেবে নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন ভক্তরা। ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় ঢাকায় যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয় তার একটিতে যোগ দিয়েছিলেন আজাদ প্রোডাক্টসের সহকারী ব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল। হ্যাঁ, আজাদ প্রোডাক্টস থেকেই মূলত ম্যারাডোনার পোষ্টার ভিউকার্ডগুলো প্রকাশ করা হত। সে স্মৃতি তুলে ধরে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি আমি নিজেও ছিলাম ম্যারাডোনার ভক্ত। কিন্তু তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে শুনে মন ভেঙ্গে গিয়েছিল। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম। আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল করে পল্টন থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সে ছবি তখনকার সব জাতীয় দৈনিকে গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল বলে জানান তিনি। ভিউকার্ডে পোস্টারে ম্যারাডোনার ছবি প্রসঙ্গে কথা হয় আজাদ প্রোডাক্টসের কর্ণধার এম এ আজাদের সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমি শুরু করেছিলাম টেলিভিশন ও সিনেমার তারকাদের পোস্টার দিয়ে। কিন্তু অচিরেই মহাতারকা হয়ে এলেন ম্যারাডোনা। আমার ব্যবসায়ী জীবনে, বলা যায়, সবচেয়ে বেশি ভিউকার্ড পোস্টার বিক্রি করেছি ম্যারাডোনার। খুব সম্ভবত ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই তার ভিউকার্ড পোস্টার ছাপতে শুরু করি আমরা। ব্যাঙ্কক থেকে ম্যারাডেনার ছবি স্ক্যান করে আনা হত। ছাপা হতো ঢাকায়। এর পর যত দিন গেছে ততই চাহিদা বেড়েছে। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের সময়টাতে ম্যারাডেনার ছবি বিপুল বিক্রি হয়। আরও বেশি বিক্রি হয় ১৯৯৪ সালে। আমাদের চকবাজারের শোরুমে দিন রাত ভিড় লেগে থাকত। এখান থেকেই ভিউকার্ড পৌঁছে যেত প্রত্যন্ত গ্রামে। পেলেসহ অন্য আরও তারকা ফুটবলারের ভিউকার্ড ছাপলেও, সুপাস্টার ম্যারাডোনার বিক্রি একচেটিয়া ছিল বলে জানান তিনি। এখন পোস্টার ভিউকার্ডের দিন শেষ হয়েছে। কিন্তু ম্যারাডোনা রয়ে গেছেন আগের মতোই। সর্বশেষ বিশ্বকাপেও দেশের প্রতি প্রান্তে বিশাল বিশাল প্রতিকৃতি দেখা গেছে তার। নীল সাদা পতাকার দৈর্ঘ্যে যে রেকর্ড হয় প্রতিবার, সেখানেও ম্যারাডোনার ১০ নম্বর জার্সি যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে। আগেই উল্লেখ করেছি, শুরুর দিকে টেলিভিশনও ছিল দুর্লভ বস্তুটি। আর কম্পিউটার ইন্টারনেট? কল্পনার অতীত। ইউটিউব, ফেসবুক কোথায় পাবে লোকজন? এর পরও, আজ ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে পৌঁছে গিয়েছিল ম্যারাডোনা নামটি। এর আগে দ্বিতীয় কোন বিদেশী এমন হাওয়ার মতো, জলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। গাঁয়ের আলপথ ধরে হেঁটে যাওয়া কৃষক, নৌকার মাঝি, চা দোকানি- কে বুকে লালন করছে না স্বপ্নের নায়ককে? তিনি আর্জেন্টিনার, এ কথা কখনও কখনও ভুলেই যায় আবেগী বাঙালী। মনে রাখে শুধু বাংলাদেশের ম্যারাডোনাকে! ফুটবলের আলোচনায় নয় শুধু, যে কোন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের উদাহরণ দিতে অবলীলায় ম্যারাডোনার নাম নেন বাংলাদেশের ভক্তরা এবং নিশ্চিত বলা যায়, ট্র্যাজেডি হিরোর মৃত্যু আরও বেশি জীবন দান করবে বাঙালীর ভালবাসাকে। সব শেষে বলি, বাংলাদেশ নামের এই ভূখ- হতে ম্যারাডোনার প্রতি যে ভালবাসা দেখানো হয়েছে তাকে শুধু ভালবাসা বললে খুব ভুল করা হবে। সেইসব দিন, যে কোন বিবেচনায়, ইতিহাসের উপাদান হয়ে থাকবে। হয়ত কোনও দিন আমরাই দেখবো, ম্যারাডোনাকে আরও কতভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা জানতে বাংলাদেশে আসছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীরা। না, একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আবেগে, হ্যাঁ, কণ্ঠ বুজে আসছে। চোখজুড়ে কান্না। তবুও সত্যটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি শুধু। বলছি, ম্যারাডেনা আমাদের। আমাদেরও।
×