ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাবল হ্যাটট্রিক করেও উপেক্ষিত সাদিয়া!

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২৮ নভেম্বর ২০২০

ডাবল হ্যাটট্রিক করেও উপেক্ষিত সাদিয়া!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মহিলা ফুটবল লীগে শনিবার দুটি খেলা খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশ বড় জয় কুড়িয়ে নিয়েছে। তারা ৭-১ গোলে হারায় এফসি উত্তরবঙ্গকে। এই ম্যাচে ডাবল হ্যাটট্রিক করেন বিজয়ী দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার সাদিয়া আক্তার। এই লীগে এটাই প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকের নজির। সাদিয়া লীগের প্রথম পর্বে খেলেননি কোন দল না পাওয়াতে। দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেন জামালপুরে। এ নিয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। আগের ম্যাচে কুমিল্লা ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ১টি গোল করেছিলেন। ফলে চলতি লীগে তার গোলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭-এ। জামালপুরের আনিকা অপর গোলটি করেন। বিজিত দলের রুনা একমাত্র গোলটি করেন। অপর ম্যাচে বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ২-১ গোলে হারায় কুমিল্লা ইউনাইটেড ক্লাবকে। বিজয়ী দলের সাদিয়া এবং ইতি ও বিজিত দলের থুইয়েনু। বিস্ময়কর ব্যাপার-চলতি মহিলা ফুটবল লীগে প্রথম হ্যাটট্রিকের নজির গড়েও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চরম অবহেলা-উপেক্ষার শিকার হয়েছেন সাদিয়া। বাফুফে সংবাদ মাধ্যমে খেলার যেসব তথ্য পাঠায়, তাতে দেখা যায় খেলোয়াড় তালিকায় সাদিয়ার নামটি ভুল ও বিকৃতভাবে লেখা হয়েছে ‘সাদিয়া সরকার’ নামে। শুধু তাই নয়, নামের পাশে বাফুফের কেউ একজন সাদিয়ার নামের পাশে হাতে লিখে রাখেন ‘বিথী’ নামটি! এখানেই শেষ নয়, বাফুফে শনিবার খেলার যে ছবি পাঠায়, তাতে ছিল না, সাদিয়া ও তার দলের ছবি! নরসিংদীর পলাশের চরসিন্দুরের চলনা গ্রামের মেয়ে চতুর্দশী সাদিয়া। জন্ম ২০০৪ সালের ২০ নভেম্বর। তার ফুটবলে আসার গল্পটা এরকম : চলনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১২ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে শুরু। প্রথম কোচ মোহাম্মদ রাজ্জাক। পরের ধাপে নরসিংদী মহিলা জেলা ফুটবল দলে খেলা। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে খেলতে আসা। সেখানে তার খেলা দেখে বাফুফে তাকে ক্যাম্পে ডাকে। এরপর ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় খেলতে যান এএফসি অ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে। কোচ ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। ওখানে লাল-সবুজ বাহিনী তৃতীয় হয় এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি অর্জন করে। ওই আসরে সাদিয়া একটি ম্যাচ খেলেছিলেন রাইট উইং পজিশনে। এরপর ২০১৬ সালে সাদিয়া তাজিকিস্তানে যান আরেকটি ‘এফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ’ খেলতে। ওই আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। এরপর ২০১৭ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের হয়ে ট্রায়াল দিতে এসে বাদ পড়েন সাদিয়া। জাতীয় দলের হয়ে খেলার ওখানেই আপাতত ইতি! তবে মাঠে নেমে ফুটবল খেলার ইতি হয়নি সাভার বিকেএসপি থেকে এবার এসএসসি পাশ করা সাদিয়ার। বিকেএসপির হয়ে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভারতে গিয়ে ‘সুব্রত কাপ’ খেলেন। প্রথমবার না পারলেও পরের দু’বারই তার দল শিরোপা জেতে। দু’বারই ছিলেন দলের ক্যাপ্টেন। এছাড়া ২০১৯ সালের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড গেমসে ফুটবল খেলেন বাংলাদেশ দলের হয়ে। এছাড়া ঢাকা বিভাগ দলের হয়ে বাংলাদেশ যুব গেমসেও খেলেছেন সাদিয়া। নামে ঢাকা বিভাগ হলেও আদতে এটি ছিল মূলত টাঙ্গাইল দল! নরসিংদীর মেয়ে, অথচ খেলোয়াড় টাঙ্গাইল দলের! কিভাবে সম্ভব হলো এটা? আসলে ওই সময় যুব গেমসে নরসিংদী থেকে নারী ফুটবল দল গঠন করা হয়নি। ফলে হতাশ হয়ে পড়েন সাদিয়া। তখন বিকেএসপির এ্যাথলেটিক্স কোচ শহীদ স্যার জানান টাঙ্গাইল মহিলা ফুটবল দল ঢাকা বিভাগ হিসেবে গঠিত হবে, সেখানে খেলোয়াড় সঙ্কট আছে। সাদিয়াকে তাদের হয়ে খেলার প্রস্তাব দিলে তিনি তা লুফে নেন। যোগাযোগ করে ট্রায়াল দেন তিনিসহ বিকেএসপির মোট ছয়জন। সবাই চান্স পান এবং সব ম্যাচেই খেলেন। ২০১৮ সালের মার্চে কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মহিলা বিভাগে সাদিয়াদের দল স্বর্ণপদক জেতে। ফাইনালে তারা ময়মনসিংহকে হারান ৩-১ গোলে। শনিবার এত বড় কীর্তি গড়েও কি কারণে সাদিয়া বাফুফের অবহেলা-উপেক্ষার শিকার হলেন, এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র তোলপাড়।
×