ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মামুনুলকে ঠেকাতে চট্টগ্রামে দিনভর মিছিল অবরোধ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৮ নভেম্বর ২০২০

মামুনুলকে ঠেকাতে চট্টগ্রামে দিনভর মিছিল অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকিদাতা হেফাজত নেতা মামুনুল হককে চট্টগ্রামে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বিমানবন্দরসহ মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে তৎপর ছিল ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগ। প্রতিরোধ কর্মসূচীতে যোগ দেয় সাধারণ মানুষও। হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সন্ধ্যা পর্যন্ত এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে থাকে। বিতর্কিত এই ধর্মীয় বক্তা চট্টগ্রামে এসেছেন কিনা তা পরিষ্কার করে জানায়নি সংগঠনটির কোন সূত্র বা সরকারের কোন সংস্থা। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সকলের চোখ এড়িয়ে আগেই চট্টগ্রামে এসেছেন এই হেফাজত নেতা। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি। হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, মামুনুল হক সমাবেশে আসবেন না। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, মামুনুল হক চট্টগ্রামে এসেছেন কিনা আমরা নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোন তথ্য নেই। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। ফটিকছড়ি থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতা মোঃ ইউনুস মিয়া স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে হাটহাজারীতে আসেন। এ সময় তাকে প্রতিহত করতে বিক্ষোভ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যেই তিনি মাদ্রাসায় প্রবেশ করে সেখানেই অবস্থান করেন। এরপর হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম রাশেদের নেতৃত্বেও মিছিল হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তখনও মামুনুলকে মঞ্চে দেখা যায়নি। তিনি বক্তব্য রাখলে গোলমাল হতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে মামুনুলের পক্ষে স্লোগান দিয়ে মাহফিলের মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায় কিছু গ্রুপকে। অপরদিকে, শ্রোতাবেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী সমর্থকের উপস্থিতিও রয়েছে মাহফিলে। শেষ পর্যন্ত তিনি বক্তব্য রাখবেন কিনা তা নিশ্চিত করে জানায়নি কোন সূত্র। তবে বক্তব্যে হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়ে দিয়েছেন যে, মামুনুল হক আসবেন না। কিন্তু এ নেতা চট্টগ্রামে এসেছেন কিনা তা পরিষ্কার করে বলেনি বাবুনগরী। হাটহাজারী উপজেলার পার্বতী সরকারী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরান মাহফিলের আয়োজন করে আল আমিন সংস্থা নামের একটি সংগঠন। শুক্রবার সমাপনী দিনে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের হুমকি দিয়ে তিনি এর মধ্যেই আলোচিত হয়েছেন। বাধার মুখে এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার কয়েকটি মাহফিল পণ্ডও হয়েছে। উগ্রবাদী এই ধর্মীয় বক্তা চট্টগ্রামে আসছেন জেনে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা যে কোন মূল্যে মামুনুলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত জঙ্গীবাদবিরোধী এক ছাত্র যুব সমাবেশ থেকে কর্মসূচীও দেয়া হয়। মামুনুল হককে যেখানে দেখা যাবে সেখানেই প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। সমাবেশটিতে হাজারো ছাত্র যুবক অংশ নিয়েছিল। তবে মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ ও সংগঠন দুটির কেন্দ্র থেকে সেভাবে গ্রীন সিগন্যাল মেলেনি বলে জানা যায়। ফলে এই প্রশ্নে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বও সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকালে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী যুবলীগ এবং পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সেখানে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এই অবস্থান ছিল প্রায় দুই ঘণ্টার। এছাড়া সিটি গেট এলাকায়ও অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা। যুবলীগ নেতা মহিউদ্দীন বাচ্চু বলেন, উগ্রবাদী ধর্মীয় বক্তা মামুনুল হককে চট্টগ্রাম প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তাকে প্রতিহত করতে মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা অবস্থান নিয়েছি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন মোড় এলাকায় সকালে অবস্থান নেয় কয়েক শ’ নেতাকর্মী ও সমর্থক। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের পরিচালনায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার সাঈদ ইরান, কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী ইব্রাহিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সেলিম উদ্দিন জয়, মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদসহ মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা। তারা বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে প্রতিহত করতে হবে। শুধু তাই নয়, নেতৃবৃন্দ বিতর্কিত এই বক্তাকে গ্রেফতার করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল হাটহাজারী সড়কে। তবে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এদিকে, হেফাজতে ইসলামের এক নেতা জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই সড়ক পথে হাটহাজারীতে পৌঁছেছেন মামুনুল হক। তার গাড়ি সিটি গেট দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। রাত ১টার দিকে তিনি পৌঁছান হাটহাজারীতে। রাতে তিনি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় রাত যাপন করেন। তবে এ তথ্য নিশ্চিত করেনি হেফাজতেরই অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র। হাটহাজারীতে এ নিয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
×