ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিনারেল ওয়াটারের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৮ নভেম্বর ২০২০

মিনারেল ওয়াটারের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন

শাহীন রহমান ॥ নগরবাসীর অনেকেই বিশুদ্ধ পানির জন্য জারে ভর্তি মিনারেল ওয়াটারের ওপর নির্ভর করে থাকে। নিরাপদ ভেবে সবাই পান করলেও জারের পানি আসলে কতটা নিরাপদ? সম্প্রতি কিছু পানি প্রসেসিং কারখানার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে দেখা গেছে, সঠিকভাবে প্রসেস না করেই তারা পানি জারে ভরে বাজারজাত করছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যারা সরাসরি ওয়াসার পানি জারে ভরেই বাজারজাত করছে। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযানে দু’একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে বাকিগুলো থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পানি প্রসেসিং কারখানাসহ বেকারি হোটেল রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে নিরাপদ পানির উৎস হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিশুদ্ধ পানি জারে করে বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। অভিযানে দেখা গেছে, জারের পানি প্রসেস করে বাজারের বিক্রি করছে এসব বহু প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদনই নেই। আবার পিউরিফিকেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করেই জারে সংরক্ষণ করছে পানি। মানছে না পানি বাজারজাতকরণের নির্দেশনা। বিএসটিআই-এর হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ব্যবসা। নেই কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদও। সম্প্রতি রাজধানীর ‘স্মার্ট ফুড এ্যান্ড বেভারেজ’-এর ফার্স্ট ড্রপ নামের পানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। মহানগরীর ঢাকা উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অভিযানে দেখা যায়, পিউরিফিকেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করেই জারে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পানি বাজারজাতকরণে স্বচ্ছ জার ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও রঙিন জারের ব্যবহার করছে প্রতষ্ঠানটি। একইসঙ্গে পানি বাজারজাতকরণ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা দেখা গেছে। এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদ, হালনাগাদ বিএসটিআই লাইসেন্স, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ক্রয়-বিক্রয় চালানসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ছিল না পানি প্রসেসিং কারখানাটির। শুধু স্মার্ট ফুড এ্যান্ড বেভারেজ’-এর ফার্স্ট ড্রপ নামের এই কারখানাই নয়। অভিযানে দেখা গেছে, রাজধানীতে পানি উৎপাদনকারী বহু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না অস্বাদু পানি ব্যবসায়ীদের। নিবাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটর মোবাশ্বের আলম বলেন, সম্প্রতি অভিযোগের ভিত্তিতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ এবং মনিটর করা হচ্ছে। অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ার পরই অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ভোজাল নকলের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। গত দশকের বেশি সময় ধরে ভেজাল পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে ভোগ্য পণ্যের মান নির্ধারণকারী সংস্থা বিএসটিআই। কিন্তু বহু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত এই অস্বাদু ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা পানি সঠিক নিয়ম না মেনে উৎপাদন করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে সেই পানিতে নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। এসব মানহীন পানি ব্যবহার না করতে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকেও সতর্ক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ছাড়পত্র ছাড়াই পানি উৎপাদন ও বিপণন করছে। এসব পানিতে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়াসহ জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। আবার মানহীন রেস্তরাঁগুলোর সরবরাহ করা পানিতে কলিফর্ম নামের জীবাণুর উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। তারা জানান, অনেক অনুমোদিত এসব প্রতিষ্ঠান জারে ভর্তি মিনারেল ওয়াটারের নামে আসলে দূষিত পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশে বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এমন বহু কারখানায়ই উৎপাদন হচ্ছে দূষিত খাবার পানি। অভিযানে দেখা গেছে, দু-একটি বাদে অধিকাংশ মিনারেল ওয়াটারের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে অপরিচ্ছন্ন স্থানে। পানির উৎপাদন করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে।
×