ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব ইলেকটর বাইডেনকে বিজয়ী বললেই ক্ষমতা ছাড়বেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২৮ নভেম্বর ২০২০

সব ইলেকটর বাইডেনকে বিজয়ী বললেই ক্ষমতা ছাড়বেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন নিশ্চিত হলেই হোয়াইট হাউস ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেজন্য সব ইলেকটরকে বলতে হবে যে, তারা বাইডেনকে বিজয়ী করেছেন। বৃহস্পতিবারও তিনি সাংবাদিকদের কাছে ‘হার মেনে নেয়া কঠিন হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন। এদিন তিনি ফের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও এর পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করেননি। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ফক্স নিউজ, ইউএসএ টুডে ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। চলতি মাসের ৩ তারিখে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গণনাকৃত ভোটের ধারা অনুযায়ী রিপাবলিকান এ প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে সুস্পষ্ট ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন বলে ধারণা পাওয়া গেলেও ৭৪ বছর বয়সী ট্রাম্প এখন পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফল অনুযায়ী বাইডেনকে ট্রাম্পের তুলনায় ইলেকটোরাল ভোটে ৩০৬-২৩২ ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট ঠিক হয় না, হয় অঙ্গরাজ্যগুলোর জন্য আনুপাতিক হারে বরাদ্দ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পদ্ধতিতে। নির্বাচিত হতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ২৭০টি পেতে হয়। পপুলার ভোটেও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ৬০ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন বলে গণনায় দেখা গেছে। নিয়মানুযায়ী, আগামী মাসে ইলেকটররা একত্রিত হয়ে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন। সব ঠিক থাকলে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনেরই শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার লক্ষ্যে ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আইনী লড়াইয়ে নামলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আদালত তাদের আবেদন আমলে নেয়নি। কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তা শেষে ট্রাম্প দিনকয়েক আগে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুতে সম্মতিও দিয়েছেন। যার ফলে বাইডেন এখন নিয়মিতই গোয়েন্দা ব্রিফিং পাচ্ছেন; তার শিবির গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা এবং ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য লাখ লাখ ডলার খরচের সুযোগ পাচ্ছে। ট্রাম্পকে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে হারলে তিনি হোয়াইট হাউস ছেড়ে দেবেন কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে তার জবাবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অবশ্যই আমি ছাড়ব, অবশ্যই ছাড়ব এবং আপনারা তা জানেন। বাইডেনকে বেছে নিলে ইলেকটররা ‘ভুল করবে’ মন্তব্য করার পাশাপাশি কখনই পরাজয় স্বীকার করে নেবেন না এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। হার মেনে নেয়া সত্যিই খুব কঠিন হবে, কেননা আমরা জানি সেখানে (নির্বাচন) বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফের এ অভিযোগ করলেও এর সপক্ষে কোন প্রমাণ দেননি। ক্ষমতা হারানোর পর নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকবেন কিনা, সে প্রসঙ্গেও কিছু বলেননি তিনি। বাইডেনের জয় নিশ্চিত হলে হোয়াইট হাউস ছাড়বেন ট্র্রাম্প ॥ দমে যাওয়ার পাত্র নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও কোনভাবেই নিজের পরাজয় স্বীকার করছেন না তিনি। গত ৩ নবেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের পর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটের ফল অনুযায়ী জয়ী হয়েছেন বাইডেন। ইতোমধ্যেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। এমনকি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবুও বাইডেনকে বিজয়ী মানতে নারাজ ট্রাম্প। এমনকি বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় এই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বাইডেনকে বিজয়ী করা হয় তাহলেই তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। তবে সেজন্য সব ইলেকটরকে বলতে হবে যে, তারা বাইডেনকে বিজয়ী করেছেন। বাইডেনই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এ কথা সব ইলেকটর বললেই কেবল তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যদি সব ইলেকটর বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে তাহলে তারা ভুল করবে। