ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রেস কাউন্সিল পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা পেলেন তোয়াব খান

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২৯ নভেম্বর ২০২০

আজীবন সম্মাননা পেলেন তোয়াব খান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের তথ্য ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ প্রধান অতিথি হিসেবে এই পুরস্কার তুলে দেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তোয়াব খান হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার পক্ষে এ পদক গ্রহণ করেন তার ভাগ্নে সেলিম খান। দেশের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব তোয়াব খান ২০১৬ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও পিআইবির মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এবার প্রেস কাউন্সিলের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেলেন। প্রতিবছর প্রেস কাউন্সিল দিবসে অনুষ্ঠানটি হলেও এবার করোনায় তা পিছিয়ে যায়। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই পুরস্কার দেয়া হয়। এ ছাড়া একই দিন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুই প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তিকে প্রেস কাউন্সিল পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, সংবাদপত্রের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার স্বার্থে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বহু পদক্ষেপ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের কল্যাণে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন যা অনেক দেশেই নেয়া হয়নি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট তেমনই একটি। করোনায় সাংবাদিকদের জন্য যে এককালীন সহায়তা দেয়া হয়েছে উপমহাদেশে কোথাও তা হয়নি। প্রতিবেশী ভারতে করোনায় কেউ মারা গেলে তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা ৪ হাজার সাংবাদিককে সহায়তা দিয়েছি যা এখনও চলমান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের শুরুতে সারাদেশে ৪৫০টি পত্রিকা ছিল এখন সাড়ে ১২শ’। টেলিভিশন ছিল ১০টি, এখন ৩৫টি, আরও ১০টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। অনলাইন ছিল হাতেগোনা এখন অসংখ্য। যেভাবে গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটেছে এটাই প্রমাণ করে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন। উন্নত দেশে ভুল সংবাদ প্রকাশের জন্য সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে তা কখনও হয়নি, হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তবে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার কথাও বলেন তিনি। প্রত্যেকেই নিবন্ধন পাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যারা খারাপ উদ্দেশ্যে, ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অনলাইন চালাবে এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন পেলে তাদের ব্যতিরেকে সবাইকে নিবন্ধন দেয়া হবে। প্রেস কাউন্সিলের আইন সংশোধন করা হচ্ছে, প্রেসকাউন্সিলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ বলেন, প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গত একযুগে গণমাধ্যমের অভূতপূর্ব বিকাশ ও কল্যাণের ইতিহাস তৈরি হয়েছে। এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। এজন্য প্রচলিত আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আমরা সংসদীয় কমিটিতে নিয়ে যেতে পারব। তখন আরও নতুনভাবে প্রেস কাউন্সিল কাজ করতে পারবে। গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানিয়ে উন্নত জাতি গঠনের জন্য বস্তুগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আত্মিক উন্নয়নকে অপরিহার্য বলে বর্ণনা করেন ড. হাছান। আর সেজন্য নতুন প্রজন্মের মনন গঠনে গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে যারা মৌলবাদ-ষড়যন্ত্র-গুজবের পথ বেছে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, সকল প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। মানবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি, অনেক সূচকে ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষায় এর প্রতিফলনে ভারত ও পাকিস্তানে তোলপাড় হচ্ছে, অথচ আমাদের দেশে কেউ কেউ স্বীকার করতে চায় না। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকভাবে সরকারকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে মৌলবাদকে উস্কে দেয়, ষড়যন্ত্র-গুজবের পথ বেছে নেয়। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান বলেন, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একইসূত্রে গাঁথা। আর এই যোগসূত্র স্থাপনে গণমাধ্যম রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা। সরকার তার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ যেন একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি সেজন্য কাজ করতে হবে। যতদিন ভ্যাকসিন না আসছে এই মাস্কই আমাদের সুরক্ষা হিসেবে নিতে হবে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন সাংবাদক ইশতিয়াক রেজা এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য আব্দুল মজিদ। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ইকবাল সোবাহান চৌধুরী, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু ও প্রেস কাউন্সিল সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা ক্যাটাগরিতে দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বগুড়ার দৈনিক করতোয়াকে পুরস্কার দেয়া হয়। গ্রামীণ সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে সমকালের সহকারী সম্পাদক জাহিদুর রহমান, উন্নয়ন সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে আমাদের সময়ের স্টাফ রিপোর্টার মোঃ ইউসুফ, নারী সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের স্টাফ রিপোর্টার আরাফাত আরা, আলোকচিত্র সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ফটোসাংবাদিক শফিকুল আলমকে প্রেস কাউন্সিল পদক দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে পদক দেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে আজীবন সম্মাননা হিসেবে প্রথমবছর সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার খান চৌধুরী এবং গতবার সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারকে আজীবন সম্মাননা (মরণোত্তর) পুরস্কার দেয়া হয়।
×