ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৮ নভেম্বর ২০২০

মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজন, জনতার মঞ্চের রূপকার মোহাম্মদ হানিফের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। মস্তিষ্কেসহ সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। মোহাম্মদ হানিফ যৌবনের শুরু থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। দলীয় রাজনীতি করলেও তাঁর উদার চিন্তা-চেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব আর সংবেদনশীল মনোভাবের কারণে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অপরিসীম। অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সন্মোহনী বাগ্মিতা ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত হয়েও রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যায়নি এই নেতাকে। মস্তিষ্কের গভীরে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিঁধে থাকায় সিঙ্গাপুরেও অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয় থেকেছেন মোহাম্মদ হানিফ। অসুস্থাবস্থায় ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্য রাখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর আর সুস্থ হয়ে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসতে পারেননি তিনি। দেশে-বিদেশে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ২০০৬ সালের এই দিনের মৃত্যুর কাছেই হার মানেন মোহাম্মদ হানিফ। চির অবসান ঘটে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের। ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম মোহাম্মদ হানিফের। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, ধারাবাহিক পথচলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একান্ত সচিব থাকাকালীন ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয় দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথের প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ। ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই ‘৯৬ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেন। পরে ’৯৬ সালের ১২ জুন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনা সুযোগ পায়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফাউন্ডেশন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সকালে আজিমপুর কবরস্থানে কবর জিয়ারত, আজিমপুরস্থ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে প্রয়াত এ নেতার কর্মময় জীবনকে স্মরণ করে এক নাগরিক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়াত রাজনীতিক মোহাম্মদ হানিফের একমাত্র পুত্র আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দেশবাসীর কাছে তাঁর বাবার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
×