ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার নেতিবাচক প্রভাব

অভ্যন্তরীণ খাতে রাজস্ব আয়ের টার্গেট চ্যালেঞ্জের মুখে

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২৮ নভেম্বর ২০২০

অভ্যন্তরীণ খাতে রাজস্ব আয়ের টার্গেট চ্যালেঞ্জের মুখে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ খাতের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। জাতীয় কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জোগান হয় চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, ভ্যাট বিভাগ, আয়কর বিভাগ, বন্ড কমিশনারেট বিভাগ থেকে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব জোগান হয়ে থাকে। জাতীয় কোষাগারে রাজস্ব জোগানের একক বৃহৎ কেন্দ্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চলমান অর্থবছরে এই হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ বাস্তবিক অর্থে কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে। মূলত বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে এর প্রভাব যেভাবে পড়েছে তারই জের টানতে হচ্ছে এ হাউসকে। এছাড়া অন্যান্য রাজস্ব জোগানদাতা সংস্থাগুলোরও একই অবস্থা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয় হয়ে আছে। কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জন্য এই হাউসকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বিগত অর্থবছরের অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ এই হাউসের রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। আয় হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশেষ করে দেশে আমদানি ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হয়ে আছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে পণ্যের একটি ছোট অংশ আমদানি হচ্ছে। এর মধ্যে রিকন্ডিশন গাড়ি অন্যতম। উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানিও হ্রাস পেয়েছে। এতে অতীতে যেভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের রাজস্ব চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আয় করত বর্তমানে তা কিছুটা হ্রাস হয়েছে। তার ওপর ভর করে আছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। চার মাসে রাজস্ব মাত্রা দেয়া হয়েছিল ২০ হাজার ১২০ কোটি টাকা। অথচ আয় হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যদিও বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই আয় কিছুটা বেশি। টাকার অঙ্কে যা ২৩৩ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে বড় অংশ রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। কিন্তু এ বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের গাড়ি আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমে গেছে। সিএ্যান্ডএফ সূত্র জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের পণ্য পানগাঁও টার্মিনাল, ঢাকা আইসিডি এবং মংলা বন্দরে খালাস হচ্ছে। এতে রাজস্ব আয়ের কিছু অংশ সেখান থেকে হচ্ছে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অভ্যন্তরীণ রাজস্ব খাতে ৩ লাখ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে রাজস্ব জোগানের বড় একটি অংশ রয়েছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন চার প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের রাজস্ব জোগান দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট, আয়কর বিভাগ এবং বন্ড কমিশনারেট। এর বাইরেও চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব জাতীয় কোষাগারে জমা হয়ে থাকে। করোনা পরিস্থিতি যেভাবে বিরাজ করছে তা অব্যাহত থাকলে এবার অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব একটি বিষয়ে পরিণত হবে বলে ধারণা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। তাদের মতে, গত এপ্রিল মাস থেকে রাজস্ব আয়ে সবচেয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিলই বলা চলে। চট্টগ্রামে কাস্টম হাউস ছাড়াও বন্ড কমিশনারেট প্রতিবছর ৬শ’ কোটি টাকারও বেশি, ৪-কর অঞ্চল ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ভ্যাট বিভাগ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব যোগ দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে এবার রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে পিছিয়ে আছে। কর্মকর্তাদের মতে, এটা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে একই চিত্র। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করে চলেছে। কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়ে আছে। এর জের হিসেবে রাজস্ব আয়ে তা আঘাত হেনেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে। ফলে আবার দেশের সবকটি খাতে শঙ্কার জন্ম নিয়েছে। গত এপ্রিল মাসের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। এরপরে এ আঘাত আসে বাংলাদেশে।
×