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিস এডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) বলছে, তারা বাইডেনকে ‘আপাত বিজয়ী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই কোনভাবেই নির্বাচনের ফল নিয়ে কোন সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন বিরোধী দল ভোট চুরি করেছে এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মামলায় করেছেন তার সমর্থকরা। যদিও এসব মামলা ইতোমধ্যেই খারিজ হয়ে গেছে। নিজের পরাজয়ের ব্যাপারে সম্প্রতি ট্রাম্পের সুর কিছুটা নরম হতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার আগে অফিস ছাড়বেন তিনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখেননি তিনি। কিন্তু তারপরেও বাইডেনের কাছে হারতে হলো তাকে। ফলে এক মেয়াদ শেষ করেই তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে। ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমেই হোয়াইট হাউসে বসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। আগামী ১৪ ডিসেম্বর বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেন এখন পর্যন্ত ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। সকালের দিকে এক টুইট বার্তায় তিনি দাবি করেছিলেন যে, নির্বাচনে শতভাগ জালিয়াতি হয়েছে। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এবারের মার্কিন নির্বাচন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় এক নির্বাচন। শুধু সময়টাই পক্ষে নয় ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউস ছাড়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার পরাজয় কখনও স্বীকার না-ও করতে পারেন। এ অবস্থায় ট্রাম্প বলেছেন, সময় তার পক্ষে নয়, বাকি সবকিছুই পক্ষে। ২৬ নবেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তিনি সবাইকে ‘থ্যাংকস গিভিং’ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। ৩ নবেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে এভাবে সরাসরি কথা বললেন ট্রাম্প। ট্রাম্প মনে করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ভোট জালিয়াতির কারণে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেয়াটা তার জন্য খুব কঠিন। কোন প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছেন। সময় তার পক্ষে নয় উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, বাকি সবকিছুই তাদের পক্ষে। ইলেকটোরাল কলেজ বাইডেনকে নির্বাচিত করলে ভুল করবে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবেন না। আমি যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প উপস্থিত থাকার বিষয়ে কোন ইঙ্গিত দেননি। বাইডেনকে গত সোমবার জেনারেল সার্ভিস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন চিঠি দেয়। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, বাইডেন মন্ত্রিসভার জন্য লোক বাছাই করে ভুল কাজ করছেন বলে তিনি মনে করেন। এক পর্যায়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, করোনার টিকা নিয়ে বাইডেনকে যেন কৃতিত্ব দেয়া না হয়। সবকিছু তার তত্ত্বাবধানে হয়েছে। যা কখনও আগে হয়নি এমন দ্রুততার সঙ্গে তিনিই সব পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে সব অঙ্গরাজ্যের ভোট আবার গণনা করা হবে। পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, জর্জিয়াসহ কিছু অঙ্গরাজ্যের ভোটে কথিত অনিয়ম নিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এখনও নানা দিকে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। তাদের ওই প্রয়াস আদৌ সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা কেউ দেখছে না। ট্রাম্প শিবির থেকে এখনও সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্পের দেয়া বক্তব্য নিয়ে বাইডেনের প্রচার শিবিরের মুখপাত্র মাইকেল গুইন বলেছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। অঙ্গরাজ্যগুলো ক্রমাগত ফল সার্টিফাই করে যাচ্ছে। ইলেকটোরাল কলেজ দ্রুত সভা করবে উল্লেখ করে মাইকেল গুইন বলেন, বাইডেনই আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। যে রায়ে ট্রাম্পের মধ্যে চাঞ্চল্য ॥ মার্কিন সুপ্রীমকোর্ট তার সবশেষ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রক্ষণশীলতার বার্তা দিয়েছেন। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গবর্নরের নিষেধাজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রীমকোর্টে রক্ষণশীলদের পক্ষে এমন রায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বসে আছেন সুপ্রীমকোর্টের আশায়। ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ে সুপ্রীমকোর্টের রায়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র দিনেও টুইট করেছেন ট্রাম্প। করোনার সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গবর্নর সব ধর্মীয় উপাসনালয়-প্রতিষ্ঠানে সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। গবর্নর এ্যান্ড্রু কুমো এক আদেশে সংক্রমণের হার অনুযায়ী ধর্মীয় সমাবেশ ১০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছিলেন। গবর্নর কুমোর জারি করা নিয়ন্ত্রণমূলক নির্দেশের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক চার্চ ও ইহুদিদের দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়। ডায়োসিস অব ব্রুকলিন ও আগুদাহ ইসরায়েল অব আমেরিকা নামের নিউইয়র্কের দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়। সেখানে অঙ্গরাজ্য গবর্নরের পক্ষে রায় যাওয়ার পর ধর্মীয় গোষ্ঠী দুটি এনিয়ে সুপ্রীমকোর্টে যায়। সুপ্রীমকোর্টে করা আবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ফলে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্ট তার আদেশে ধর্মীয় সমাবেশের ওপর কড়াকড়ির বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সুপ্রীমকোর্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষে রায় দেন। সুপ্রীমকোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবশেষ নিয়োগ দেয়া বিচারপতি এ্যামি কোনি ব্যারেট এ মামলায় রক্ষণশীলদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ব্যারেট প্রথম রায়ে রক্ষণশীলদের পক্ষে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করলেন। ফলে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের বহু উদারনৈতিক ইস্যু সুপ্রীকোর্টে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস রক্ষণশীল হলেও এ মামলায় তিনি উদারনৈতিকদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি তার আলাদা নির্দেশনায় বলেছেন, বিষয়টি আদালতে আসারই প্রয়োজন ছিল না। এ নিয়ে অঙ্গরাজ্য গবর্নর নতুন নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন বা না-ও পারেন। প্রধান বিচারপতিকে প্রায়ই উদারনৈতিক পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের মধ্যে রক্ষণশীলদের পাল্লা ভারি হয়ে উঠেছে। সুপ্রীমকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আদালত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন। তারা এ বিষয়ে দায়িত্ববান, অভিজ্ঞ ও দায়িত্বরতদের বিবেচনাকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু এই মহামারীর সময়েও সংবিধানকে এক পাশে সরিয়ে রাখা যায় না। সুপ্রীমকোর্টের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, মহামারীর সময়েও মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের নামে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা বহু লোকের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ব্যাহত করতে পারে। মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবাধ চর্চাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। মামলায় রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আবেদনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রায়ের ফলে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। তারা সুপ্রীমকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট। সুপ্রীমকোর্টের এই রায়ের পর নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নিউইয়র্কে ধর্মীয় সমাবেশের ওপর অঙ্গরাজ্য গবর্নরের জারি করা কড়াকড়ি আর থাকছে না। নিউইয়র্কের গবর্নর এ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকরা তাদের মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থানের পরিচয় প্রকাশের একটা সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। সুপ্রীমকোর্টের রায়কে নিছক একটি বিবৃতি বলে মনে করছেন গবর্নর কুমো। এমন রায়ের কোন কার্যকারিতা নেই বলে গবর্নর উল্লেখ করেছেন। গণতন্ত্রে ঘুণ ধরিয়ে গেলেন ট্রাম্প ॥ ভোটের লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরও ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য নিজের সমর্থকদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার সেই বিচারবিভাগীয় ‘অভ্যুত্থানচেষ্টা’ সফল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তীব্র অনিচ্ছুক মনোভাবে সোমবার ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সম্মতি দেন তিনি। নির্বাচনের ২০ দিন পর পর্যন্ত ক্ষমতা কামড়ে থাকার বাসনা মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হলেও এর মধ্য দিয়ে মার্কিন গণতন্ত্রকে রোগা ও ভোগান্তির শিকার বানিয়ে গেছেন ট্রাম্প। মার্কিন গণতন্ত্রে ঘুন ধরিয়ে গেলেন তিনি। ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্মতির পর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনকে ক্ষমতা হস্তান্তরে সহযোগিতা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এরপরই একে একে জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান নেতারা (বিশেষত দুর্বলচিত্তের) নির্বাচনের ফলকে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করেন। এতে সন্দেহ নেই যে, এরই মধ্যে মার্কিন গণতন্ত্র যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের প্রতি আসা সবচেয়ে বড় হুমকি ধীরে ধীরে ধূসর হতে শুরু করলেও জটিল ও দুরূহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতরে যারা কাজ করেন, তাদের বিষয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। তারা কি প্রত্যাশা মতো কঠোর ছিলেন, নাকি কেবল ভাগ্যের জোরে এ যাত্রা রক্ষা পেল যুক্তরাষ্ট্র। বিচার বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তা ডিভিশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাটরিনা মুলিগান বলেন, আমি দীর্ঘ সময় ধরে ওই সব মানুষের কাতারে আছি যারা বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের সুরক্ষা দেয়ালগুলো কাজ করছে। কিন্তু সর্বশেষ কয়েক সপ্তাহে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। এই লোকটির (ডোনাল্ড ট্রাম্প) কর্মকাণ্ড আমি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এখন আমার মনে হয়, আমরা আমাদের গণতন্ত্রের ভঙ্গুর অংশগুলোর ওপর নির্ভর করছি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেগুলোর জন্য প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। নির্বাচনের আগ থেকেই ট্রাম্প তার পরিকল্পনার বিষয়ে কোন রাখঢাক করেননি। তখন থেকে তিনি তার খেপাটে ইচ্ছাগুলোকে একের পর এক তীক্ষè করেছেন। ডাক ভোটের ওপর সন্দেহ তৈরি করেছেন, বেশিরভাগ ভোট গণনার আগেই নির্বাচনের রাতে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন। তারপর অনেক অভিযোগ এনে যথেষ্ট সন্দেহের বীজ বপন করেছেন। সর্বোপরি, নির্বাচনের ফল সত্যায়ন প্রক্রিয়া বিলম্ব করিয়েছেন বিচার বিভাগের তদন্ত ও রাস্তায় উগ্র ডানপন্থী সমর্থকদের নামিয়ে দিয়ে। এ ধরনের বিলম্বের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যসভাগুলোর হাতে সুযোগ এসে যেত ইলেকটোরাল কলেজে নিজেদের মনোনীত ইলেকটর পাঠানোর জন্য। আর এই ইলেকটোরাল কলেজের হাতেই থাকে কে প্রেসিডেন্ট হবেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব। এমনটি হলে শেষ পর্যন্ত সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতো এবং সুপ্রীমকোর্টের হাতে চলে যেত নির্বাচনের বিজয়ী নির্ধারণের দায়িত্ব। আর সুপ্রীমকোর্টে ৬-৩ ব্যবধানে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এই লক্ষ থেকেই সুপ্রীমকোর্টে রাজনীতিকরণ করেছেন ট্রাম্প, যাতে রাজনৈতিক কৌশল ব্যর্থ হলে কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। অর্থাৎ এটি হতো এক ধরনের বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান। সাধারণত, ক্ল্যাসিক অভ্যুত্থানের উপকরণ হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামরিক বাহিনী। কিন্তু এখানে সেটি অনুপস্থিত ছিল শুরু থেকেই। যদিও ট্রাম্পের মনে সে ধরনের ইচ্ছাই দানা বেঁধেছিল। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রীষ্মকালজুড়ে রাস্তায় সেনা নামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইক এসপার এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছেন। নির্বাচনের ফল নিয়ে সন্দেহ তৈরি ও জটিল মুহূর্তে এসপারকে বরখাস্ত করে নিজের পছন্দের লোককে ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস ছাড়ার শর্ত দিলেন ট্রাম্প ॥ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে বললেও এখনও পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইলেকটোরাল কলেজ যদি বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে, তবেই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। তবে বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়া ভুল হবে বলেও জানাতে ভোলেননি ট্রাম্প। ইলেকটোরাল ভোটের নিরিখে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে বাইডেন। সব হিসাব-নিকাশ মানতে নারাজ ট্রাম্প। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, তার জন্যই বাইডেন এত ভোট পেয়েছেন বলে এখনও নিজের দাবিতেই অনড় তিনি। ট্রাম্প বলেন, হার স্বীকার করা সত্যিই কঠিন। কারণ আমি জানি ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। অবশ্যই ছেড়ে দেব। আপনারা তা ভাল করেই জানেন।
×