ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৫ দিনের মধ্যে আসছে দুটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৯ নভেম্বর ২০২০

১৫ দিনের মধ্যে আসছে দুটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ করোনার কারণে সৃষ্ট মহাসঙ্কটের মধ্যেই বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুখবর দিল সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আসছে দুটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আসবে ৪২তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। এর পর সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি পাবেন চাকরিপ্রার্থীরা। জানা গেছে, করোনার মধ্যে পরীক্ষা আটকে থাকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই দ্রুত অন্তত দুুটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনার কারণে পরীক্ষা গ্রহণ অসম্ভব হলেও যাতে কারও চাকরির বয়স না চলে যায়, সেই চিন্তা মাথায় রেখেই অন্তত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা। কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসাইন শনিবার জনকণ্ঠকে চাকরি প্রার্থীদের সুখবরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আমরা দ্রুত দুটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। করোনার কারণে চাকরি প্রার্থীদের যাতে চাকরির বয়স চলে না যায়, তাই পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে সমস্যা থাকলেও বিজ্ঞপ্তিটা প্রকাশ করে ফেলছি আমরা। চেয়ারম্যান জানান, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে। এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরেকটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারব, আশা করি। জানা গেছে, করোনার কারণে সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাও আটকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর দুই হাজার ১৬৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ওই পরীক্ষা করোনার কারণে একদিকে যেমন নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে নতুন চাকরি প্রার্থীদেরও চাকরির বয়স পার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চলমান সঙ্কটের কারনে চাকরির বয়স বৃদ্ধিরও দাবি উঠেছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার নিয়মিত বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত যাতে কারো পরীক্ষার সঙ্কটের কারণে বয়স চলে না যায় সেই বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এরপর করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে পরীক্ষার পরিবর্তে চাকরি প্রার্থীদের জীবন রক্ষাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে ৪২তম বিসিএসের (বিশেষ বিসিএস) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে অন্তত দুই হাজার। এর পর ৪৩তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮১৪ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগের সময় পদসংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিধিমালাও সংশোধন করা হয়েছে। এর আগে করোনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুসারে ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নেয়া হয়। তারা ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে। স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন হিসেবে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। করোনায় পাঁচ হাজার ৫৪ নার্স নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২০১৮ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে। অন্যদিকে ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮১৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ চাহিদাপত্র পিএসসিতে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৪৩ জন, অডিটে ৩৫ জন, ট্যাক্সে ১৯ জন, কাস্টমসে ১৪ জন, সমবায়ে ২০ জন, ডেন্টাল সার্জন পদে ৭৫ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারে ৩৮৩ জনকে নিয়োগের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসাইন করোনাকালে বিসিএসের উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, আসলে এখন পরীক্ষা নিতে না পারলেও প্রার্থীদের চাকরি বয়স যাতে চলে না যায় সেই চিন্তা থেকেই যথাসময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চাই আমরা। পরীক্ষা গ্রহণ এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি পরীক্ষা নিতে গিয়ে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সঙ্কট আরও বাড়বে। আমরা তেমন সঙ্কটে কাউকে ফেলতেও চাই না। আবার কারও চাকরির বয়স চলে যায় সে ক্ষতির মুখে পড়ুক তাও চাই না। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা আয়োজন করছে। দেখা যাক। আমরা সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেব। পরীক্ষা তো নিতেই হবে। তবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাটাই সবার আগে। এর আগে গত বছর ২৭ অক্টোবর দুই হাজার ১৬৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। এ বিসিএসে সর্বোচ্চ সংখ্যক নিয়োগ দেয়ার কথা শিক্ষা ক্যাডারে। শিক্ষা ক্যাডারে ৯০৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। বিসিএস শিক্ষায় ৮৯২ প্রভাষক, কারিগরি শিক্ষা বিভাগে ১০ প্রভাষক নেয়া হবে। শিক্ষার পর বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশে ১০০ জন, বিসিএস স্বাস্থ্যতে সহকারী সার্জন পদে ১১০ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০ জনকে নেয়া হবে। এছাড়া পররাষ্ট্রে ২৫ জন, আনসারে ২৩ জন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) ২৫ জন, সহকারী কর কমিশনার (কর) ৬০ জন, সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ২৩ জন ও সহকারী নিবন্ধক ৮ জন নেয়া হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১২ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী চার জন, সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট একজন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক একজন, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০ জন, সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) তিন জন নেয়া হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা পদে ২২ জন, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) পদে ১১ জন, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদে পাঁচ জন, সহকারী বেতার প্রকৌশলী পদে নয় জন, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে সারী প্রকৌশলী পদে ৩৬ জন, সহকারী বন সংরক্ষক পদে ২০ জন। সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল পদে দুজন, বিসিএস মৎস্যে ১৫ জন, পশুসম্পদে ৭৬ জন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৩ জন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৬ জন, বিসিএস বাণিজ্যে সহকারী নিয়ন্ত্রক চার জন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চার জন, বিসিএস খাদ্যে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছয় জন ও সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী দুই জন, বিসিএস গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৩৬ জন ও সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) ১৫ জনসহ মোট দুই হাজার ১৬৬ কর্মকর্তাকে এই বিসিএসে নিয়োগ করা হবে।
×