ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৮ নভেম্বর ২০২০

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রশ্ন

রশিদ মামুন ॥ বিশ্বে সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের ঘোষণা দেয়া ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার কোন ব্যাখ্যাই দিতে পারেনি ভ্যাকসিনটির সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এ্যাস্ট্রাজেনেকা। সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে তারা আবার নতুন করে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালাতে চায়। ফলে জানুয়ারিতেই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাজারে আসার যে সম্ভাবনা ছিল তা পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তো বটেই এরসঙ্গে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলোর ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হবে। তবে একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হওয়ার পর আমেরিকাতে আর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করতে পারেনি এ্যাস্ট্রাজেনেকা। ফলে আমেরিকার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনেকেই এই ভ্যাকসিনটির আমেরিকায় প্রয়োগের বিরোধিতা করছে। তবে দুই মার্কিন কোম্পানি মরডানা এবং ফাইজার ভ্যাকসিনের তৃতীয়ধাপের পরীক্ষার ফলাফলকে আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। মার্কিন সরকারও নতুন বছরের শুরুতে সাধারণ জনগণকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের সঙ্গে জার্মানীর বায়োএনটেক যৌথভাবে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। জার্মানীতেও এই ভ্যাকসিনটির জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে বলছে, স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষুদ্র একটি অংশকে ভ্যাকসিনটির একটি ডোজ দেয়ার পর ভুল করে আর অর্ধেক ডোজ দেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনটি ৯০ ভাগ কার্যকর হয়েছে। অন্যদিকে যাদের ভ্যাকসিনটির দুটি ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৬২ ভাগ কার্যকর হয়েছে। এ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, তাদের ভ্যাকসিনটির গড় কার্যকরের হার ৭০ ভাগ। এই ফলাফলের পরই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলেছেন ভ্যাকসিনটির দেড় ডোজের তুলনায় দুই ডোজ বেশি কার্যকর হওয়ার কথা। সেখানে দেড় ডোজ কি করে দুই ডোজের চেয়ে বেশি কার্যকর হলো। এ্যাস্ট্রাজেনেকা’র তরফ থেকে এর মধ্যে বলা হয়েছে একটি নতুন গ্লোবাল ট্রায়াল চালাবে তারা। এজন্য কিছু সময় প্রয়োজন হবে। এ্যাস্ট্রাজেনেকা বায়োফার্মাসি-উটিক্যালস গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান মেনি পাঙ্গালোস অবশ্য বলছেন, যাদের ক্ষেত্রে ভুল করে দেড়ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তাদের সবার বয়সই ৫৫ বছরের নিচে। এক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। অক্সফোর্ডের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সরকারের জীববিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার জন বেল ট্রায়ালের ফলাফল বিচার সঠিকভাবে করা হয়নি বলে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছেন, যে পদ্ধতিতে এটি করা হয়েছে সেখানে সমন্বয়হীনতা ছিল। তবে এর ফরাফল সপ্তাহ শেষে বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত হবে। যদিও ডব্লিউএইচও এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান টিকার অনুমোদনের জন্য অন্তত ৫০ ভাগ কার্যকারিতা থাকার কথা ঘোষণা করেছে। তবে ইউরোপীয় অনুমোদনকারীরা এখনও এ বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট সীমা ঠিক করেনি। তবে ট্রায়ালে এই বিতর্কের কারণে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের জন্য সময়ক্ষেপণ হতে পারে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির অনুমোদর পিছিয়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিতে পড়বে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি আগামী বছরের মধ্যে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভ্যাকসিনটি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। এটি বিশ্বের সব চাইতে কম দামের ভ্যাকসিন হওয়াতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাসও ছিল। কিন্তু এখন অনুমোদন প্রক্রিয়াতে দেরি হওয়ার কারণে ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সময় পিছিয়ে যাবে। এতদিন মনে করা হচ্ছিল আগামী জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া যাবে।
×